উত্তর ২৪ পরগনা, ৩১ অক্টোবর ২০২৫: নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজ্যে এসআইআর চালুর ঘোষণা করা হয়েছে। আর এরপর থেকেই আতঙ্কে গুমা এলাকার কয়েকশো মানুষ। প্রবীণ থেকে মধ্যবয়সি- সকলের মধ্যেই দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। খাওয়া-দাওয়া বন্ধ, রাতের ঘুম উধাও বহু মানুষের। তার মাঝেই আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে নেই ২০০২ সালের ভোটার তালিকা।
সূত্রের খবর, মালিপাড়া শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের ১৫৯ নম্বর বুথের ভোটার তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ২০০২ সালের লিস্ট অনুপস্থিত হলেও ২০০৩ সালের তালিকায় নাম রয়েছে অনেকেরই। সেই সময়ে ২০০৩ সালের তালিকা অনুযায়ী ওই বুথে মোট ভোটার ছিলেন ৪৩৬ জন, যার মধ্যে পুরুষ ২২৭ ও মহিলা ২০৯। কিন্তু পুরনো তালিকা অনলাইনে না পাওয়ায় এলাকাবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
বিএলও চন্দ্রানী দাস জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি লিখিত আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন। কমিশনের তরফে তাঁকে ২০০৩ ও ২০০৪ সালের ভোটার তালিকা মিলিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। চন্দ্রানী দাসের কথায়, এলাকাবাসীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আসন্ন প্রশিক্ষণে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে সমাধান খোঁজা হবে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মালিপাড়ার প্রবীণ মানুষজনের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
স্থানীয়রা জানান, নির্দেশ অনুযায়ী যদি ২০০২ সালের তালিকায় নাম না থাকে, তবে ভোটার তালিকা থেকেও নাম বাদ যেতে পারে। আর এমন ঘটলে নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। ফলে এদিন ১৫৯ নম্বর বুথের সামনে বহু মানুষ জড়ো হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অন্যদিকে, গুমা এক নম্বর পঞ্চায়েতের ৬১ নম্বর বুথেও উঠেছে এক রকমের অভিযোগ। সেখানে দাবী, ২০০২ সালের ভোটার তালিকা কমিশনের ওয়েবসাইটে থাকলেও ৩৪৩ থেকে ৪১৪ নম্বর পর্যন্ত ভোটারদের নাম অনলাইনে নেই। হার্ডকপিতে নাম থাকা সত্ত্বেও অনলাইন তালিকায় অনুপস্থিতি ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা।
গুমা ১ নম্বর অঞ্চলের যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সাদিক সাহাজি অভিযোগ করেন, এটা মুসলমানদের নাম বাদ দেওয়ার সুকৌশল চক্রান্ত। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম নিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর কথা মতো এইভাবে চক্রান্ত করে ১ কোটি মানুষের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি দাবী করেছেন, অন্তত ৭১ জনের নাম অনুপস্থিতির বিষয়টি স্থানীয় বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী ও নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয় নিয়ে অশোকনগরে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি বাপি মিস্ত্রি জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষকে ভয় পাওয়ার কোনও দরকার নেই, কোনও মুসলিম ভোট বাদ যাবে না, বাদ যাবে যারা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী।যারা এই দেশীয় লোক তাদের নাম থেকে যাবে, তৃণমূল মানুষকে ভুলভাল বোঝানোর চেষ্টা করছে।
তবে, এসআইআর শুরুর আগেই এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্ক গ্রাস করেছে গুমা অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও দ্রুত সমাধানই এখন তাঁদের একমাত্র প্রত্যাশা।

No comments:
Post a Comment