উত্তর ২৪ পরগনা, ১৭ নভেম্বর ২০২৫: এসআইআর শুরু হতেই ঘরে ফিরলেন ২৮ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া মৃত স্বামী। দু'বছর আগে শ্রাদ্ধ শান্তির কাজ সেরেছিল পরিবার। ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার আহবেই অন্য ছবি উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায়। ২৮ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা স্বামীর শ্রাদ্ধ-শান্তির কাজ সেরেছে পরিবার দুই বছর আগেই। সেই ‘মৃত’ স্বামীই কিনা রবিবার ফিরে এলেন! বনগাঁ মহকুমা বাগদা থানার মেহেরানি কুরুলিয়া এলাকায় এমন ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এসআইআর আতঙ্কেই কি ফিরে এলেন জগবন্ধু মণ্ডল! এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল এলাকায়।
জানা যায়, ২৮ বছর আগে কর্মসূত্রে গুজরাটে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান জগবন্ধু মণ্ডল। যাঁকে এতদিন মৃত মনে করে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম পর্যন্ত সেরে ফেলেছিল পরিবার, হঠাৎই তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন আর তাঁকে জীবিত দেখে অবাক হয়ে যান সকলেই। স্থানীয়দের কথায়, দুই দশকেরও বেশি সময় আগে এলাকার আরও কয়েকজনের সঙ্গে কাজের সন্ধানে গুজরাটে গিয়েছিলেন জগবন্ধু মণ্ডল। তখন বাড়িতে ছিলেন স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে। সহযাত্রীরা ফিরলেও তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। শুরু হয় দীর্ঘ প্রতীক্ষা। বহু খোঁজখবর, এমনকি ওঝা-গুনিন-জ্যোতিষীদের কাছেও গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যরা। সেখান থেকেই জানানো হয় জগবন্ধুর ‘মৃত্যু’-র খবর। শেষ পর্যন্ত কুসংস্কারের বলি হয়ে তাঁর পরিবার জগবন্ধুর পরলৌকিক ক্রিয়াও সম্পন্ন করেন।
এদিকে, ২৮ বছরের ব্যবধানে বদলে যাওয়া চেনা এলাকা চিনতে না পারায় নিজে বাড়ি খুঁজে পাননি জগবন্ধু মণ্ডল। এলাকাবাসীরাই তাঁকে চিনিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন। আচমকা তাঁকে দেখে হতবাক পরিবার-পরিজনেরা। প্রতিবেশীরা জানান, এসআইআর আতঙ্ক ও নথি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণেই ফিরে এসেছেন জগবন্ধু। কারণ ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। তবে তাঁর বাবার নাম আছে। ফলে বর্তমান এসআইআর নথিভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা ছিল।
অন্যদিকে, এলাকায় গুঞ্জন, বাঁকুড়া জেলার রায়পুর দুবালিতে নাকি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছিলেন জগবন্ধু মণ্ডল। যদিও তিনি সেই দাবী অস্বীকার করেন। এদিকে বাঁকুড়ার ভোটার তালিকায় তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে স্ত্রী সুলেখা মণ্ডলের নাম এবং সুলেখার স্বামীর নামে উল্লেখ রয়েছে জগবন্ধু মণ্ডলের নাম। তবে সব বিতর্কের মধ্যেই সবচেয়ে বড় বিষয়, ২৮ বছর পর ‘হারিয়ে যাওয়া’ পরিবারের সদস্যকে জীবিত ফিরে পেয়ে পরিবারে এখন খুশির মেজাজ।

No comments:
Post a Comment