একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানা গেছে, চীন ভারতের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ গ্যারান্টি দাবি করেছে। বেইজিং চাইছে—ভারত যেন চীন থেকে আমদানি করা ভারী বিরল মৃত্তিকা খনিজ (Heavy Rare Earth Elements) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনরায় রপ্তানি না করে।
চীনের শর্ত অনুযায়ী, এই বিরল মৃত্তিকা শুধুমাত্র ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদার জন্য ব্যবহার করতে হবে। বৈদ্যুতিক যানবাহন (EV) থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা শিল্প পর্যন্ত—এই খনিজগুলিই আধুনিক প্রযুক্তির মূল উপাদান। এগুলির ঘাটতি হলে উচ্চ প্রযুক্তির একাধিক শিল্পক্ষেত্র বিপর্যস্ত হতে পারে।
দ্য ইকোনমিক টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় সংস্থাগুলি ইতিমধ্যেই “End User Certificate” জমা দিয়েছে, যেখানে উল্লেখ আছে যে এই খনিজগুলি কোনোভাবেই গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হবে না। তবুও চীন রপ্তানির আগে ভারতের কাছ থেকে আরও নিশ্চয়তা চাচ্ছে—বিশেষত, যাতে এই উপাদানগুলি আমেরিকা বা অন্য কোনও দেশের কাছে না পৌঁছায়।
চীন বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ বিরল মৃত্তিকা উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। রাজনৈতিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এই গ্যারান্টি নিয়ে টানাপোড়েনের কারণে ভারী বিরল মৃত্তিকার সরবরাহে বিলম্ব ঘটছে।
সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় কোম্পানিগুলি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্বারা প্রত্যয়িতভাবে শেষ ব্যবহার সংক্রান্ত নিশ্চয়তা দিচ্ছে। তবে চীন চায় আরও সরাসরি লিখিত গ্যারান্টি, যাতে পুনঃরপ্তানির সম্ভাবনা পুরোপুরি বন্ধ হয়।
গত আগস্টে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (SCO) সম্মেলনের পর চীন ভারতে হালকা বিরল মৃত্তিকা চুম্বক (Light Rare Earth Magnets) সরবরাহ পুনরায় শুরু করলেও, ভারী খনিজ পদার্থের সরবরাহ এখনও বন্ধ। গত অর্থবছরে ভারত প্রায় ₹৩০৬ কোটি টাকার ৮৭০ টন বিরল মৃত্তিকা চুম্বক আমদানি করেছিল। বর্তমান সরবরাহ ঘাটতির কারণে দেশের বৈদ্যুতিক যানবাহন ও প্রতিরক্ষা শিল্পে বড় প্রভাব পড়ছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, চীন এই বছরের এপ্রিলে “জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার” যুক্তি দেখিয়ে মাঝারি ও ভারী বিরল মৃত্তিকার রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এখন থেকে কেবলমাত্র চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ক্রেতারাই এই খনিজ পদার্থ আমদানি করতে পারবেন। ফলে ইউরোপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের রপ্তানি কার্যক্রমও অনিশ্চয়তার মুখে।

No comments:
Post a Comment