![]() |
নদীয়া: 'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এক চোখে দুর্যোধন অন্য চোখে দুঃশাসন।দৃষ্টিতে দুর্যোগের ইঙ্গিত।' বৃহস্পতিবার দুপুরে কৃষ্ণনগরের জনসভা থেকে এই ভাষায় আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, "লজ্জা করে না যারা দেশে দাঙ্গা করে তারা নাগরিক। যারা শান্তি করে তারা নাগরিক না। এ কেমন বিচার। এত কিসের ক্ষুধা যে খেয়েও হচ্ছে না বাংলাকেও কি খেতে হবে।" এরপর জনগনের উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আপনারা কি বিজেপিকে কোলে স্থান দেবেন ? নাকি দেবেন না ? আপনারা কি বাংলায় থাকতে চান কি চান না? এ বিচার আপনাদের। আমি সবাইকে সসম্মানে রক্ষা করব।"
বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এসআই এর নাম করে এর এত তাড়াতাড়ি কিসের এত তাড়াহুড়া। হোয়াই ওয়াজ সো হাঙরি। সুস্থ বাঘের থেকে আহত বাঘ ভয়ংকর, মনে রাখবেন।"
তিনি বলেন, "বাইরে বসে থেকে বিজেপির মার খেয়ে লাভ নেই বাংলায় ফিরে আসুন। বাংলা এখন শিল্পের গতি শিল্পের মতি। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের যেমন সাহায্য করি পুরোহিত এমনি সাহায্য করে লোকশিল্পীদের সাহায্য করি। কেন্দ্র আমাদের টাকা পয়সা দেয় না আমরা নিয়মের বাইরে ধারণ নিতে পারি না। বিজেপি সমাজ মাধ্যমে যেটা করে সেটা এআই দিয়ে করে। আমার ছবি দিয়ে আমার গলা শোনাবে কিন্তু আমি নই। ওরা করতে পারে না এমন কোনও কাজ নেই। নেই কাজ তো খই ভাজ। চাল আমরা চাষীদের থেকে কিনে নেই সেই চালটাই রেশনের মাধ্যমে পৌঁছে দেই। এসআইআরে যারা মারা গেছে তাঁদের ২ লক্ষ করে টাকা দেব। বিজেপি দুই একজনকে দিয়ে সমাজ মাধ্যমে উল্টোপাল্টা কথা বলবে। কোন বিচার পাবেন না বিচারের জায়গাগুলো সব এজেন্সি দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। গণতন্ত্রে সব থেকে বড় শক্তি মানুষ। মানুষ নির্বাচিত করে সরকার নির্বাচন কমিশন নয়। বিজেপি একটা কমপ্লেন দিয়েছে, বিজেপির কমপ্লেনে কেন কাজ হবে। এটা আমার নির্বাচন কমিশনের কাছে ভদ্রতা করে প্রশ্ন। বিজেপির আইটি সেল আপনাদের ভোটার তালিকা তৈরি করে দেবে, সেই তালিকা অনুযায়ী আপনারা ভোট করবেন। বিহার পারেনি বাংলা পারবে। বিএসএফ সিআইএসএফ ইডি ইনকাম ট্যাক্স বিজেপিতে পরিণত করেছে। আমি ওদের সম্মান করি। আপনারা কি বাংলা ডিটেনশন ক্যাম্প চান ? আপনার নাম বাদক আপনি চান? বিজেপি বাংলাটা শেষ করে দিক আপনারা চান? বাংলা ভাষাকে স্তব্ধ করে দিক আপনারা চান? হিন্দু-মুসলিম ভাগ করে দেই কি এটা আপনারা চান। মতুয়াদের ভোটার থেকে বাদ দিয়ে কেটে আপনারা চান? রাজবংশীদের বাদ দিক আপনারা চান? বাংলায় থাকতে চান। বাংলা থেকে মানুষকে তাড়ালে কি করে নিয়ে আসতে হয় সেটা আমরা জানি।
মমতা বলেন, "এখানে একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন তিনি করতে পারেন না এমন কোন কাজ নেই। তার দুচোখ দেখলে মনে হয় ভয়ংকর দুর্যোগের বার্তা দূরে সোভন্দি। এক চোখে তার দুর্যোধন অন্য চোখে দুঃশাসন। তিনি বলে দেন এদেরকে সবাই বাংলাদেশি রোহিঙ্গা বলে বাদ দাও।"
তিনি বলেন, "দেশটাকে তো বিক্রি করে দিয়েছে, প্লেন কি চলছে ট্রেন তো লেট ভাড়ার পর ভাড়া বাড়াচ্ছে কোনো সুবিধা নেই। কিছু গদ্বার তো সব জায়গাতেই আছে। তারা আপনাদের টাকা নিয়ে আরও বেশি করে গাদ্দারী করবে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার মানুষের উপরে বিশ্বাস আছে।"
মমতা এদিন বলেন, "এনআরসি বাংলায় হবে না। ডিটেনশন ক্যাম্প বাংলায় হবে না। আপনারা হেয়ারিং এ যাবেন এবং ফাইট করবেন। আপনাদের যদি কোনও কাগজপত্র দরকার হয় আমরা সরকারের তরফ থেকে মে আই হেল্প ইউ বুথ তৈরি করে দিচ্ছি সেখান থেকে সাহায্য নেবেন। আমি সাত বারের সাংসদ, তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের আশীর্বাদে হয়েছি এরপর আমাকে প্রমাণ করতে হবে ওই দাঙ্গাবাজদের কাছে যে আমি নাগরিক কিনা! যারা মানুষের রক্ত নিয়ে নরমেধ যজ্ঞ করে তাদের কাছে প্রমাণ করতে হবে আমি এ দেশের নাগরিক কিনা! এ কোন ভারত যেখানে মনীষীদের অপমান করে। দেশের ইতিহাস জানে না, বাংলার ইতিহাস জানেনা কথা বলছে বাংলা জানেনা বাংলা দখল করছে। এদের এত লোক হয়ে গেছে, বাংলা দখল করার জন্য হয়েছে হ্যাংলা। জেনে-তেনো প্রকারনেও বাংলা দখল চাই।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, "নদিয়া জেলায় আগে কেউ রাজনীতি ছাড়া ফিরে তাকাত না। আমরা আসার পর উন্নতি হয়েছে। আমি ক্ষমতায় আসার পর মসলিন তীর্থ করেছি। এটা আমাদের গর্ব। কত সুন্দর শাড়ি তৈরি করে তারা।"
তিনি বলেন, "ওয়াকফ প্রোপারটি তার নিজস্ব আইন অনুযায়ী চলবে এটা কেউ দখল করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় সরকার তো চেষ্টা করবে। দেখছেন না এত খিদে যে তাড়াহুড়ো করে ভোটের আগে এসআইআর করছে যেখানে বলা হচ্ছে আধারকার্ড চলবে না। ব্যাংক সহ অন্যান্য সর্বত্র সরকারি কাজে আধার কার্ড চলবে। ভোট আর নাগরিকত্ব তে চলবে না।"
বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সারা দেশটাকে পরিণত করেছে বিজেপির দেশ হিসেবে। এসআইআরের নাম করে মা-বোনেদের অধিকার কাটবে।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, কি মা বোনেরা নাম কাটলে বাড়িতে সব জিনিসপত্র আছে তো যেগুলো দিয়ে রান্না করে। আপনাদের শক্তি আছে। নাম কাটলে ধরবেন তো? ছেড়ে দেবেন না তো ? মেয়েরা সামনে লড়াই করবে ছেলেরা পিছনে থাকবে। আমি দেখতে চাই মা বোনেদের শক্তি বড় নাকি বিজেপির শক্তি বড় ? আমি দেখতে চাই বাংলা দেখতে চায়। আমি পরিষ্কার করে বলছি, আমি সাম্প্রদায়িকতা কে বিশ্বাস করিনা কিন্তু আমি ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিশ্বাস করি। সব ধর্মকে নিয়ে চলতে চাই। সেক্যুলার পলিটিক্স করি বিজেপি নির্বাচন এলেই টাকা দিয়ে অন্য রাজ্যের লোক পাঠিয়ে কাউকে কাউকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে ভোট ভাগাভাগি চেষ্টা করে। বর্ণে-বর্ণে, ধর্মে-ধর্মে সাম্প্রদায়- সম্প্রদায় আমরা করি না।"
তিনি বলেন, " আমরা তো সবাই বাড়িতে গীতা পাঠ করি তার জন্য পাবলিক মিটিং করার কি আছে। দেবতা হৃদয়ে থাকে। যারা গীতা গীতা বলে চিৎকার করছে তাদের কাছে আমার একটা কথা জিজ্ঞাসা করব, শ্রীকৃষ্ণ ধর্মের নামে কি বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ধর্ম মানে হচ্ছে ধারণ করা। ধর্ম মানে পবিত্রতা। ধর্ম মানে মানবতা। মানে মনুষ্যত্ব। ধর্ম মানে শান্তি। ধর্ম মানে হিংসা নয় ভেদাভেদ নয়। ধর্ম মানে ভাগাভাগি করা নয়। বিজেপির বন্ধুরা যারা গীতা পাঠ করছেন আশা করি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন। এর উত্তর দেবেন। রামকৃষ্ণ স্বামী বিবেকানন্দ বলেনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেনি ধর্মের নামে ভাগাভাগি কর। তাহলে আপনারা কে ? এ দেশে। যাদের না আছে মাথা , না আছে ছাতা। একেক জন একেক রকম বলে যাচ্ছে। ভোট করছে লুট আর বলছে ঝুট। একবার করেছে নোট বন্দি এখন করছে ভোট বন্দি। যদি কোনও ভাবে বাংলাকে দখল করা যায় তাহলে সবাইকে এখানে তাড়িয়ে দিয়ে যাতে করে কেউ বাংলা ভাষার কথা বলতে না পারে স্বাধীনতা আন্দোলন অস্তিত্ব না থাকে। বাংলাটাকে শেষ করে দাও ধ্বংস করে দাও বাংলাটাকে উঠিয়ে দাও এটাই ওদের মনের চক্রান্ত। আপনারা কি চান আপনার অধিকার কেউ কেড়ে নিক?

No comments:
Post a Comment