প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০০:০২ : দেশজুড়ে এমন অনেক অলৌকিক মন্দির রয়েছে, যেখানে ভক্তরা নিজের অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় ঈশ্বরের শরণ নেন। ভক্তদের বিশ্বাস, ঈশ্বর তাঁদের সব বিপদ থেকে রক্ষা করবেন এবং পরিবারের ওপর কৃপা বর্ষণ করবেন। তাই তাঁরা প্রতিদিন মন্দিরে গিয়ে দর্শন করেন। ভারতের তামিলনাডু রাজ্যে এমনই এক রহস্যময় মন্দির রয়েছে, যেখানে বলা হয়—শুধু দেবদর্শনেই ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর রোগও সেরে যায়! এই অলৌকিক বিশ্বাসের কারণে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্ত এখানে আসেন। এই মন্দিরকে ঘিরে আরেকটি পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত আছে—এই স্থানেই ভগবান বিষ্ণু, মহাদেবের দেওয়া অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই অলৌকিক মন্দিরের গল্প।
রোগমুক্তির আশীর্বাদ দেন মা বাগমপ্রিয়াল
তামিলনাডুর রামনাথপুরম জেলায়, তিরুভদনাইয়ের কাছে সমুদ্র তীরে রয়েছে তিরুভেত্তিয়ুর নামের একটি গ্রাম। এখানেই মা বাগমপ্রিয়াল দেবীর বিখ্যাত মন্দির অবস্থিত। মা অম্বিকার এই রূপকে ‘দাই আম্মা’ নামেও ডাকা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, মা বাগমপ্রিয়াল এমন এক দেবী যিনি অশাধ্য রোগ থেকেও মানুষকে মুক্তি দেন। বিশেষত ক্যান্সার রোগীরা এখানে প্রার্থনা করতে আসেন, আশায় থাকেন মায়ের কৃপায় তাঁদের ব্যাধি দূর হবে।
এই মন্দিরকে ঘিরে একটি জনপ্রিয় পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত। বলা হয়, রাজা মহাবলি ছিলেন এক সাহসী ও দানশীল রাজা, যিনি প্রজাদের প্রতি অত্যন্ত যত্নবান ছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তাঁর মধ্যে অহংকার জন্ম নেয়। একসময় তিনি ভগবান শিবের মন্দিরে জ্বলন্ত অগ্নি-জ্যোতির রক্ষা করেন, ফলে তিনি ‘শিবপ্রিয়’ হিসেবে খ্যাত হন। কিন্তু তাঁর অহংকার ভাঙতে ভগবান বিষ্ণু ‘বামন’ অবতার নেন এবং তিন পা ভূমির বিনিময়ে রাজা মহাবলিকে পাতাললোকে পাঠিয়ে দেন।
শিবের অভিশাপ ও বিষ্ণুর মুক্তি
রাজা মহাবলির মা এই ঘটনায় অত্যন্ত দুঃখ পেয়ে ভগবান শিবের শরণ নেন এবং ন্যায়ের প্রার্থনা করেন। এতে শিব ক্রুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুকে অভিশাপ দেন যে, তাঁর পদে কর্করোগ (ক্যান্সার) বাস করবে। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে ভগবান বিষ্ণু পুনরায় শিবের শরণাপন্ন হন। তখন শিব বলেন—তাঁকে ১৮টি পবিত্র তীর্থে স্নান করতে হবে। বিষ্ণু একে একে সেই ১৮টি তীর্থে স্নান করেন এবং শেষমেশ তিরুভেত্তিয়ুর গ্রামে এসে রোগমুক্তি লাভ করেন। সেই থেকেই এই স্থানকে রোগনাশক তীর্থ হিসেবে মানা হয়।
এক হাজার বছরেরও পুরনো এই অলৌকিক মন্দির
বিশ্বাস করা হয়, এই মন্দিরের বয়স এক হাজার বছরেরও বেশি। এখানে মূলত ভগবান শিব ‘পঝম পুত্তু নাথর’ রূপে বিরাজমান, আর তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দেবী বাগমপ্রিয়াল। বলা হয়, ঋষি অগস্ত্যই প্রথম এই দেবীর তপস্যা করে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজও দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই তীর্থে এসে মা বাগমপ্রিয়ালের দর্শন করেন, অসুখমুক্তি ও সুস্বাস্থ্যের আশায় মাথা নত করেন।

No comments:
Post a Comment