হৃদরোগে বাবার মৃত্যু, পিতৃশোক বুকে চেপেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল তন্ময় - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday, September 8, 2025

হৃদরোগে বাবার মৃত্যু, পিতৃশোক বুকে চেপেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল তন্ময়


নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫: পিতৃশোক বুকে চেপেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দত্তপুকুরের এক পরীক্ষার্থী। সদ্য বাবা-হারা এই পড়ুয়ার নাম তন্ময় নাগ। তিনি বারাসত এক নং ব্লকের দত্তপুকুর নিবাধই উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। পরীক্ষায় তাঁর আসন পড়েছে দত্তপুকুর মহেশ বিদ্যাপীঠে। সোমবার ছিল উচ্চ মাধ্যমিকেকর প্রথম ভাষার পরীক্ষা। আর বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেই পরীক্ষায় বসলেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী তন্ময়। 


পিতার মরদেহ শ্মশানে‌ নিয়ে যাওয়া, তারপর দেহ সৎকার শেষেই এদিন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন তন্ময়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল (রবিবার) দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তন্ময়ের বাবা। কিন্তু শোকের এই মুহূর্তেও মনোবল ঠিক রেখে পরীক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তন্ময়। 


তিনি জানান, তাঁর বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল জীবনে যেন সে বড় হয়। বাবার সেই ইচ্ছা পূরণ করতেই পরীক্ষা দিতে আসা। তাঁর কথায়, 'বাবা বেঁচে থাকলে আজ নিজে আমাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিত।'


তন্ময় বলেন, 'বাবার জন্যই পরীক্ষাটায় বসব। বাবা বলেছিল আমাকে, ভালো করে পরীক্ষা দিতে। আমি বাবার মতই হতে চাই।' ওই পরীক্ষার্থী জানান, তাঁর বাবা একটি দোকানে কাজ করতেন। তন্ময়ের কথায়, 'বাবা আমাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দিতেন, বলতেন যা আমি পারিনি, তা তুই করবি।'


পরীক্ষার্থী জানান, বাবাকে খুব মিস করছেন। তবে বাবা সবসময় তাঁর সঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, 'বাবার উপস্থিতি মিস করছি, বাবা থাকলে আমার সঙ্গে এখানে আসতেন।'


তন্ময়ের এই কঠিন সময় পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর কাকা রতন নাগ। তিনি বলেন, 'এই দুঃখজনক ঘটনার মধ্যে তন্ময় কোনও প্রস্তুতি নিতে পারেনি। ঈশ্বরের আশীর্বাদে তাঁর পরীক্ষা ভালো হবে, এটাই আশা করি। বাবা না থাকলেও তাঁর মা এবং আমরা সবাই ওর পাশে আছি।'


তিনি জানান, তন্ময়ের বাবার শ্বাসকষ্ট ছিল, বুকে জল জমে যেত। সেই জমা জল বের করতে গেলেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তিনি বলেন, 'তন্ময়কে মনে জোর দিয়ে নিয়ে এসেছি আমরা। মনের জোরেই ও পরীক্ষা দিচ্ছে। ভগবান ভরসা, যা পারবে তাই লিখবে।‌ ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করি, বাবার আশীর্বাদে ও যেন পরীক্ষাটা ভালোভাবে দেয়। ও জীবনে দাঁড়াক, এটাই আমার আশা।'


প্রসঙ্গত, এবার থেকে বছরে দু'বার হবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সোমবার ছিল প্রথম সেমিস্টারের প্রথম ভাষার পরীক্ষা। এমন একটি পরিবর্তনশীল ব্যবস্থা, তার ওপর পিতৃশোক; এই কঠিন পরিস্থিতিতেও মনের জোর ও একাগ্ৰতা বজায় রেখে পরীক্ষা দিতে বসেছেন তন্ময়। তাঁর এই অদম্য মনোবল অন্য শিক্ষার্থীদের জন্য এক দৃষ্টান্ত।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad