কলকাতা, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ : উত্তাল বিধানসভা, সাসপেন্ড বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সেইসঙ্গে আরও ৪ বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করা হয়; তাঁরা হলেন, অগ্নিমিত্রা পল, মিহির গোস্বামী, অশোক দিন্দা ও বঙ্কিম ঘোষ। বাঙালি হেনস্তা ইস্যুতে এদিন বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন চলছিল। বিজেপি এর আগে প্রশ্নোত্তর পর্ব বয়কট করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখার শুরুতেই হট্টগোল বিজেপির। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সতর্ক করার পরও গন্ডগোল চলতে থাকে।
ভিন রাজ্যে বাঙালি হেনস্তা ইস্যুতে আলোচনায় গত সোমবার থেকে বিশেষ অধিবেশন চলছে বিধানসভায়। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে শুরু করলেই বাধা দেয় বিজেপি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পিকার কে বলেন বিজেপি বিধায়কদের বলতে দেওয়া হোক। স্পিকার নির্দেশও দেন। কিন্তু তারপরেও বিজেপি বিধায়করা বক্তব্য রাখেননি, পরিবর্তে তাঁরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। বিজেপির বিধায়ক শংকর ঘোষের নেতৃত্বে শুরু হয় তুমুল হট্টগোল। নিজের আসনে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন বিজেপি বিধায়ক। বিধানসভার মর্যাদা রক্ষা করতে স্পিকারের অনুরোধকে উপেক্ষা করেন তাঁরা। স্পিকার বিজেপি বিধায়ককে আসনে ফিরে যেতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু কেন শুভেন্দু অধিকারীকে সাসপেন্ড করা হল? এমন প্রশ্ন বিধানসভায় তোলেন শংকর ঘোষ। উল্লেখ্য, গত সোমবার শুভেন্দু অধিকারীকেও সাসপেন্ড করা হয়।
স্পিকার বারবার সতর্ক করেন শংকর ঘোষকে। কিন্তু তারপরেও তিনি-সহ অন্যান্য বিজেপি বিধায়করা চিৎকার করতে থাকেন। এর পরই সাসপেন্ড করা হয় শংকর ঘোষকে। মার্শাল ডেকে তাকে বিধানসভা থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেন স্পিকার। শংকর ঘোষকে বাইরে বার করতে হাজির হন ৭-৮ জন মার্শাল। বিজেপি বিধায়ক ও বিধানসভার নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। শংকর ঘোষকে একপ্রকার টেনে-হিঁচড়ে বাইরে বার করার চেষ্টা করে মার্শালরা। সেই সময় শংকর ঘোষ কে ঘিরে বিজেপি বিধায়করা স্লোগান দিতে থাকেন পাশাপাশি মার্শালদের বাধা দেন। মার্শালের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর শেষমেষ শংকর ঘোষকে বের করে দেওয়া হয়।
এরপর মুখ্যমন্ত্রী বলতে শুরু করলে ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৃণমূল-বিজেপি দু-পক্ষই একে অপরকে চোর স্লোগান দিতে শুরু করেন। একসময় মুখ্যমন্ত্রী নিজে আসন ছেড়ে নেমে আসেন, সকলকে বলেন নিজেদের চেয়ারে বসতে। তৃণমূল বিধায়করা শান্ত হন। এরপর ফের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পল চিৎকার করতে থাকেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কেন সাসপেন্ড করা হল, সেই নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ দেখান। এরপরেই সাসপেন্ড করা হয় অগ্নিমিত্রা পল, মিহির গোস্বামী, অশোক দিন্দা ও বঙ্কিম ঘোষকে।
এদিকে এই হট্টগোলের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় বিজেপিকে তীব্র নিশানা করেন। তিনি বিজেপিকে 'ভোট চোরের দল' বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, 'বিজেপি দেশের কলঙ্ক। এই লোকেরা বাংলার বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উপর আক্রমণ করছে। বাংলার মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে রক্তপাত করেছে, যখন বিজেপির জন্মও হয়নি।'
মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা এবং বাঙালিদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, 'এই লোকেরা বাঙালিদের ওপর নির্যাতন করছে। সংসদে আমরা দেখেছি কীভাবে বিজেপি সিআইএসএফের মাধ্যমে আমাদের সাংসদদের হয়রানি করেছে। আমি বলছি, এমন একদিন আসবে যখন বাংলার মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবে না এবং তাদের একজনও বিধায়ক বিধানসভায় অবশিষ্ট থাকবে না।'
No comments:
Post a Comment