কলকাতা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:২৫:০১ : জলমগ্ন কলকাতা। সোমবার রাতভর মুষলধারে বৃষ্টিতে কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে শহর। ভোর থেকে শহরের নানা প্রান্তে জমা জলের মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একে একে প্রাণ হারান সাধারণ মানুষ—কারও মৃত্যু হয়েছে খোলা বৈদ্যুতিক তারে হাত লেগে, আবার কেউ প্রাণ হারিয়েছেন রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটির সংস্পর্শে এসে। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন ফল বিক্রেতা, দৈনিক যাত্রী ও সাধারণ পথচারী।
প্রথম খবর আসে নেতাজিনগর থেকে। ভোরে সাইকেলে করে ফল বিক্রি করতে বেরিয়েছিলেন বাবু কুণ্ডু (৭০)। জলমগ্ন রাস্তায় পড়ে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে হাত লাগতেই ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। একইভাবে কালিকাপুর মোড়ের কাছে প্রাণ হারান বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। গড়িয়াহাটের বালিগঞ্জ প্লেস, ইকবালপুরের হোসেন সাহ রোড ও বেনিয়াপুকুরেও মিলেছে মৃতদেহ। চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন এলাকায় এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবক বিদ্যুতের ছোবলে প্রাণ হারান।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি দায় চাপালেন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা সিইএসসি-র ওপর। তাঁর অভিযোগ, “কলকাতায় বিনিয়োগ বা আধুনিকীকরণ না করে তারা শুধু ব্যবসা করছে, অথচ অন্য রাজ্যে কাজ করছে।” মৃতদের পরিবারকে চাকরি দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে একাধিক সংগঠন। অভিযোগ উঠেছে প্রশাসন, পুরসভা ও বিদ্যুৎ সংস্থা অতীতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকেও শিক্ষা নেয়নি।
মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে শহরের একাধিক জায়গায় ঘন্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে। গড়িয়া কামদাহারিতে ৩৩২ মিলিমিটার, যোধপুর পার্কে ২৮৫ মিলিমিটার, কালীঘাটে ২৮০ মিলিমিটার বৃষ্টি নথিভুক্ত হয়েছে। এর ফলে প্রধান সড়কগুলো হাঁটু থেকে কোমর সমান জলে ডুবে যায়। রেল ও মেট্রো পরিষেবাও ভেঙে পড়ে হাওড়া-শিয়ালদহ ডিভিশনে একাধিক লোকাল বাতিল হয়, আর কলকাতা মেট্রোর বিভিন্ন অংশে বন্ধ রাখতে হয় পরিষেবা।
মেয়র ফিরহাদ হাকিমের দাবী, “নদীতে টগবগে জল, খাল ভরা। ফলে শহর থেকে জল ফেলতে গেলেই তা আবার ব্যাক ফ্লো হয়ে ফিরে আসছে।” প্রশাসনের ভাষায়, গঙ্গার জোয়ার না কাটা পর্যন্ত শহরের জল নামানো সম্ভব নয়।
No comments:
Post a Comment