ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের (RBI) গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্রা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দেশে পলিসি রেট কমানোর এখনও পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, অক্টোবরের মুদ্রানীতি কমিটি (MPC) সভাতেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে সুদের হার কমানোর মতো যথেষ্ট ‘স্পেস’ রয়েছে। এরপর যে ম্যাক্রো–ইকোনমিক তথ্য প্রকাশ হয়েছে, তাতেও প্রমাণিত হয়েছে যে এই স্পেস কমেনি। ফলে আগামী বৈঠকে রেট কমানোর সিদ্ধান্ত নেবে কি না—তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে MPC-র উপর। এর আগে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে MPC মোট ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে বড়সড় স্বস্তি দিয়েছিল; তবে আগস্টের পরে নীতি কার্যত স্থিরই রয়েছে।
রেকর্ড কম মূল্যস্ফীতি রেট কাটের আশা বাড়িয়েছে
অক্টোবরে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি ঐতিহাসিকভাবে নেমে দাঁড়িয়েছে ০.২৫ শতাংশে—যা এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন। খাদ্যদ্রব্যের দাম কমা এবং বহু ভোক্তা সামগ্রীর উপর কর হ্রাস এই স্বস্তির মূল কারণ। মূল্যস্ফীতির এত বড় পতনে ডিসেম্বরের নীতি বৈঠকে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা জোরালো হয়েছে। বাজারেও রেট কাটের ব্যাপারে প্রত্যাশা বেড়েছে। গভর্নরের মন্তব্যের পর ১০ বছরের সরকারি বন্ডের ইল্ড সামান্য কমেছে। তবে অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশা সত্ত্বেও ওভারনাইট ইনডেক্সড সুয়াপ (OIS) রেট এখনো ‘স্থিতাবস্থার’ ইঙ্গিত দিচ্ছে—অর্থাৎ বাজার পুরোপুরি রেট কাট পক্ষপাতী নয়।
রুপির দুর্বলতাকে ‘স্বাভাবিক’ বললেন গভর্নর
সম্প্রতি রুপির পতন নিয়ে সঞ্জয় মলহোত্রা জানান, এই দুর্বলতা সম্পূর্ণ বাজার নির্ভর এবং এতে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। RBI কেবলমাত্র অতিরিক্ত ওঠানামা ঠেকাতেই হস্তক্ষেপ করে। বছরে ৩–৩.৫ শতাংশ হ্রাস ঐতিহাসিক গড়ের মধ্যেই পড়ে। গত শুক্রবার রুপি রেকর্ড নিচে নেমে ৮৯.৪৯-এ বন্ধ হয়। চলতি বছরে রুপির পতন ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে, ফলে এটি এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার তালিকায় উঠে এসেছে। পোর্টফোলিও বিনিয়োগের বহির্গমন এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক অনিশ্চয়তার শঙ্কা রুপির উপর অতিরিক্ত চাপ বাড়িয়েছে।
এখন নজর ডিসেম্বরের MPC বৈঠকে
গভর্নরের মন্তব্যের পর বাজারের নজর এখন ডিসেম্বরের MPC বৈঠকে। একদিকে রেকর্ড কম মূল্যস্ফীতি ও স্থিতিশীল সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সুদের হার কমানোর পক্ষে ইঙ্গিত দিচ্ছে; অন্যদিকে বৈশ্বিক আর্থিক অনিশ্চয়তা ও রুপির দুর্বলতা কমিটিকে কিছুটা সতর্ক থাকতে বাধ্য করতে পারে। বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে কর্পোরেট মহল—সকলের কাছে সিদ্ধান্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রেট কাট হলে ঋণের খরচ কমবে, বিনিয়োগ বাড়বে এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপে গতি আসবে। সরকারের পাশাপাশি RBI-ও নজর রাখছে—ডিসেম্বরে ঘোষিত নীতি ভারতের অর্থনীতিকে কোন পথে নিয়ে যায়।

No comments:
Post a Comment