ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫: অপারেশন নেপাল কার? সিআইএ নাকি অজিত ডোভালের? সমগ্র বিশ্বের ভূরাজনীতির বিশ্লেষকরা খুঁজছেন উত্তর। জেন জি, বেকারত্ব থেকে দূর্নীতি ইত্যাদি অনেক কিছু যারা বলছেন দুক্ষিত আমি তাদের সাথে সহমত নই। কারণ ভূরাজনীতির জটিলতা অনেক বেশি জটিল।
আমেরিকার বানিজ্য সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে বর্তমানে ভারত চীন রাশিয়া এক পথে চললেও নেপাল নিয়ে ভারত চীন প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে যারা ভাবছেন, চীন ভারত বন্ধু, আমেরিকা ভারত শত্রু তাদের ভাবনার উর্বরতা তৈরি হয়েছে গান্ধী বাদ পাপ্পু বাদ ইনকিলাব জিন্দাবাদের সার জলে। এভাবে বলার কারণ, অতীতের রীতি ভেঙে এনারা পররাষ্ট্র কূটনীতিকে সকালের জল খাবার বানিয়ে আভ্যন্তরীণ রাজনীতি করতে গিয়ে যেমন খুশি তেমন বলো গপ্প চিৎকার করে বলছেন। কারণ কূটনীতি চলে ইস্যু ভিত্তিক। ইস্যু সংখ্যা বাড়লে কূটনৈতিক সখ্যতা বাড়ে।
নেপালে রাজ তন্ত্র পতনের পর কম্যুনিজমের মিলিঝুলি গনতন্ত্রের সরকার বসলেও ঘন পতনের মত পরিবর্তন হয়েছে। ১৭ বছরে ১৪ বার। পাকিস্তানের মত গনতন্ত্রের চেহারা তৈরি করেছিল নেপালি কম্যুনিস্টরা। এই সময়ে গ্রহের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপালের হিন্দু পরম্পরা ভেঙে গুড়িয়ে ব্রিটিশ ও আমেরিকান সংস্কৃতি মিশিয়ে ককটেল ঢুকিয়ে দেয়। সনাতন হিন্দু পরম্পরা ভাঙার ফলে সামাজিক অবক্ষয় তৈরির বিরুদ্ধে তৈরি হয় প্রথম গন ক্ষোভ।
গনতন্ত্রের নামে কম্যুনিস্টরা শাসনে বসে আমরা খাবো তোমরা বাদ ইনকিলাব জিন্দাবাদ করে আসছে দেশে দেশে । নেপালের কম্যুনিস্ট শাসকরা তার ব্যতিক্রম ছিল না । ফলে অর্থনৈতিক সংস্থানের পরিকাঠামো তৈরি না করে দেশে গরিবদের সংখ্যা বাড়িয়ে দারিদ্রতার চাষ করে দু পাঁচ খানা নেপালী অমর্ত্য সেন, মহম্মদ ইউনুস তৈরি করে নোবেল বা বামবুদ্ধিজীবী তৈরি করে জাতির মেরুদণ্ড ভাঙার পথে হাঁটতে শুরু করে। ১৭ বছরে কম্যুনিজমের এমন চাষে বাড়তে থাকে ক্ষোভ। যত ঘর তত ক্ষোভ।
কম্যুনিস্ট চিনের পোষ্য হয়ে থাকা নেপালের কম্যুনিস্ট সরকার এরই মধ্যে চীনকে জমি দান করে। এতে নেপালীদের জাতীয়তাবাদী ক্ষোভ ফুলতে শুরু করে। নেপাল নিয়ে দুই মেরুতে থাকা ভারত আমেরিকা আবার এক পথের সহচরী। কারণ, আমেরিকার সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী চীন। আবার ভারত আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরোধী হলেও ভারত চীনের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে আমেরিকা ইস্যুতে ভারত চীন একসাথে বানিজ্য কূটনীতিতে চললেও নেপাল ইস্যুতে বিদেশ কূটনীতিতে একে অপরের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী। তেমনি চীন পাকিস্তানকে সাহায্য করবে ভারতের পরিকাঠামো উন্নতির অগ্রগতির ক্ষতি করতে যাতে ভারত পিছিয়ে পড়ে। আবার পাকিস্তান আমেরিকার সাথে সখ্যতা বজায় রাখে চীনের কাছে গুরুত্ব বজায় রাখতে। তেমনি ভাবে চীন পাকিস্তানকে গুরুত্ব দেয় পুরোপুরি আমেরিকার দিকে হেলে না পড়ে। ভূরাজনীতির এরকম জটিলতা প্রতি পদে প্রতি স্তরের ইস্যুতে হাঁটে।
আদালতের রায়ে নেপালে সমাজ মাধ্যম বন্ধ করা হয়েছিল। আদালতই আবার সেই রায় পরিবর্তন করে তারপরও কেন এত বিক্ষোভ হিংসাত্মক হামলা এবং কেপি অলির কম্যুনিস্ট সরকারের পতন ? নেপালিদের ক্ষোভ কে হাতিয়ার করেছিল বিদেশি শক্তি। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল এই ক্ষোভকে সংঘবদ্ধ করে ক্ষমতা পরিবর্তন করতে। লক্ষ্য চীনের পোষ্য কেপি অলির সরকারকে হটানো।
কথিত আছে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু সহ বেশ কিছু শহর গ্রামে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের ঘাঁটি ছিল। পাকিস্তান সেনা ও গুপ্তচর সংস্থার কর্তাদের ব্যবসা হল অন্যের ভাড়া খাটা। আইএসআই এই নেটওয়ার্ক নেপালে কেপিঅলির সরকার হঠানোর মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্র বলছে। তবে খেলাটা এতটাই ঘোলাটে জটিল যে সাদা চোখে সাধারণ বুদ্ধিতে ধরা কঠিন।
কেপি অলির সরকার পতনের পর নেপালের রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবি উঠেছে। নেপাল ফিরতে চাইছে হিন্দু রাষ্ট্রে। পাকিস্তানের আইএসআই কেন এমন মিশনে যুক্ত হবে বা সফল করতে দেবে । খেলার মোড় ঘুরছে এখানেই। একাংশ ভূরাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ইন্দিরা গান্ধী শাসনকালে সিকিমে সরকার পতন ঘটিয়ে ভারতের অঙ্গ রাজ্য তৈরি করতে সফল হওয়ার নেপাল অপারেশনে জন্য ইন্দিরা গান্ধী সরকারকে বোঝাতে গেলে রাজি হননি ইন্দিরা। জাতীয়তাবাদী অজিত দোভাল যৌবনের সেই স্বপ্ন পূরণ করতে নরেন্দ্র মোদীকে শাসন ক্ষমতার শীর্ষ চেয়ার প্রধানমন্ত্রী করে মিশন চালু করে দশ বছর আগে। এরই মধ্যে নেপালে ঢুকে সক্রিয় হয় সিআইএ ও আইএসআই। অজিত ডোভালের নজরদারি শুরু হয় তাদের উপর। পরিনতি বুঝতে পেরে অপারেশনের কৌশল বদলে দেন। চীনকে সবক শেখাতে আইএসআইকে নিয়ে ময়দানে নামে সিআইএ। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আমেরিকান ডিফ স্টেট।
একদিকে রাজতন্ত্র অন্যদিকে ভারত থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ কে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি করেছেন নেপালের একাংশ। অন্যদিক কেপি অলির কম্যুনিস্ট শাসন পতন আন্দোলনে রাজপথে নেমে নেতৃত্ব দিয়ে সামনের সারিতে এসেছেন সুদান গুরুং নামের এক সন্তানহারা সমাজ সেবক । ভূরাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, সুদান হল আমেরিকার নেপালি অস্ত্র।
একদিকে নেপালের রাজতন্ত্র যদি অজিত ডোভালের প্রজেক্ট হয় অন্যদিকে সিআইএ ও আইএসআই এর সুদান গুরুং ও বলেন্দ্র শাহ। খেলা যদি এমন হয় তাহলে শেষ হাসি হাসবে কে? উত্তর পেতে সময় লাগবে কিছু দিন, কিছু মাস ,কিছু বছর। খুপিয়া সংস্থার তৈরি পথে ভূরাজনীতি চলে এমন অনেক জটিলতায়। ফুটপাতে, সভা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিদেশি শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও দেশের মধ্যে আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষমতা ধরার মগজ ধোলাই করার মন্তব্য করে নয়।
No comments:
Post a Comment