কলকাতা, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৫:০১ : শনিবার সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুষ্ঠিত লিওনেল মেসিকে ঘিরে আয়োজিত ইভেন্টে চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও দুঃখপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাজার হাজার ফুটবলপ্রেমী ও সমর্থক প্রিয় তারকা মেসির এক ঝলক দেখার আশায় স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু বিপুল অর্থ ব্যয় করে টিকিট কাটার পরও মেসিকে দেখতে না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দর্শকরা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে শুরু হয় ভাঙচুর ও বোতল ছোড়াছুড়ি।
ঘটনার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "এই ঘটনার খবর শুনে আমি স্তম্ভিত ও ব্যথিত।" তিনি লিওনেল মেসি সহ সমস্ত ক্রীড়াপ্রেমী ও সমর্থকদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চান।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক্স-এ লেখেন, “আজ সল্টলেক স্টেডিয়ামে যে অব্যবস্থাপনা হয়েছে, তা আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত ও বিস্মিত করেছে। হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমী লিওনেল মেসির এক ঝলক দেখার জন্য সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। এই ঘটনায় আমি অত্যন্ত দুঃখিত।”
ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম কুমার রায়ের নেতৃত্বে এই কমিটিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্য বিষয়ক দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব থাকবেন। এই কমিটি ঘটনার প্রতিটি দিক খতিয়ে দেখে দায় নির্ধারণ করবে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।
শনিবার সকাল ঠিক ১১টা ৩০ মিনিটে ‘কলকাতা মেসি’-র গাড়ি যুবভারতীতে প্রবেশ করে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো দে পল। জনসমুদ্র দেখে হাসিমুখেই গাড়ি থেকে নামেন মেসি। তবে নামার পরই পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। মন্ত্রী, আধিকারিক, অতিথি ও আয়োজকদের ভিড়ে কার্যত ঘিরে ফেলা হয় আর্জেন্টিনার এই মহাতারকাকে। ছবি তোলার হুড়োহুড়িতে হাঁটার জায়গাও ছিল না।
যদিও নিরাপত্তারক্ষীরা মেসিকে ঘিরে রাখেন, তবু প্রায় ২০ মিনিট ধরে তিনি গ্যালারিতে দর্শকদের সামনে আসেননি। এতে দর্শকদের হতাশা চরমে ওঠে। গ্যালারিতে শুরু হয় ‘আমরা মেসি চাই’ স্লোগান। যাঁরা টিকিট কেটেছিলেন, তাঁরা স্টেডিয়ামের তিনটি বড় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, কিন্তু সেখানেও মেসিকে স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি।
মোহনবাগান ও ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন ফুটবলারদের সংবর্ধনা চলাকালীনও মেসির চারপাশে ভিড় কমেনি। রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রীর পাশাপাশি আয়োজকদের ঘিরে ধরার ফলে দর্শকরা মেসির এক ঝলকও দেখতে পাননি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও প্রধান আয়োজক শত্রুঘ্ন দত্ত মাইকে বারবার অনুরোধ জানান, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষ পর্যন্ত লাঠিচার্জ শুরু হয়।
সকাল ১১টা ৫২ মিনিটে মেসিকে স্টেডিয়াম থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহরুখ খান বা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় স্টেডিয়ামে পৌঁছননি। মেসি চলে যেতেই দর্শকদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছয়। শুরু হয় ব্যাপক ভাঙচুর গ্যালারির হোর্ডিং ভেঙে ফেলা হয়, চেয়ার ছুড়ে মারা হয় মাঠে। সেই সময় গ্যালারিতে পর্যাপ্ত পুলিশি উপস্থিতি ছিল না। মেসিকে দেখতে না পাওয়ার হতাশা ও ক্ষোভ মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

No comments:
Post a Comment