প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দলের সাথে ভুলভাবে জড়িয়ে পড়া লালু প্রসাদ যাদবের জন্য যে কতটা ব্যয়বহুল হয়েছিল, তা আজ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ১৯৯০ সালের ঘটনা—বিজেপির সমর্থনেই লালু যাদব বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। জনতা দলের সরকার গঠনে বিজেপি তখন উদারভাবে লালুকে সমর্থন দেয় এবং ১০ মার্চ ১৯৯০ সালে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। অযোধ্যায় রাম মন্দির আন্দোলনের সময় এলকে আদভানীর রথযাত্রা শুরু হলে লালুর নির্দেশে আদভানীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরপরই ২৩ অক্টোবর ১৯৯০ সালে বিজেপি লালুর সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।
নীতীশ কুমার যখন দশম বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলেছেন, তখন লালু যাদব নিশ্চয়ই উপলব্ধি করছেন—বিজেপির সাথে সেই অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব আরজেডির জন্য কত বড় ক্ষতি ডেকে এনেছিল। লালু বরাবরই দাবি করতেন, এবার কেউ তেজস্বী যাদবকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া থেকে আটকাতে পারবে না; কিন্তু তিনি হয়তো ভাবেননি, বিজেপি ও জেডিইউ একসাথে আবারও তাঁর দলকে কোণঠাসা করে দিতে পারে।
আজ এটা পরিষ্কার যে, যদি লালু ১৯৯০ সালে বিজেপিকে অবমূল্যায়ন না করতেন এবং আদভানী গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সম্পর্ক নষ্ট না করতেন, তবে হয়তো জোট ভেঙে যেত না। বিজেপি নীতীশ কুমারের সঙ্গে আজও সম্পর্ক ধরে রেখেছে। এমনকি ২০২০ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো, কম আসন পেয়েও বিজেপি বিনা আপত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী পদ নীতীশের হাতে তুলে দিয়েছে—যা প্রমাণ করে বিজেপি একজন ধারাবাহিক ও কৌশলী অংশীদার।
অন্যদিকে, লালুর সরকার বিজেপির সমর্থন ছাড়াই ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা, বাম দল ও স্বতন্ত্রদের সাহায্যে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টিকে থাকতে পেরেছিল। কিন্তু ১৫ বছরের সেই শাসনের অবসান ঘটিয়ে বিজেপি-নীতীশ জোট ক্ষমতা দখল করে। তারপর থেকেই আরজেডি রাজনীতির মূলধারার বাইরে ঘুরপাক খাচ্ছে।
২০১৫ এবং ২০২২ সালে আরজেডি ক্ষমতায় ফিরলেও তা সম্ভব হয়েছিল নীতীশ কুমারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু উভয়বারই তিনি জোট ভেঙে আরজেডিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেন—ফলে আরজেডি টিকেছিল মাত্র দুই বছর। বিপরীতে, এনডিএ-র সাথে নীতীশের জোটই মোটের ওপর তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে সবচেয়ে স্থিতিশীল করে তুলেছে।
যদি লালু প্রসাদ যাদব সেই সময় বিজেপিকে বিরক্ত না করতেন, তাহলে আজ আরজেডিকে এতটা সংগ্রাম করতে না হতো। তীব্র ক্ষমতাবিরোধী হাওয়ার মধ্যেও নীতীশ কুমার দশমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন—এখানে বিজেপির ভূমিকা স্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
উদার সমর্থন পাওয়া সত্ত্বেও সেই দলের শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করার রাজনৈতিক মূল্য আজও আরজেডিকে দিতে হচ্ছে—এটাই ১৯৯০ সালের সবচেয়ে বড় শিক্ষা।

No comments:
Post a Comment