বিহার ভোট: নীতীশের জন্য গেম চেঞ্জার হবেন মহিলা ভোটাররা? জেনে নিন কী রণনীতি - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, September 4, 2025

বিহার ভোট: নীতীশের জন্য গেম চেঞ্জার হবেন মহিলা ভোটাররা? জেনে নিন কী রণনীতি


ন্যাশনাল ডেস্ক, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫: বিহার বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের মনোযোগ বাড়ছে কেবল নির্বাচনী প্রচারণার ওপর নয় বরং মাঠে তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে। বিশেষ করে, নীতিশ কুমার নারীদের কেন্দ্রে রেখে অনেক নতুন উপহার দিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নীতীশ আগেই তাঁর রণনীতি নির্ধারণ করে ফেলেছিলেন এবং এখন তিনি সেই যোজনাগুলো লাগু করছেন, যেগুলো তিনি তাঁর মহিলা সংবাদ যাত্রার সময় উপলব্ধি করছিলেন। এটা মনে করা হচ্ছে যে, ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মহিলা ভোটাররাই আসল গেম চেঞ্জার প্রমাণিত হবেন।


নীতীশের ৭ বড় ঘোষণা -

গত দুই মাসে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ৭টি বড় ঘোষণা করেছেন, যা সরাসরি মহিলাদের উপকৃত করবে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে মহিলাদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করা হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনকে মাথায় রেখে এই কৌশলটি তৈরি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে, যার লক্ষ্য হল মহিলা ভোট ব্যাংককে আকর্ষণ করা-


১- গ্রামীণ মহিলাদের আকর্ষণ করার জন্য নীতীশ কুমার একটি বড় পদক্ষেপ করেছেন। এর আওতায় ১.৪০ লক্ষ জীবিকা কর্মীর সম্মানী দ্বিগুণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে, ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত গ্রামীণ মহিলাদের একটি বৃহৎ গোষ্ঠীকে উপকৃত করবে এবং এটি নীতিশ কুমারের নির্বাচনী মাস্টারস্ট্রোক হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।


২- রাজ্য সরকার ৮,০৫৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিবাহ মণ্ডপ নির্মাণের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে। এই মণ্ডপগুলি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রামীণ মহিলাদের হস্তান্তর করা হবে। এটি কেবল তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাই শক্তিশালী করবে না বরং তাদের নেতৃত্বের দক্ষতা ও সামাজিক অংশগ্রহণও বৃদ্ধি করবে। কৌশলবিদরা এটিকে নারী ক্ষমতায়নের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন, যা নির্বাচনী দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।


৩- আশা কর্মীদের সম্মানী ভাতা ১,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,০০০ টাকা এবং মমতা কর্মীদের সম্মানী ৩০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছে। আশা ফ্যাসিলিটেটরদের সম্মানী ভাতাও বাড়ানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলির ফলে প্রায় ১.২০ লক্ষ মহিলা সরাসরি উপকৃত হবেন। বর্তমানে বিহারে ৯১,০৯৪ জন আশা কর্মী, ৪,৩৬৪ জন আশা ফ্যাসিলিটেটর এবং ৪,৬০০ জন মমতা কর্মী কাজ করছেন। এর পাশাপাশি, ২৯,০০০ নতুন আশা কর্মীর নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলছে। এই নেটওয়ার্কটি মোট ১.২০ লক্ষ মহিলার, যা নীতীশকে উপকৃত করতে পারে।


৪- অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মোবাইল ফোন কিনতে ১১,০০০ টাকার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মহিলা সংবাদ যাত্রার সময় নীতীশ এই প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেছিলেন এবং এখন এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী পদক্ষেপ হিসেবে কার্যকর প্রমাণিত হচ্ছে।


৫- নীতীশ কুমার মুখ্যমন্ত্রী মহিলা স্বরোজগার যোজনার আওতায় বিহারের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন মহিলার ক্ষমতায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এর জন্য ২০,০০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করা হয়েছে, যার আওতায় প্রতিটি পরিবারের একজন মহিলাকে ১০,০০০ টাকা অনুদান দেওয়া হবে, যা ফেরত দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। যদি মহিলারা তাঁদের ব্যবসায় সফল হন, তাহলে ৬ মাস পরে তারা ২ লক্ষ টাকা ঋণও পেতে সক্ষম হবেন। এই প্রকল্পটি সামাজিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণএবং এখন এটি নারী ভোট ব্যাংককে কতটা প্রভাবিত করতে সক্ষম, তা দেখার বিষয়।


৬- স্কুলে কর্মরত রাঁধুনিদের সম্মানী ভাতা ১,৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,৩০০ টাকা করা হয়েছে। যেহেতু বেশিরভাগ মহিলা এই খাতে নিযুক্ত, তাই এই সিদ্ধান্ত সরাসরি মহিলা ভোটারদের ওপরও প্রভাব ফেলবে। মনে করা হচ্ছে যে, নীতীশ কুমারের এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলি আসন্ন নির্বাচনের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।


৭- নীতীশ কুমার আগেই বিহারের পঞ্চায়েত এবং পৌর সংস্থাগুলিতে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ বাস্তবায়ন করেছিলেন। এর পাশাপাশি, প্রথমে পুলিশ পরিষেবা এবং পরে সমস্ত সরকারি চাকরিতে ৩৫ শতাংশ সংরক্ষণ বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। শিক্ষক নিয়োগে আবাসিক নীতি বাস্তবায়নের ফলে মহিলাদের কর্মসংস্থান এবং স্বনির্ভরতাও নিশ্চিত হয়েছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad