বর্তমান সময়ে সবাই চুলের নানা সমস্যায় ভুগে থাকে। খারাপ পরিবেশ হোক বা ভুলভাবে চুল পরিষ্কার করা, অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া বা স্প্লিট হেয়ার সমস্যা, চুল পড়ার পেছনে যে কোনো কারণ থাকতে পারে। কিন্তু এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো শরীরে পুষ্টি উপাদানের অভাব। হ্যাঁ, শরীরে পুষ্টির অভাব হলেই মানুষের চুল পড়া শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তির জানা উচিত চুল পড়ার পেছনে কোন পুষ্টি উপাদান দায়ী। আজকের নিবন্ধটি এই বিষয়ে। আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানাবো যে পুষ্টির অভাবে চুল পড়তে পারে। এর সাথে, আপনি এই পুষ্টির ঘাটতির কারণ এবং কীভাবে পূরণ করবেন সে সম্পর্কেও জানবেন। এর জন্য, আমরা নিউট্রিশনিস্ট এবং ওয়েলনেস এক্সপার্ট বরুণ কাত্যাল এবং কনসালটেন্ট ডার্মাটোলজিস্ট এবং স্কিন লেজার সেন্টার নয়ডার ডিরেক্টর ড. টিএ রানা শ্রী রাম সিং হসপিটাল অ্যান্ড হার্ট ইনস্টিটিউট নিউ দিল্লির পরামর্শ নিয়েছি৷ ইনপুট চাওয়া হয়েছে৷
1 - প্রোটিনের অভাব
চুলের জন্যও প্রোটিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন অবস্থায় শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হলে শুধু চুলই ভাঙতে শুরু করে না, চুল পড়াও শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে চুলকে সুস্থ রাখতে প্রোটিন একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। কাজু, বাদাম, সয়াবিন, দুধ, পনির, চিনাবাদাম, ডিম, মাছ, মুরগি, মাংস, মসুর ডাল ইত্যাদিতে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে এই জিনিসগুলি আপনার ডায়েটে যোগ করা যেতে পারে। তবে আমরা আপনাকে বলি যে অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, এটি সীমিত পরিমাণে সেবন করুন।
2 - আয়রনের ঘাটতি
মেনোপজের আগে মহিলাদের চুল পড়ার প্রধান কারণ আয়রনের ঘাটতি বলে জানা যায়নি। আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সহায়ক, যা চুলের ফলিকলে অক্সিজেন এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি বহন করতে সাহায্য করে। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে তা শুধু চুলের বৃদ্ধিই বন্ধ করে না বরং চুলকে পাতলা করে তুলতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, শরীরে কখন আয়রনের ঘাটতি হয়? তাই বলে রাখি শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় যখন একজন মানুষ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, সামুদ্রিক খাবার ইত্যাদি সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করতে পারে না। এ ছাড়া কিছু চিকিৎসাগত অবস্থা যেমন আলসারের সময় রক্ত ক্ষয়, কোলন ক্যান্সার ইত্যাদি, এসব সমস্যার কারণেও আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। মুরগির মাংস, ডিম, মসুর ডাল, কিডনি বিন, ছোলা, বাদাম, কুমড়ার বীজ ইত্যাদি খেলে আয়রনের ঘাটতি মেটানো যায়।
3 - ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব
ফ্যাটি অ্যাসিড স্বাস্থ্যকর চুল বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। ফ্যাটি অ্যাসিডের মধ্যে রয়েছে ওমেগা -3, যা পলিআনস্যাচুরেটেড। ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ চুলের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে, তাদের চকচকে করতে এবং শিকড়ের শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করতে পারে। এমন অবস্থায় শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি দেখা দিলে চুল পড়তে পারে। আসুন আমরা আপনাকে বলি যে সয়াবিন, আখরোট, চিয়া বীজ, শণের বীজ ইত্যাদির ভিতরে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।
4- ভিটামিন ডি এর অভাব
একজন মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। উল্লেখ্য যে চুলের ফলিকলগুলির বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান হল ভিটামিন ডি। আমরা সবাই জানি যে চুলের ফলিকল দেখতে খুব ছোট ছিদ্রের মতো। এই ক্ষুদ্র ছিদ্র থেকে নতুন চুল বের হতে থাকে। এমতাবস্থায় এই নতুন ফলিকলের সাহায্যে চুল ঘন হয় এবং পাতলা হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এই কারণেই ভিটামিন ডি চুল পড়া রোধ করে। কিন্তু শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কমতে শুরু করলে নতুন ফলিকল গজাতে পারে না এবং চুল পড়তে শুরু করে। আসুন আমরা আপনাকে বলি যে অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন ডি দেখা যায়।
5 - জিঙ্কের অভাব
শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি হলে চুল পড়ে যেতে পারে। আসুন আমরা আপনাকে বলি যে জিঙ্ক চুলের টিস্যুগুলির বৃদ্ধি এবং মেরামতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এটি ফলিকলের চারপাশে উপস্থিত তেল গ্রন্থিগুলিকে সঠিকভাবে কাজ করতে উদ্দীপিত করে। অন্যদিকে শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি থাকলে চুলের টিস্যুর কাজও কমে যেতে পারে। জিঙ্ককে আপনার খাদ্যের অংশ করতে, আপনি গমের জীবাণু, লাল মাংস, বুনো চাল, কুমড়ার বীজ, পালং শাক, ডাল ইত্যাদি যোগ করতে পারেন। নিরামিষাশীরা বাদাম, কাজু, মটর ইত্যাদিকে তাদের খাদ্যের অংশ করে তোলে।
6 - সেলেনিয়ামের অভাব
প্রসঙ্গত, শরীরে সেলেনিয়ামের ঘাটতির সমস্যা খুব কমই দেখা যায়। কিন্তু যখনই এই সমস্যা দেখা দেয় তা থাইরয়েডের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে শরীরে হাইপোথাইরয়েডিজম এবং চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
No comments:
Post a Comment