ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৫ নভেম্বর ২০২৫: ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত মামলায় বড় রায় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার আদালত বলেছে, সম্মতিপূর্ণ সম্পর্কে যদি বিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে পুরুষদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা বিবেচনা করা যাবে না। একই সঙ্গে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা খারিজ হয়ে যায়। পিটিশনের শুনানি করে বিচারপতি বিভি নাগারত্ন এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের একটি বেঞ্চ বলেছে যে, বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ধর্ষণের ক্ষেত্রে অভিযোগের সাথে সম্পর্কিত স্পষ্ট প্রমাণ থাকা উচিৎ।
বেঞ্চ বলেছে যে, একটা সম্পর্ককে ধর্ষণ শুধু এজন্য বলা যায় না, কেননা এর সমাপ্তি নিরাশা ও অসম্মতির জন্য হয়েছে। বেঞ্চ বলে, "সম্মতিতে সম্পর্কে থাকা যুগলদের যদি বিচ্ছেদ (ব্রেক আপ) হয়ে যায়, তাহলে শুধুমাত্র এর জন্য ফৌজদারি পদক্ষেপ করা যায় না..। শুরুতে যে সম্পর্ক সহমতিতে হয়েছিল, তা যদি বিয়েতে পরিণত না হয়, তাহলে সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যাবে না।"
আদালত বলে, ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে, এটিও দেখানো প্রয়োজন যে, শুরু থেকেই বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে এটিও দেখানো প্রয়োজন যে, মহিলা সেই প্রতিশ্রুতির কারণে সম্মতি দিয়েছিলেন। বেঞ্চ বলে, "ধর্ষণ এবং সম্মতিতে যৌন সম্পর্কের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আদালতকে সাবধানতার সাথে এটি পরীক্ষা করতে হবে যে, অভিযুক্ত সত্যিই ভুক্তভোগীকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন নাকি কেবল তার লালসা মেটানোর জন্য মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলেন।"
এর আগে, বম্বে হাইকোর্ট ঔরঙ্গাবাদের এক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা খারিজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। ২০২৪ সালে ছত্রপতি সম্ভাজিনগরে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়। অভিযোগকারী একজন বিবাহিত মহিলা ছিলেন, যিনি তাঁর স্বামীর থেকে আলাদা থাকতেন। ২০২২ সালে আইনজীবীর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। একটি মামলায় সহায়তা করার সময়, দুজনের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায় এবং শারীরিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে।
মহিলা অভিযোগ করেছিলেন, আইনজীবী তাঁকে বিয়র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তা প্রত্যাখ্যান করেন। মহিলার অভিযোগ ছিল, এই সময়ের মধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার গর্ভবতী হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সম্মতিতেই এটা শেষ করা হয়েছিল। আইনজীবী যখন তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান এবং হুমকি দেন, তখন তিনি বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেন।
অভিযুক্ত আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টকে বলেন যে, অভিযোগটি প্রতিশোধের ভাবনা থেকে করা হয়েছিল। আরও অভিযোগ, তিনি তাকে ১.৫ লক্ষ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর অভিযোগটি করা হয়েছিল। অভিযুক্ত বলেন যে, তিন বছরের সম্পর্কের সময় মহিলা কখনও যৌন সহিংসতার অভিযোগ দায়ের করেননি।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, অভিযোগগুলি থেকে জানা যায় যে, সম্পর্কটি একাধিক সাক্ষাতের সাথে জড়িত ছিল এবং বলপ্রয়োগ বা প্রতারণার মাধ্যমে নয়, সম্মতিতে হয়েছিল। বেঞ্চ বলেছে যে, পারস্পরিক টানের ভিত্তিতে যৌন সম্পর্ককে কেবল বিয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ার কারণে অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। কোর্ট বলে, "বর্তমান মামলায় কোথাও এমন নেই যে, আপিলকারী অভিযোগকারীকে কেবল শারীরিক আনন্দের জন্য প্রলুব্ধ করেছিলেন এবং তারপর নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। সম্পর্ক তিন বছর স্থায়ী ছিল, যা অনেক দীর্ঘ সময়।"
বিচারক ব্যর্থ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্ষণের বিধানের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। বেঞ্চ দেখেছে, মহিলা শিক্ষিতা। সেইসঙ্গে বলে যে, মহিলা বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও সম্মতিতে সম্পর্ক জারি রেখেছিলেন। আদালত বলেছে যে, কোনও ঘটনা থেকেই জোরজবরদস্তি বা শারীরিক ভয় দেখানো হয়েছে, এমন হয়নি।

No comments:
Post a Comment