গায়ে হলুদের পর বাড়ির বাইরে পা রাখা অশুভ কেন? জানুন এই রীতির পিছনে লুকানো বৈজ্ঞানিক কারণ - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, November 7, 2025

গায়ে হলুদের পর বাড়ির বাইরে পা রাখা অশুভ কেন? জানুন এই রীতির পিছনে লুকানো বৈজ্ঞানিক কারণ



প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০০:০১ : ভারতীয় বিবাহ তাদের ঐতিহ্য, রীতিনীতি এবং আচার-অনুষ্ঠানের জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। প্রতিটি আচারের পিছনে একটি গভীর অর্থ, বিশ্বাস বা গল্প রয়েছে। এরকম একটি আচার হল হলদি অনুষ্ঠান, যা বিয়ের একদিন আগে করা হয়। এই আচারে, বর এবং কনে উভয়কেই তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে, তাদের শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং নেতিবাচকতা দূর করতে হলুদ মাখানো হয়। হলুদ লাগানোর পর, সাধারণত বলা হয় যে বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বর এবং কনে ঘর থেকে বের হবেন না। অনেকে এটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী নিষেধাজ্ঞা বা কুসংস্কার বলে মনে করেন, তবে এর পিছনে ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক দুই কারণই রয়েছে। প্রাচীনকালে, এই নিয়মটি কেবল একটি ঐতিহ্য ছিল না বরং এটিকে সুরক্ষা এবং শুভতার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হত। আসুন জেনে নেওয়া যাক হলদি অনুষ্ঠানের পরে বর এবং কনে ঘর থেকে বের না হওয়ার কারণ এবং কেন এই ঐতিহ্য আজও অনুসরণ করা হয়।

হলুদ ভারতীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি কেবল একটি মশলা নয়, তবে আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত উপকারী বলে বিবেচিত হয়। বিয়ের অনুষ্ঠানে হলুদ মাখানো কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই নয়, এটি বিয়ের প্রস্তুতির একটি শুভ লক্ষণও। হলুদ মাখলে শরীর থেকে নেতিবাচক শক্তি দূর হয় এবং মন শান্ত থাকে।


ধর্মীয় কারণ: শুভতা এবং সুরক্ষার প্রতীক
- ধর্মীয়ভাবে, এটা বিশ্বাস করা হয় যে হলুদের গন্ধ শরীরের চারপাশে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই শক্তিকেই আকর্ষণ করে। হলুদ মাখানোর পর, একজন ব্যক্তির শরীর একটি উজ্জীবিত অবস্থায় থাকে। যদি তারা এই সময়ে ঘর থেকে বের হন এবং কোনও নেতিবাচক শক্তি বা অশুভ স্থানের সংস্পর্শে আসেন, তাহলে তা বিবাহের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এই কারণে, হলুদ মাখানোর পর বর-কনেকে ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হয় না, যাতে তাদের ইতিবাচক শক্তি অক্ষুণ্ণ থাকে এবং বিবাহ ব্যাহত না হয়।

এছাড়াও বিশ্বাস করা হয় যে হলুদের গন্ধ রাহু এবং কেতুর মতো নির্দিষ্ট গ্রহের সাথে সম্পর্কিত। এই সময়ে বাইরে গেলে এই গ্রহগুলির প্রভাব বৃদ্ধি পেতে পারে, যার ফলে মানসিক অস্থিরতা বা ছোটখাটো বাধার সৃষ্টি হতে পারে। অতএব, এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে বিয়ের দিন পর্যন্ত হলুদ লাগানোর পর বর ও কনে ঘরের ভেতরেই থাকেন।

বৈজ্ঞানিক কারণ: ত্বক সুরক্ষা এবং শুদ্ধিকরণ
-এই ঐতিহ্যের পিছনে বৈজ্ঞানিক কারণ বেশ যুক্তিসঙ্গত। হলুদ একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক যা ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে। হলুদ লাগানোর পর ত্বক খুবই সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এই সময়ে সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে পোড়া বা কালো হয়ে যেতে পারে।
-অতএব, প্রাচীনকালে লোকেরা বলত যে উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে এবং কোনও অ্যালার্জি বা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে হলুদ লাগানোর পর বাইরে যাওয়া উচিত নয়।

হলুদ শরীরের উপরের স্তরও পরিষ্কার করে এবং ছিদ্র খুলে দেয়, যা সরাসরি ধুলো এবং দূষণের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। এই কারণেই বিয়ের আগে এই আচারের পরে বর ও কনেকে সম্পূর্ণ বিশ্রাম এবং সুরক্ষা দেওয়া হয়।

হলদি অনুষ্ঠানের পরে, বর ও কনেকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে তারা তাদের পরিবার এবং আত্মীয়দের সাথে এই সময়টি উপভোগ করতে পারে। এই মুহূর্তটি পারিবারিক বন্ধন এবং ঐক্যের প্রতীক।

এই অনুষ্ঠানের সময়, সমস্ত আত্মীয়স্বজন, বিশেষ করে মহিলারা একত্রিত হয়ে বর বা কনের গায়ে হলুদ মাখেন, গান গাইবেন এবং একটি আনন্দময় বিবাহের পরিবেশ তৈরি করবেন। অতএব, এই অনুষ্ঠানটি কেবল ধর্মীয় বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং একটি আবেগগত দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখা হয়।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad