ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫: নেপালের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। শীতল নিবাসে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি রাম চন্দ্র পৌডেল তাঁকে পদ ও গোপনীয়তার শপথ বাক্য পাঠ করান। অনুষ্ঠানে উপ-রাষ্ট্রপতি রামসহায় যাদব, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ সিং রাওয়াত, সরকারি আধিকারিক, সামরিক ও নিরাপত্তা প্রধানদের পাশাপাশি কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে সংসদের উভয় কক্ষের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন না। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে আমন্ত্রণ পাঠানো সত্ত্বেও, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার দেবরাজ ঘিমিরে এবং জাতীয় পরিষদের স্পিকার নারায়ণ দাহাল অনুষ্ঠান বয়কট করেন। ঘিমিরে সিপিএন ইউএমএল (ওলির দল) এর একজন এমপি, অন্যদিকে দাহাল সিপিএন মাওবাদী কেন্দ্র (প্রচণ্ডের দল) থেকে এসেছেন। উভয় নেতাই সংসদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। শপথ গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি রামচন্দ্র পৌডেল কার্কিকে বলেন, "এখন দেশ বাঁচাও, সফল হও।" কার্কি এতে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি এবং কেবল ধন্যবাদ জানিয়ে এগিয়ে যান।
'উদ্দেশ্য সংবিধান রক্ষা করা এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা'-
রাষ্ট্রপতি পৌডেল সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে কার্কিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। এছাড়াও, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ছয় মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাম্প্রতিক জেন-জেড আন্দোলন এবং সংসদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরে এই পদক্ষেপ করা হয়। তিন সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তাব থাকলেও মন্ত্রী পদের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সুশীলা কার্কি অস্থায়ীভাবে সমস্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাবেন।
সুশীলা কার্কি ছাড়া আর কে ছিলেন এই দৌড়ে?
৭৩ বছর বয়সী কার্কির নাম নিয়ে ঐকমত্য হওয়ার আগে দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জেন-জেড গ্রুপ, রাষ্ট্রপতি এবং সেনাপ্রধানও এই বৈঠকগুলিতে উপস্থিত ছিলেন। কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ এবং নেপাল বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের প্রাক্তন প্রধান কুলমান ঘিসিংয়ের নামও অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বালেন শাহ নিজেই এই পদটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
সুশীলা কার্কি নেপালের প্রথম মহিলা প্রধান বিচারপতি। তাঁর আমলে, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন, যা তাঁকে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। এই কারণেই পুরানো ব্যবস্থার প্রতি ক্ষুব্ধ জেন-জেড আন্দোলনকারীরা তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন।
জেন-জেড প্রতিনিধিরা কি সরকারে যোগ দেবেন?
এখন পর্যন্ত, প্রতিবেদন অনুসারে, জেন-জেড আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিরা সরাসরি সরকারে জড়িত থাকবেন না। তবে, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পর্যবেক্ষণ করবে এবং দুর্নীতি দমন ও যুবদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবে।
জেন-জেড বিক্ষোভকারীদের শর্ত
৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন: বিক্ষোভকারীদের প্রথম দাবী ছিল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যাতে জনগণ তাঁদের পছন্দের সরকার বেছে নিতে পারেন। কার্কি তা মেনে নিয়েছেন।
সংসদ ভেঙে দেওয়া: জেন-জেড বিক্ষোভকারীদের চাপের মুখে নেপালের সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং এখন ক্ষমতার কর্তৃত্ব সুশীলা কার্কির হাতে।
বেসামরিক-সামরিক সরকার গঠন: বিক্ষোভকারীরা প্রস্তাব করেছিলেন যে, সরকারে বেসামরিক এবং সেনাবাহিনী উভয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিৎ। কার্কি এই দাবীও মেনে নিয়েছেন।
দুর্নীতির ওপর লাগাম: বিক্ষোভকারীরা বলেছেন যে, আন্দোলন কেবল সোশ্যাল মিডিয়া নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে নয়, দুর্নীতিই এর মূল কারণ। তাঁরা পুরানো দল এবং নেতাদের সম্পদ তদন্তের জন্য একটি শক্তিশালী বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন।
সহিংসতার স্বাধীন তদন্ত: আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার সুষ্ঠু ও স্বাধীন তদন্তের দাবীও করা হয়। সুশীলা কার্কি এতে সম্মত হয়েছেন, যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা ন্যায়বিচার পেতে পারেন।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সুশীলা কার্কির নেতৃত্বাধীন নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৪ মার্চ দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেছে। এই ঘোষণাটি প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল। কার্কির নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন ছয় মাস ক্ষমতায় থাকবে। এই সময়ের মধ্যে, সারা দেশে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
No comments:
Post a Comment