ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫: অশান্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় প্রতিদিনই মিলছে অশান্তির খবর। আক্রান্ত হচ্ছেন সেদেশের হিন্দুরা; তাঁদের ওপর হওয়া বিভিন্ন অত্যাচারের খবর প্রকাশিত হচ্ছে একাধিক সংবাদমাধ্যমে। সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে বিশেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে ঘটা সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে (প্রতিবেদন আজ তক হিন্দির)। হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজ (HRCBM)- এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, জুন ২০২৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫- এর মধ্যে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার কমপক্ষে ৭১টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, রংপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, সুনামগঞ্জ, খুলনা, কুমিল্লা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল এবং সিলেট সহ ৩০টিরও বেশি জেলায় এই ঘটনাগুলি ঘটেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি বলছে যে, এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং হিন্দু সংখ্যালঘুদের 'সংরচনাত্মক অসুরক্ষা'কে তুলে ধরে।
প্রতিবেদনে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে চলতি বছরের ১৮ ডিসেম্বরের। এদিন ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একদল জনতা দীপু চন্দ্র দাস (৩০) কে পিটিয়ে খুন করে এবং তারপর তার মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়াও, প্রতিবেদনে ১৯ জুন, ২০২৫- বরিশালের আগলঝাড়ায় তমাল বৈদ্যকে গ্রেফতারি, ২২ জুন, ২০২৫- চাঁদপুরের মতলাবে শান্ত সূত্রধরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল, ২৭ জুলাই, ২০২৫- রংপুরের বেতগাড়ি ইউনিয়নে ১৭ বছর বয়সী রঞ্জন রায়ের গ্রেফতারির পর ২২টি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪-এ খুলনার সোনাডাঙ্গায় ১৫ বছর বয়সী উৎসব মণ্ডলকে নির্মমভাবে মারধরের
(নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে ঘটেছে বলে অভিযোগ) কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সহিংসতা এবং অভিযোগ কেবল একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নয় বরং রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং সিলেট সহ ৩০ টিরও বেশি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, অভিযুক্তদের ৯০ শতাংশ হিন্দু, যার মধ্যে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী অপ্রাপ্তবয়স্করাও রয়েছে। রংপুরে ১৭ বছর বয়সী রঞ্জন রায়কে গ্রেফতারের পর, উন্মত্ত জনতার ভিড় ২২টি হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর চালায়, যা দেখায় যে, একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পরিণতি পুরো পাড়া ভোগ করছে। বেশিরভাগ মামলাই সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের সাথে জড়িত, যার মধ্যে অনেকগুলি আইডি হ্যাক হওয়া বা ভুয়া আইডি বলে দাবী করা হয়।
ধর্মনিন্দার অভিযোগের প্রভাব শিক্ষাব্যবস্থাতেও পড়েছে। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি প্রধান প্রতিষ্ঠান থেকে হিন্দু পড়ুয়াদের কোনও ফরেনসিক তদন্ত ছাড়াই বরখাস্ত বা বহিষ্কার করা হয়েছে। সরকারের সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে যাচাই ছাড়াই এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলে অধ্যয়নরত প্রণয় কুণ্ডু, বিকর্ণ দাস দিব্য, টনি রায় এবং অপূর্ব পালের মতো শিক্ষার্থীদের ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বরখাস্ত, বহিষ্কার এবং পুলিশ রিমান্ডের মুখোমুখি হতে হয়। এসবের মধ্যে অনেক মামলা সাইবার নিরাপত্তা আইনের অধীনে পোস্টের সত্যতা যাচাই না করেই দায়ের করা হয়েছে।
এইচআরসিবিএম অনুসারে, এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং একটি সুনিয়োজিত ধরণ। প্রথমে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ করা হয়, তারপরে ভিড় জমা করা হয় এবং শেষে, পুলিশ চাপে পড়ে গ্ৰেফতার করে। মানবাধিকার কর্মীদের কথায়, ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এখন সংখ্যালঘুদের উৎপীড়ন, ভয় দেখানো-হুমকি এবং তাঁদের সামাজিক রূপে বহিষ্কৃত করার একটি সহজ মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

No comments:
Post a Comment