এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারী পর্যন্ত শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। গ্রুপ 'সি' এবং গ্রুপ 'ডি'-তে নিয়োগে এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই বিষয়ে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। হাইকোর্টের সিবিআই তদন্তের নির্দেশের পরে, রাজ্যের শাসক দলের মন্ত্রীরা কাঠগড়ায় বসেছেন এবং সিবিআই অফিসে ঘোরাঘুরি করছেন এবং এই সমস্ত সিদ্ধান্তের পিছনে কারা রয়েছে। তিনি হলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, যাঁর নির্দেশে বাংলার শিক্ষা জগতে দুর্নীতি ফাঁস হয়েছে। আসুন জেনে নেই তাদের সম্পর্কে-
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একসময় ডব্লিউবিসিএস অফিসার ছিলেন এবং এসএসসিতে আইনি অফিসার হিসেবে কাজ করতেন। তার পরিচয় একজন ব্যক্তি যিনি শৃঙ্খলা ভালোবাসেন এবং দুর্নীতির সাথে আপস করেন না। দুর্নীতির কারণে তাকে সেখান থেকে চলে যেতে হয়। তারপর আইন প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি। স্নাতকের পর তিনি পাঁচ বছর আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। এর পরে তিনি ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং 'এ' গ্রেডের কর্মকর্তা হন। তিনি উত্তরবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরে পদায়ন করেন। সেই সময় পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে জমি পাট্টা বণ্টন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই সময় এক পঞ্চায়েত সদস্য তার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। সে এটা সহ্য করতে পারেনি। তিনি অন্যভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২০০৯ সাল থেকে এসএসসির আইন কর্মকর্তা হন। গোটা রাজ্যে মামলার সংখ্যা, সব তথ্য তাঁর কাছে আসত। এটা তার বিচার বিভাগের অভিজ্ঞতা, যা এখন তার সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হচ্ছে। বিচারক হওয়ার পর তিনি আগে অন্যান্য মামলা পরিচালনা করতেন। তারপর শিক্ষা বিষয়ক মামলা দেখাশোনা শুরু করেন। সেখান থেকে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির বিষয়টি তার কাছে আসে। বিচারক অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দৃঢ়ভাবে বলেন, 'তুমি আমার মাথায় বন্দুক রাখতে পারো। আমি মরতে প্রস্তুত, কিন্তু কোনো দুর্নীতিতে আদালত কখনই নীরব থাকবে না।অনেকেই বলছেন, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শিক্ষকদের দুর্নীতি মেনে নিতে পারেন না। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত বীরভূমের নলহাটির সোমা দাসের বকেয়া ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্তও দিয়েছেন তিনি। এদিকে, তাঁর নির্দেশে সিবিআই শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তিনি যখন সিবিআইকে এসএসি নিয়োগ কেলেঙ্কারির তদন্ত করার নির্দেশ দেন, ডিভিশন বেঞ্চ তা স্থগিত করেছিল। সেই সময় নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল কলকাতা হাইকোর্টে। হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলী নিজে বেঞ্চের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গাঙ্গুলি।এর পর তৃণমূল সমর্থিত আইনজীবীরা তাঁকে আদালতে বয়কট করেন। আদালত চত্বরে হট্টগোল হলেও তিনি অনড় থাকেন। পরে ডিভিশন বেঞ্চও তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের অনুমোদন দেয়।
No comments:
Post a Comment