ওয়ার্ড ডেস্ক, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিয়ে বলেছেন যে, ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় ইউক্রেন রাশিয়ার কাছে হারানো সমস্ত ভূমি ফিরে পেতে পারে। ট্রাম্পের এই সর্বশেষ বক্তব্য বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং এটি তাঁর আগের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত, যেখানে তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার জন্য রাশিয়ার কাছে মাথা নত করার কথা বলেছিলেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে দেখা করার পর ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কথা লিখেছেন।
জেলেনস্কির সাথে সাক্ষাতের পর ট্রাম্প বলেন, "আমি বিশ্বাস করি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় ইউক্রেন যুদ্ধ করার এবং পুরো ইউক্রেনকে তার আসল অবস্থায় ফিরিয়ে আনার অবস্থানে রয়েছে। সময়, ধৈর্য্য এবং ইউরোপ তথা বিশেষ করে ন্যাটোর আর্থিক সহায়তার সঙ্গে, সেই মূল সীমান্ত স্থিতিতে ফিরে যাওয়ার বিকল্প সম্ভব, যাতে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।" ট্রাম্পের এই পরিবর্তিত অবস্থান জেলেনস্কির জন্য একটি বড়, সাফল্য। জেলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরেই দাবী করে আসছেন যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকা চাপ বজায় রাখবে। বৈঠকের সময় দুই নেতা একে অপরকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
ট্রাম্প বলেন, "আমরা ইউক্রেনের সাহসিকতাকে অত্যন্ত সম্মান করি।" জবাবে জেলেনস্কি বলেন, "আমরা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সুসংবাদ পাচ্ছি। আমরা এই যুদ্ধের অবসান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করব।" জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে ট্রাম্প বলেন যে, এই যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য লজ্জার কারণ হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, "রাশিয়া আড়াই বছর ধরে একটি অকেজো যুদ্ধ লড়ছে। একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর এক সপ্তাহের মধ্যে এই যুদ্ধে জয়লাভ করা উচিৎ ছিল। এর ফলে রাশিয়াকে কাগজের বাঘের মতো দেখাচ্ছে।" ট্রাম্প আরও বলেন যে, রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে, যা যুদ্ধ শেষ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে।
ট্রাম্প রাশিয়ার তেল ও গ্যাস আমদানি বন্ধ করার জন্য ইউরোপীয় দেশগুলির প্রতি তাঁর আবেদন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করার জন্য 'কঠোর শুল্ক' আরোপ করা যেতে পারে, যা 'দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করতে পারে।' ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন ট্রাম্পের সাথে দেখা করার পরও বলেছেন যে, ইউরোপ রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে এবং রাশিয়ার জ্বালানি আমদানি আরও কমিয়ে দেবে। এদিকে, ন্যাটো দেশগুলির মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। এস্তোনিয়া সম্প্রতি দাবী করেছে যে, রাশিয়ান যুদ্ধবিমানগুলি অনুমতি ছাড়াই তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে। ট্রাম্প বলেছেন যে, ন্যাটো দেশগুলি যদি রাশিয়ান বিমানগুলিকে গুলি করে ভূপাতিত করতে চায়, তবে তিনি তাদের সমর্থন করবেন, তবে সরাসরি মার্কিন হস্তক্ষেপ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ইউক্রেনে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ইউক্রেনীয় সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং বোমা দিয়ে আক্রমণ তীব্র করেছে। ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন। তিনি পুতিন এবং জেলেনস্কির সাথে দেখা করেছিলেন এবং সরাসরি আলোচনার ব্যবস্থা করার কথা বলেছিলেন। তবে, পুতিন জেলেনস্কির সাথে কথা বলতে কোনও আগ্রহ দেখাননি এবং রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ তীব্র করে তোলে। জেলেনস্কি নিউইয়র্কে বেশ কয়েকজন বিশ্ব নেতার সাথে দেখা করছেন এবং ইউক্রেন সম্পর্কিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি বিশেষ সভায়ও তাঁর বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে।
No comments:
Post a Comment