প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১:৪৫:০১ : বিশ্ব এইডস দিবসে HIV/AIDS নিয়ে আবারও সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশে পরিবর্তিত জীবনযাপন, নিরাপদ যৌন সম্পর্কের প্রতি অবহেলা এবং সেক্স এডুকেশনের অভাবের কারণে সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সময়মতো টেস্টিং, সঠিক তথ্য এবং দায়িত্বশীল আচরণ গ্রহণ করলে এই রোগকে অনেকটাই রোখা সম্ভব।
ভারতে HIV/AIDS এর বাড়তে থাকা ইনফেকশনকে নিয়ে দেশের সিনিয়র চিকিৎসক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিশ্বের অনেক দেশ সময়মতো সচেতনতা এবং কমিউনিটি হেলথ প্রোগ্রামের সাহায্যে এই রোগকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করেছে, কিন্তু ভারত এখনও প্রয়োজনীয় সচেতনতা, শিক্ষা এবং প্রতিরোধের অভাবে দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছে। সতর্কতার সুরে তিনি বলেছেন, “যদি এখনই সমাজ এবং সরকার সজাগ না হয়, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মকে এর বড় মূল্য চুকাতে হবে।”
৭০–৮০-এর দশকে ইউরোপ ও আমেরিকায় আনপ্রোটেক্টেড সেক্সে HIV দ্রুত ছড়ালেও, সময়মতো সেসব দেশে শক্তিশালী হেলথ প্রোগ্রাম চালু হয়। ডা. র্যাইনার মতে, কমিউনিটি মেডিসিনকে গুরুত্ব দেওয়া এবং যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা—এই দুটোই পশ্চিমা দেশে সংক্রমণ কমাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিল।
এর বিপরীতে, ভারতে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ও পরিবর্তিত লাইফস্টাইলের কারণে যুবসমাজ ক্রমশ আনপ্রোটেক্টেড সেক্সে জড়িয়ে পড়ছে। গ্রাম থেকে শহরে আসা বা নতুন যৌনজীবন শুরু করা তরুণদের তথ্যের অভাবে ইনফেকশন দ্রুত ছড়াচ্ছে।
ডা. র্যাইনা বলেন, ভারতের বড় সমস্যা হল আজও সেক্সকে ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়। শিশু, যুবক, হেলথ ওয়ার্কার—এমনকি অনেক ডাক্তারও যথাযথ যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষা পান না।
তিনি বলেন, “যখন মানুষ প্রোটেকশন ব্যবহারই করে না, ইনফেকশন সম্পর্কে ধারণা নেই, আর সেক্সুয়াল হাইজিনের জ্ঞান নেই তখন রোগ ছড়ানো স্বাভাবিক। ২৫ বছর আগে মাসে কয়েকজন HIV রোগী দেখতাম এখন দিনে ১৫–২০ জন আসছেন।”
ডা. র্যাইনা তথ্য দিয়ে জানান, যদি কেউ অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পর ভুল বুঝতে পারে, তবে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডাক্তারকে দেখিয়ে PEP (Post Exposure Prophylaxis) শুরু করা যায়। ৩০ দিন এই ওষুধ নিলে HIV সংক্রমণ রুখে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু দেশে অধিকাংশ মানুষই PEP-এর নামও জানে না—কারণ সচেতনতা প্রোগ্রামের অভাব।
কন্ডোম শুধু HIV নয়, সিফিলিস, গনোরিয়া, হার্পিস, ক্ল্যামাইডিয়া—এমন বহু বিপজ্জনক রোগ থেকে রক্ষা করে।
তাই নিরাপদ যৌন সম্পর্ক ও একাধিক সঙ্গীর থেকে দূরে থাকা জরুরি।
ডা. র্যাইনা বলেন, "বিয়ের পর বহু দম্পতি জানতে পারেন যে একজনের আগেই HIV ছিল। মানুষ বিয়ের আগে কুণ্ডলী মেলায়, কিন্তু মাত্র ৪০০–৫০০ টাকার একটি টেস্ট বাধ্যতামূলক করলে বহু পরিবার ও জীবন বাঁচবে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, "HIV শরীর থেকে পুরোপুরি নির্মূল করার কোনো উপায় নেই। একবার হলে আজীবন ওষুধ, নিয়মিত চেকআপ, বিশেষ ডায়েট এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করতে হয়।"
ডা. র্যাইনার মতে, কলেজপড়ুয়া তরুণ ও হোমোসেক্সুয়াল কমিউনিটিতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা ৭২% পর্যন্ত বেশি। গুড টাচ–ব্যাড টাচ, নিরাপদ যৌন সম্পর্ক এবং শরীরচেতনায় শিক্ষা জরুরি।
অনেক দেশে HIV নিয়ে রাস্তায় র্যালি, ক্যাম্পেইন, ইভেন্ট হয়—
কিন্তু ভারতে বিষয়টি এখনও লজ্জা বা গোপনের মধ্যে রাখা হয়। ডা. র্যাইনার মতে শুধু একদিনের সচেতনতায় কাজ হবে না, স্বাস্থ্যশিক্ষায় যৌন সংক্রমিত রোগকে পুরো গুরুত্ব দিতে হবে।
WHO গাইডলাইন অনুযায়ী আধুনিক চিকিৎসা উপলব্ধ
আজ এমন প্রযুক্তি এসেছে
যেখানে মা–বাবা উভয়ই HIV পজিটিভ হলেও নিয়মিত ওষুধ নিলে শিশু HIV নেগেটিভ জন্মাতে পারে।
অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপিতে ভাইরাস এত কমিয়ে আনা যায় যে তা অন্যের শরীরে ছড়ায় না।
বাড়িতে HIV রোগী থাকলে কী করবেন?
যদি পরিবারের কোনো সদস্য HIV রোগী হন এবং অবস্থা গুরুতর হয়—
তার বাটি, কাপড়, তোয়ালে আলাদা রাখুন
তাদের ব্যবহৃত জিনিস–পত্র আলাদা রাখুন
তার খাবার শেয়ার করবেন না
নিয়মিত ডাক্তার দেখিয়ে অ্যান্টি-ভাইরাল থেরাপি দিন
উচ্চ প্রোটিন ডায়েট অত্যন্ত জরুরি
HIV-এর লক্ষণ অবহেলা করবেন না
নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করানো জরুরি—
বারবার অসুস্থ হওয়া
বারবার টাইফয়েড বা লুজ মোশন
দুর্বলতা ও ক্লান্তি
ওজন কমে যাওয়া
দীর্ঘদিন জ্বর
পরে সংক্রমণ বাড়লে TB, সিফিলিস, ক্ল্যামাইডিয়া, হার্পিস, HPV ইত্যাদি রোগও হতে পারে।
ডা. র্যাইনা বলেন, “একজন ডাক্তার হিসেবে হাতজোড় করে বলছি—এই বিষয়ে কথা বলুন, টেস্টিং বাড়ান, সেক্স এডুকেশনকে গুরুত্ব দিন, নিরাপদ সম্পর্ককে অভ্যাস করুন। আজই পদক্ষেপ নিলে পরবর্তী প্রজন্ম নিরাপদ থাকবে।”

No comments:
Post a Comment