বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে ওঠা অস্থিরতা, ভারতের জন্য বাড়ছে কৌশলগত ঝুঁকি - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday, December 16, 2025

বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে ওঠা অস্থিরতা, ভারতের জন্য বাড়ছে কৌশলগত ঝুঁকি

 


শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি নতুন ক্ষমতা কাঠামোর উত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট তীব্র মোড় নিচ্ছে। নতুন সরকার গঠনের সাথে সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে ভারতবিরোধী বক্তব্য তীব্রতর হয়েছে। এটি আর অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নেই বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। এই সমগ্র উন্নয়ন আবারও দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।


উত্তর-পূর্বাঞ্চল সম্পর্কে এনসিপি নেতার বক্তব্য এবং বিতর্কিত সতর্কীকরণ

ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লাহ সম্প্রতি একটি বিবৃতি দিয়েছেন যা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকে আরও গভীর করে তুলেছে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো প্রচেষ্টা সরাসরি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে প্রভাব ফেলবে। তিনি দাবি করেছেন যে এই অঞ্চল, যা সাধারণত সেভেন সিস্টার স্টেটস নামে পরিচিত, ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। এই বিবৃতিকে কূটনৈতিক মহলে উস্কানিমূলক বলে মনে করা হচ্ছে।

'চিকেন নেক' করিডোর এবং কৌশলগত সংবেদনশীলতা

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির ভৌগোলিক অবস্থান ইতিমধ্যেই অত্যন্ত সংবেদনশীল বলে বিবেচিত হয়। অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি করিডোরের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত, যা 'চিকেন নেক' নামে পরিচিত। এই সংকীর্ণ পথটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলস্বরূপ, বাংলাদেশি নেতাদের দেওয়া বক্তব্য শিলিগুড়ি করিডোর সম্পর্কে ভারতের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

ইনকিলাব মঞ্চ সমাবেশ এবং ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগের বাঁধ

"ইনকিলাব মঞ্চ" নামে আয়োজিত এক সমাবেশে হাসনাত আবদুল্লাহ ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি দাবি করেন যে ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপকারী শক্তি এবং ওসমান হাদির উপর হামলাকে সমর্থন করেছে। সীমান্তে বাংলাদেশি বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর জন্যও তিনি ভারতকে দায়ী করেছেন। নির্বাচনী হস্তক্ষেপের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা এই অভিযোগগুলিকে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছেন।

সাধারণ নির্বাচন এবং ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক বক্তব্য

বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরের মাত্রা ততই বাড়ছে। শেখ হাসিনার সমর্থকরাও নির্বাচনী লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এই পরিবেশে, বিরোধী দলগুলি তাকে বিদেশী শক্তির এজেন্ট হিসেবে চিত্রিত করার প্রচেষ্টা তীব্র করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য এই কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে, যার ফলে বাংলাদেশের নির্বাচন একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে উঠছে।

অস্থিরতা এবং আঞ্চলিক প্রভাবের সতর্কতা

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেছেন যে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে এর প্রতিক্রিয়া সীমান্তের বাইরেও অনুভূত হবে। তিনি দাবি করেছেন যে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরেও দেশটি বহিরাগত শক্তির নজরদারিতে রয়েছে। তার মতে, কিছু রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতার লোভে জাতীয় স্বার্থের সাথে আপস করতে পারে। এই ধরনের বাগাড়ম্বর আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

শেখ হাসিনার সমর্থকদের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ

এনসিপি নেতা শেখ হাসিনা এবং তার সমর্থকদের অর্থের বিনিময়ে জনগণকে বিভক্ত এবং কিনে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ভারতের দিকে তাকিয়ে ক্ষমতা চাওয়া যেকোনো শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এই বিবৃতি কেবল রাজনৈতিক আক্রমণ নয়, জাতীয়তাবাদী অনুভূতি উস্কে দেওয়ার প্রচেষ্টাও বলে মনে করা হচ্ছে। এই পুরো আলোচনায় রাজনৈতিক মেরুকরণ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।

ভারতের প্রতি সরাসরি সতর্কীকরণ এবং প্রতিশোধের কথা

হাসনাত আবদুল্লাহ ভারতকে সরাসরি সতর্কীকরণ জারি করে বলেন, যদি নয়াদিল্লি এমন শক্তিকে আশ্রয় দেয় যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, ভোটাধিকার এবং মানবাধিকারকে সম্মান করে না, তাহলে বাংলাদেশ প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ সমগ্র অঞ্চলে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিতে পারে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এটিকে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও গভীর করার লক্ষণ বলে মনে করেন।

ভারত-বিরোধী কণ্ঠস্বর এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

এনসিপি নেতাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সোচ্চার ভারত-বিরোধী কণ্ঠস্বর হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তিনি এর আগে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে তীব্র বক্তব্য দিয়েছেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, এই ধরনের বক্তব্য দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্বাচনী রাজনীতির পরে ভারসাম্য কীভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয় তার উপর নির্ভর করবে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad