ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫: সারাদেশ যখন ডিজিটালাইজেশনের লক্ষ্যে ছুটছে, সেখানে ভারতেরই একটি রাজ্যের জেলার ১৫ টি গ্ৰামে লাগু করা হয়েছে এক অদ্ভুত নিয়ম। এখানে মেয়ে-বধূদের ক্যামেরাযুক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২১ শতকেও এমন কাণ্ডে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ঘটনাটি রাজস্থানের জালোর জেলার। চৌধরী সম্প্রদায়ের সুন্ধমাতা পট্টি পঞ্চায়েত ১৫টি গ্রামের বধূ এবং কন্যাদের ক্যামেরাযুক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নিয়ম ২৬ জানুয়ারী থেকে কার্যকর হবে।
পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত অনুসারে, মহিলারা এখন স্মার্টফোনের পরিবর্তে কেবল কিপ্যাড ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। বিবাহ অনুষ্ঠানে, সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং প্রতিবেশীদের বাড়িতে যাওয়ার সময়ও তাঁরা তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যেতে পারবেন না। খুব বেশি হলে ঘরের ভেতর তারা কিপ্যাড ফোন ব্যবহার করতে পারেন।
আরও বলা হয়েছে, বাড়িতে শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্য মোবাইল ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, যদি পড়াশোনার জন্য মোবাইল প্রয়োজন হয়, তাহলে তারা কেবল বাড়ির ভিতরেই ব্যবহার করতে পারবে, তবে তাদের বাড়ির বাইরে মোবাইল নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। গৃহবধূদের তো সেই ছাড়টুকু-ও মেলেনি; তাঁরা কেবল ঘরের মধ্যে কিপ্যাড মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন, কোনও রকম ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়া।
আর পঞ্চায়েতের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। এমনকি পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও শুরু হয়েছে।
রবিবার গাজীপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৪টি পট্টি (গ্রাম) সম্প্রদায়ের সভাপতি সুজানারাম চৌধরী এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। সম্প্রদায়ের সভাপতি জানান যে পঞ্চ হিম্মতরাম প্রস্তাবটি পড়ে শোনান। দেবরাম কর্নোলের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবটি রাখা হয়েছিল। আলোচনার পর, সমস্ত পঞ্চ এতে সম্মত হন। পঞ্চায়েতের এই সিদ্ধান্ত ভিনমাল জেলার গাজীপুরা, পাওয়ালি, কালদা, মনোজিয়াওয়াস, রাজিকাওয়াস, দাতলাওয়াস, রাজপুরা, কোডি, সিদ্রোদি, আলদি, রোপসি, খানাদেওয়াল, সাবিধর এবং হাতমি কি ধানী এবং খানপুর গ্রামে প্রযোজ্য হবে।
সুজানারাম চৌধরী বলেন যে, পড়াশোনা করা মেয়েরা প্রয়োজনে বাড়ির ভিতরে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে, তবে তাদের কোনও পাবলিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে এটি নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। কেন পঞ্চায়েতকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, তাও তিনি ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন যে, মহিলাদের মোবাইল ফোন থাকার ফলে শিশুরা মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার করে, যা তাদের চোখের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই কারণে, মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে পঞ্চায়েতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সমাজকর্মী এবং নারী অধিকার সংগঠনগুলি এটিকে নারীবিরোধী এবং একটি অত্যাচারী ডিক্রি বলে অভিহিত করেছে। অনেকেই এই ধরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবীও জানিয়েছেন।


No comments:
Post a Comment