প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:২০:০১ : ভারতের সামুদ্রিক শক্তি জোরদার করতে রাশিয়া আবারও এগিয়ে এসেছে। প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, রাশিয়া ভারতীয় নৌবাহিনীকে একটির বিনিময়ে তিনটি আপগ্রেড কিলো-ক্লাস ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন সরবরাহের প্রস্তাব করেছে। এই তিনটি সাবমেরিনের মোট খরচ এক বিলিয়ন ডলারেরও কম বলে অনুমান করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরের পর এই প্রস্তাবটি এসেছে। সেই সময়, দুই দেশ ২০২৮ সাল পর্যন্ত একটি আকুলা-ক্লাস পারমাণবিক সাবমেরিন লিজ নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা করেছে। ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে এই চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতীয় নৌবাহিনী বর্তমানে সাবমেরিনের ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছে। দেশের উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ৭৫আই পরিকল্পনায় বিলম্বের কারণে, এই রাশিয়ান প্রস্তাবটিকে তাৎক্ষণিক ত্রাণ হিসাবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়া ভারতকে যে কিলো-ক্লাস সাবমেরিনগুলি অফার করছে তা তার উদ্বৃত্ত মজুদ থেকে নেওয়া হবে। এগুলিকে আধুনিক প্রযুক্তিতে সম্পূর্ণরূপে আপগ্রেড করা হবে এবং তাদের পরিষেবা জীবন প্রায় ২০ বছর বাড়ানো হবে। প্রতিটি সাবমেরিনের দাম $৩০০ মিলিয়নেরও কম বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এই সাবমেরিনগুলির বিশেষত্ব কী হবে?
ক্লাব-এস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যা ২২০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার রেঞ্জের স্থল ও সমুদ্র লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে পারে।
স্টিলথ লেপ, যা শত্রু সোনার থেকে রক্ষা করবে।
স্বয়ংক্রিয় পেরিস্কোপ সিস্টেম।
লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি, যা সাবমেরিনকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সমুদ্রে থাকতে দেবে।
এই চুক্তিটি গত কয়েক বছরে অবসরপ্রাপ্ত সাবমেরিনগুলিকে প্রতিস্থাপন করবে, যার মধ্যে রয়েছে আইএনএস সিন্ধুরক্ষক, আইএনএস সিন্ধুবীর এবং আইএনএস সিন্ধুধ্বজ। সম্প্রতি, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ তারিখে, আইএনএস সিন্ধুঘোষকেও ৪০ বছর ধরে পরিষেবা দেওয়ার পরে নৌবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।
ভারতীয় নৌবাহিনীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে, ভারতে বর্তমানে ১৬টি প্রচলিত সাবমেরিন রয়েছে। যদি শীঘ্রই নতুন সাবমেরিন চালু না করা হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই সংখ্যা একক অঙ্কে পৌঁছাতে পারে, যা ভারত মহাসাগর অঞ্চলে ভারতের নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে ভারতের জন্য একটি বিশ্বস্ত প্রতিরক্ষা অংশীদার। পূর্বে, চক্রা পারমাণবিক সাবমেরিন লিজ নেওয়া হয়েছিল, যা ভারতকে মূল্যবান অভিজ্ঞতা প্রদান করেছিল। এই নতুন প্রস্তাবটি ভারতের মেক ইন ইন্ডিয়া এবং স্বনির্ভর প্রতিরক্ষা নীতিগুলিকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে, ভারতের পারমাণবিক সাবমেরিন কর্মসূচিও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। তৃতীয় পারমাণবিক সাবমেরিন, আইএনএস অরিধামান, চূড়ান্ত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং শীঘ্রই নৌবাহিনীতে কমিশন করা হতে পারে। এটি ভারতের সমুদ্র-ভিত্তিক পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করবে। রাশিয়ার এই প্রস্তাব কেবল ভারতীয় নৌবাহিনীর তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ করে না, বরং ভারত মহাসাগরে ভারতের কৌশলগত দখলকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

No comments:
Post a Comment