রুপোর পালকিতে করে মন্দিরে আনা হয় কলাবৌকে, আজও অমলিন ২০০ বছরের পুরনো বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গা পূজা - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, September 19, 2025

রুপোর পালকিতে করে মন্দিরে আনা হয় কলাবৌকে, আজও অমলিন ২০০ বছরের পুরনো বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গা পূজা


দেবনাথ মোদক, বাঁকুড়া: প্রায় ২০০ বছর ছুঁয়ে আজও অমলিন বাঁকুড়ার অযোধ্যা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গা পূজা। এক ব্রিটিশ নীলকর সাহেবের বদান্যতায় ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে জমিদারির পত্তন হয়েছিল বাঁকুড়ার অযোধ্যা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের। ধীরে ধীরে সেই জমিদারের আধিপত্য ছড়িয়ে পড়েছিল বাঁকুড়া-সহ আশপাশের জেলা এমনকি সুদূর বেনারসেও। জমিদারি পত্তনের কয়েক বছরের মধ্যে জমিদারের বিশাল দেবোত্তর এস্টেটে মহা ধুমধামে শুরু হয়েছিল দুর্গা পুজো। প্রায় দুশো বছর হতে চললেও আজও অমলিন সেই পুজো।


ইতিহাস অনুযায়ী, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের পূর্বপুরুষ রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় ঊনবিংশ শতকের গোড়ায় হুগলির শ্রীরামপুরে চিক নামের এক নীলকর সাহেবের সাধারণ কর্মচারী হিসাবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। নিজের বুদ্ধিমত্তা, কর্ম তৎপরতা ও বিস্বাসযোগ্যতায় রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় চিক সাহেবের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ও স্নেহভাজন হয়ে ওঠেন। পরবর্তীকালে চিক সাহেবের মৃত্যু হলে তাঁর উইল অনুযায়ী চিক সাহেবের ইজারা নেওয়া সম্পত্তির অর্ধেক তাঁর স্ত্রী এবং অর্ধেক লাভ করেন রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশাল সেই সম্পত্তির সূত্র ধরেই অযোধ্যা গ্রামে জমিদারির পত্তন। ধীরে ধীরে বাঁকুড়া ও হুগলি সহ আশপাশের জেলা এমনকি রাজ্যের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে তাঁর আধিপত্য।



শোনা যায়, নীলকর সাহেবের সূত্রে জমিদারি লাভ করলেও বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার কোনোদিনই নীলকর সাহেবদের মতো অত্যাচারী ছিলেন না বরং প্রজাদরদী জমিদারের বদান্যতায় প্রজারা সে সময় নিজের জমিতে ইচ্ছেমতো ফসল চাষের অধিকার ফিরে পান। যা নিয়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দূরত্ব তৈরী হয়। জমিদারি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে খাজনা আয়ের দরুণ অযোধ্যা গ্রামে তৈরী হয় বিশাল দেবোত্তর এস্টেট। যেখনে দ্বাদশ শিবমন্দির, রাসমঞ্চ, গিরি গোবর্ধন মন্দির, কূলদেবতার মন্দির, দোলমন্দির, ঝুলনমন্দির তৈরী করা হয়। প্রথমে গ্রামেরই অন্যত্র পারিবারিক দুর্গা পুজোয় অংশ নিতেন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যেরা। পরবর্তী কালে পারিবারিক বিবাদের কারণে দেবোত্তর এস্টেটে পৃথক ভাবে মহা ধুমধামে শুরু হয় দুর্গাপুজো। 


স্বাধীনতার পর দেশ জুড়ে জমিদারি প্রথা বিলোপে হতেই জমিদারি স্বত্ব হারিয়ে ফেলে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার।একদিকে বয়সের ভার আর অন্যদিকে আয় কমে যাওয়ায় পরিচর্যার অভাবে ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে প্রাসাদ। ভেঙে পড়ে সিংহদুয়ার, নহবতখানা, খাজাঞ্চিখানা, লেঠেল ব্যারাক। কিন্তু দেবোত্তর এস্টেটের বিভিন্ন মন্দির আজও যেমন অতীতের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে টিকে রয়েছে তেমনই পরম্পরা মেনে প্রায় দ্বিশতবর্ষ ছুঁয়ে আজও জমিদারের দেবোত্তর এস্টেটে ধুমধামের সঙ্গে পুজো হয়ে আসছে দেবী দুর্গার। পুজো এলেই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা এই পরিবারের সদস্যেরা ফিরে আসেন অযোধ্যা গ্রামে তাঁদের প্রাচীন দেবোত্তর এস্টেটে। রীতি মেনে ঢোল আর সানাইয়ের সুরে ঘোষিত হয় আগমনীর বার্তা।


অযোধ্যা গ্রামের দেবোত্তর এস্টেটের ম্যানেজার তথা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য মনোহর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সময়ের সাথে সাথে পুজোর জেল্লা কমেছে ঠিকই কিন্তু এই পুজোকে ঘিরে আমাদের পরিবারের আবেগে ভাটা পড়েনি এতটুকুও। অতীতের পরম্পরা মেনে এখনও রুপোর পালকিতে করে কলাবৌকে মন্দিরে আনা হয়। পুজোর সময় আজও ব্যবহার হয় রুপোর বিভিন্ন বাসন পত্র। পরিবারের লোকজন তো বটেই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্পর্শ পেতে আশপাশের এলাকা থেকেও বহু মানুষ পুজোর সময় ভিড় জমান অযোধ্যা দেবোত্তর এস্টেটে।”

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad