বিজেপির সংসদীয় বোর্ড পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থী করার ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছে কে হবেন পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী রাজ্যপাল? বিশেষ করে দুই বছর পর লোকসভা নির্বাচন। রাজ্যে ভালো ফল পেতে মরিয়া বিজেপি। এমতাবস্থায় সেখানকার রাজ্যপাল পদে কাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। বিজেপি সূত্রের একাংশের মতে, দলটি উত্তরপ্রদেশের একজন শিয়া মুসলিম নেতা মুখতার আব্বাস নকভির দিকে নজর রাখছে, যিনি রাজ্যসভা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে বাংলার বিজেপি বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বাবা তথা সাংসদ শিশির অধিকারীর নামও আলোচনায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, জগদীপ ধনখড়কে ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সাধারণত কোনও রাজ্যের রাজ্যপালের নাম চূড়ান্ত করার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। এই আলোচনা বাধ্যতামূলক না হলেও ফেডারেল কাঠামোতে এটি প্রচলিত।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধনখড়ের ক্ষেত্রে অভিযোগ করা হয়েছে যে, রাজ্যপাল হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণার পরে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যপালের নিয়োগের বিষয়ে অবহিত করার জন্য ফোন ককরলে খোলাখুলি ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে ধনখড়ের নিয়োগ নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক তিক্ততায় পৌঁছে যায়। ধনখড়ের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব আনা হয় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে তার ট্যুইটার অ্যাকাউন্টেও ব্লক করেছিলেন। তিনি বারবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে তাঁকে সরানোর দাবী জানিয়েছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগে ধনখড়কে সরিয়ে কেন্দ্র তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। প্রশ্ন হল আগামী দিনে যে নতুন রাজ্যপাল আসবেন, তিনি কি ধনখড়ের মতো তৃণমূল সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পথ অনুসরণ করবেন, নাকি বোঝাপড়ার নীতি গ্রহণ করবেন। বিজেপি সূত্রে খবর, এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন নকভি। তিনি একজন সিনিয়র নেতা। তিনি বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময়ের সহকর্মীও ছিলেন। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নকভি আরও দক্ষ এবং বুদ্ধিমান।
অনেক রাজনীতিবিদ বিশ্বাস করেন যে, ধনখড় যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খোলাখুলি বিরোধিতা করতেন, সে পথে তিনি হাঁটবেন না। এছাড়া নকভির ওপর সরাসরি আক্রমণ রাজ্যের সংখ্যালঘু ভোটে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও এই ইস্যুটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অস্বস্তিতে ফেলবে, বিজেপির অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, নকভিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল করা রাজ্যের মুসলমানদের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা পাঠাতে পারে।
No comments:
Post a Comment