বাংলাদেশের সাথে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সমস্যা মোকাবিলায় কৌশলগত কিছু পরিবর্তন করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। গ্রেফতারের পরিবর্তে সৌজন্যের নিদর্শন হিসাবে এখন থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তৎক্ষনাৎ ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি)- এর হাতে হস্তান্তর করতে ‘সীমান্ত রক্ষী বাহিনী’ (বিএসএফ)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আগাম নানা ধরনের জটিলতা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর বাহিনীর দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের তরফে এরকম একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং যেগুলি খুব প্রশংসিতও হয়েছে।
অবৈধ ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে প্রতিনিয়ত বিএসএফ’এর হাতে আটক হন বাংলাদেশ নাগরিকরা। এরপর তাদের তুলে দেওয়া হয় স্থানীয় থানার পুলিশের হাতে। পরে ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট’, ‘পাসপোর্ট অ্যাক্ট’ সহ বিভিন্ন ধারার মামলা- শেষে আদালতের নির্দেশে তাদের প্রেরণ করা হয় কারাগারে। ভারতের এইসব বিচারাধীন বন্দির সংখ্যা কয়েক শতাধিক। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কারাগারগুলিতে এই বাংলাদেশি বন্দির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আইন অনুযায়ী একজন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাগারের সাজা হতে পারে। কিন্তু নানা আইনি জটিলতার কারণে কারাগারের মেয়াদ শেষেও দেশে ফিরতে সময় লেগে যায়। কেবল তাই নয়, কারাগারের রাখার জন্য বিশাল অঙ্কের অর্থও ব্যয় হয় এদের পিছনে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক আধিকারিক জানান, ‘আগে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর অবৈধভাবে ভারতের প্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে বাংলাদেশি নাগরিকদের আটক করতো বিএসএফ। এরপর পুলিশের হাতে তাদের তুলে দেওয়ার পর গ্রেফতার দেখানো হত এবং পরে কারাগারে নিক্ষেপ করা হত। কিন্তু বর্তমানে কোনও অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে আটকের পর দেখা হয় যে, ওই ব্যক্তি কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত আছেন কি না। প্রাথমিক জিজ্ঞাবাদে যদি দেখা যায় ওই ব্যাক্তি কোন অপরাধের সাথে যুক্ত নয়, তবে সেক্ষেত্রে তাকে বিজিবি’র হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। একাধিক ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভারতে বসবাসের পর নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার সময়ও তাদের আটক করা হচ্ছে এবং পরে তাদেরও বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
বিএসএফ-এর এক আধিকারিক জানান, ‘আগে নারী শিশু সহ বহু বাংলাদেশি নাগরিকদেরই ভারতীয় কারাগারে দিনের পর দিন কেটে যেত। এদের প্রায় সকলেই উন্নততর জীবনযাপন, র্যাগ পিকারস (কাগজ কুড়ানি), পরিচারিকা, বার ড্যান্সার, সেক্স ওয়ার্কার হিসাবে মুম্বাই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে আসত। কিন্তু কারাগারের মেয়াদ শেষেও বাংলাদেশ সরকার তাদের ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিহা প্রকাশ করার কারণে দেশে ফিরতে বহু সময় লেগে যেত, ফলে বাড়তো আইনি জটিলতা। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হত এবং তাদের পুশ ব্যাক করার জন্য বিএসএফ’কে নির্দেশ দিত আদালত। দুই দেশের দূতাবাসের অন্তর্ভুক্তি, প্রয়োজনীয় অনুমতি- সবমিলিয়ে একটি একটি দীর্ঘকালীন প্রক্রিয়া। কিন্তু এখন বিএসএফ’কেই সংশ্লিষ্ট বিষয়টিতে লিপ্ত হতে হবে এবং এটি সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক কাজেরই একটি অংশ হিসাবে দেখা হচ্ছে। ফলে বর্তমানে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা বা ভারত থেকে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার সময় কোন বাংলাদেশী নাগরিক ধরা পড়ার পর যদি দেখা যায় সেই ব্যক্তি কোন অপরাধমূলক কাজকর্মের সাথে যুক্ত নয়-তবে সেক্ষেত্রে সাথে সাথেই বিজিবি’র হাতে হস্তান্তর করা হচ্ছে।’
বিএসএফ’এর দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের এক সিনিয়র আধিকারিক জানান ‘আসলে বাংলাদেশ সরকার কখনওই মেনে নিতে চায় না যে, সে দেশের নাগরিকরা উন্নততর জীবনের লক্ষ্যে অবৈধভাবে ভারতে আসতে পারেন। এর থেকে ভাল উপায় হল আন্তর্জাতিক সীমান্তে কোন অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে ধরলেই তৎক্ষনাৎ বিজিবি’এর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাহিনীর মানবিক দিকটিও তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে। কারণ আমরা কখনও চাইনা যে একজন নিরপরাধ ব্যক্তি- যিনি কাজের সন্ধানে গিয়ে ধরা পড়েছেন- এমনকি সে যদি ভারতীয় নাগরিক নাও হয়- তিনি কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে সময় কাটাক।’
No comments:
Post a Comment