ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২৬ অক্টোবর ২০২৫: বলিউড অভিনেতা সালমান খান সম্প্রতি সৌদি আরবে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেই সময় তিনি বেলুচিস্তানকে পাকিস্তান থেকে আলাদা দেশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর এতেই ভীষণ চটেছে প্রতিবেশী দেশটি। শাহবাজ সরকার সালমান খানকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সালমান খানকে ফোর্থ শিডিউলে অন্তর্ভুক্ত করেছে, অর্থাৎ তাঁকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করা হয়েছে। এই তালিকা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় পড়ে এবং এর মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এই বিষয়ে একটি সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। তবে সালমান খান বা তাঁর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এ বিষয়ে এখনও (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত) কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সৌদি আরবে জয় ফোরাম ২০২৫-এ বলিউড অভিনেতা সালমান খানের বক্তব্যের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, "এরা বেলুচিস্তানের মানুষ, আফগানিস্তানের মানুষ, পাকিস্তানের মানুষ, সবাই সৌদি আরবে কঠোর পরিশ্রম করছে।" এই বিবৃতিতে তিনি পাকিস্তান থেকে আলাদা করে বেলুচিস্তানের কথা উল্লেখ করেছেন।
সালমানের এই বক্তব্যের পর পাকিস্তানে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা খুশি এবং তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সালমান যদিও ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি অসাবধানতাবশত বেলুচিস্তানের নাম পাকিস্তানের থেকে আলাদা উল্লেখ করেছিলেন, তা বর্তমানে স্পষ্ট নয়।
বেলুচিস্তানকে স্বতন্ত্র দেশ বানানোর দাবী করা নেতা
মীর ইয়ার বালুচ বলেন, "সৌদি আরবে ভারতীয় চলচ্চিত্র তারকা সালমান খানের বেলুচিস্তানের উল্লেখ ৬ কোটি বেলুচিস্তান নাগরিকদের জন্য খুশি নিয়ে এসেছে।"
তিনি আরও বলেন, "সালমান এমন কিছু করেছেন যা করতে বড় দেশগুলিও দ্বিধা করে। সাংস্কৃতিক মান্যতার এই সংকেত সৌম্য কূটনীতির শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানুষের মন জুড়ে দেয় এবং বিশ্বকে বেলুচিস্তানকে পৃথক জাতি হিসেবে মান্যতা দিতে উৎসাহিত করে।"
বেলুচিস্তানে বিদ্রোহের সবচেয়ে বড় কারণ হল পাকিস্তান সরকারের তরফে এখানে জনসংখ্যার প্রতি বৈষম্য। প্রদেশটি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া রাজ্য।
পাকিস্তান বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর চীনের কাছে হস্তান্তর করেছে, কিন্তু এই প্রকল্পটি বেলুচিস্তানের জনগণের কোনও উপকারে আসেনি। এই কারণেই এখানে চীনা প্রকল্পগুলির বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিক্ষোভ চলছে। এখানে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের নির্মাণ কাজ চলছে, যেখানে প্রায়শই আক্রমণ হয়।
বেলুচিস্তান পাকিস্তানের প্রায় ৪৬ শতাংশ এলাকা জুড়ে, তবে এর জনসংখ্যা মাত্র ১ কোটি ৫০ লক্ষ, যা পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬ শতাংশ। এখানকার প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন।
তাছাড়া, পাকিস্তানে বালুচ বংশোদ্ভূত লোকেরা বৈষম্যের শিকার হন, বিশেষ করে পাঞ্জাব অঞ্চলের মুসলমানদের কাছ থেকে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতেও বালুচদের উচ্চপদে নিযুক্ত করা হয় না, যা অসন্তোষকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

No comments:
Post a Comment