প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০০:০১ : আমাদের দেশে পূজা কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং আবেগে ভরা একটি ঘরের মতো পরিবেশ। এখানে, ভক্তরা কেবল ঈশ্বরকে স্মরণ করেন না, তারা তাঁকে পরিবারের সদস্যের মতো আচরণ করেন এবং তাঁর সেবা করেন। ভোগ দেওয়ার ঐতিহ্য এই অনুভূতির মধ্যেই নিহিত। প্রতিদিনের খাবার থেকে শুরু করে প্রধান উৎসব পর্যন্ত, ঈশ্বরকে বিভিন্ন খাবার নিবেদন আমাদের জীবনের একটি অংশ। কিন্তু এই সকলের মধ্যে সবচেয়ে বিশেষ নাম হল ছাপ্পান ভোগ। লোকেরা প্রায়শই জিজ্ঞাসা করে কেন ঈশ্বরকে কেবল ৫৬টি ভোগ নিবেদন করা হয়? অন্য কোনও সংখ্যা কেন নয়? এই প্রশ্নের উত্তর কেবল স্বাদ বা ঐতিহ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং প্রেম, ভক্তি এবং শ্রদ্ধার মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত একটি আকর্ষণীয় গল্পের মধ্যে নিহিত। কৃষ্ণ এবং গোকুলের মানুষের মধ্যে এই ঘটনাটি কেবল ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করে না বরং এটিও প্রমাণ করে যে আমাদের সংস্কৃতিতে, খাবার কেবল পেট ভরানোর উপায় নয়, বরং ভক্তির সবচেয়ে সহজ এবং সুন্দর রূপ। এই কারণেই, আজও, মন্দিরে ৫৬টি ভোগ নিবেদন জন্মাষ্টমী, অন্নকূট বা বিশেষ উৎসবের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।
ভগবানের উদ্দেশ্যে ৫৬টি ভোগের গুরুত্ব
১. ভোগ নিবেদনের ঐতিহ্য
ভগবানের উদ্দেশ্যে ভোগ নিবেদন ভারতের সবচেয়ে সাধারণ এবং প্রিয় ঐতিহ্যগুলির মধ্যে একটি। মানুষ পূজার সময় ফল, মিষ্টি, রান্না করা খাবার, অথবা ঘরে তৈরি সাধারণ খাবার নিবেদন করে। অনেক পরিবার প্রতিদিন সকাল বা সন্ধ্যার পূজার সময় ভোগ নিবেদন করে, আবার অন্যরা কেবল বিশেষ শুভ দিনেই তা করে। এই কারণেই ভোগকে কেবল খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, বরং ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার একটি রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২. ভগবানের উদ্দেশ্যে ৫৬টি ভোগ কেন, ৬০ বা ১০০ কেন নয়?
ছাপান্ন, বা ৫৬, কেবল একটি সংখ্যা নয়। এই সংখ্যাটি ঈশ্বরকে নিবেদিত ৫৬টি ভিন্ন খাবারের প্রতীক। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন কেবল ৫৬টি? কেন এই সংখ্যাটি পরিবর্তন হয় না? উত্তরটি নিহিত আছে কৃষ্ণের সাত দিন উপবাসের মাধ্যমে তাঁর ভক্তদের রক্ষা করার গল্পে। এই ঘটনার পর, গোকুলের লোকেরা ভগবানের প্রতি তাদের ভালোবাসা প্রকাশের জন্য একটি ঐতিহ্য শুরু করে, যা আজও একই ভক্তি সহকারে পালন করা হয়।
৩. ইন্দ্র ও গোবর্ধনের গল্প
কাহিনী অনুসারে, গোকুলের লোকেরা প্রতি বছর ভালো বৃষ্টিপাত এবং ফসলের জন্য ইন্দ্রের পূজা করত। কিন্তু বালকৃষ্ণ তাদের ব্যাখ্যা করেছিলেন যে আসল আশ্রয়স্থল হল গোবর্ধন পর্বত, কারণ এটি মেঘকে আটকে রাখে এবং বৃষ্টি ও খাদ্যের উৎস সরবরাহ করে। গোকুলের লোকেরা এতে রাজি হন, যা ইন্দ্রকে ক্ষুধার্ত করে তোলে।
ইন্দ্র সাত দিন এবং সাত রাত ধরে গোকুলের উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ করেন। গোকুলকে এই সংকট থেকে বাঁচাতে, কৃষ্ণ তাঁর কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পর্বত তুলে নিয়ে পুরো গ্রামকে আশ্রয় দেন। কৃষ্ণ এত দিন ধরে কিছু খাননি। এটি দেখে গোকুলের লোকেরা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছিল এবং মনে করেছিল যে কৃষ্ণের ক্ষুধাকে সম্মান করা উচিত। তাই তারা তাকে একদিনের খাবারের চেয়ে আট গুণ বেশি খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৪. ৫৬ সংখ্যাটি কীভাবে তৈরি হয়েছিল?
কিংবদন্তি অনুসারে, কৃষ্ণ দিনে একবার খেতেন। গোকুলের লোকেরা তাকে আট গুণ খাবার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেহেতু কৃষ্ণ টানা সাত দিন ধরে কিছু খাননি:
৮ (বার) × ৭ (দিন) = ৫৬
এই হিসাবটিই ছাপান্ন ভোগের ঐতিহ্যের মূল বলে মনে করা হয়। অতএব, ভক্তরা ভগবানকে ৫৬ ধরণের খাবার উৎসর্গ করেন: মিষ্টি, শস্য, পানীয়, খাবার, ফল, ডাল, সবকিছু।
৫. ৫৬ ভোগের তাৎপর্য
ছাপান্ন ভোগ কেবল খাবারের সংগ্রহ নয়। এটি সেই অনুভূতির প্রতীক যে ভক্তরা ভগবানকে তাদের নিজের পরিবার হিসাবে বিবেচনা করে শ্রদ্ধা করে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি খাবার কৃষ্ণের পছন্দ এবং তাঁর জীবনের সাথে সম্পর্কিত রুচির প্রতিনিধিত্ব করে। এই নৈবেদ্যকে ভক্তি, প্রেম এবং কৃতজ্ঞতার একটি সুন্দর রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অনেক মন্দির এবং বাড়িতে, এটি অত্যন্ত উৎসাহ, সঙ্গীত এবং ভক্তির সাথে নিবেদন করা হয়।

No comments:
Post a Comment