সম্রাট আকবর প্রিন্স সেলিমকে খুব ভালোবাসতেন, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেলিমের স্বভাব পরিবর্তিত হয়েছিল। সেলিম ও আকবরের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় ক্ষমতা দখলের জন্য এবং তাদের অভ্যাসের কারণে। এমন একটা সময় এসেছিল যখন দুজনের মধ্যে এমন দূরত্ব তৈরি হয়েছিল যে তার পিতা মুঘল সম্রাট আকবরকে বিষ দেওয়ার বিষয়টিও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়। চলুন জেনে নিই পুরো ঘটনা-
আকবর ১৫৮৫ সাল পর্যন্ত তার ছেলেদের নিয়ে খুশি ছিলেন। তিনি তার ছেলেদের পদোন্নতি দেন। এই সময়টা ছিল যখন সেলিমকে বাবা আকবরের বেশ আস্থাভাজন বলে মনে করা হত, কিন্তু এই সময় থেকেই দুজনের মধ্যে তিক্ততা শুরু হয়। আধুনিক ইতিহাসবিদ ডক্টর বেণীপ্রসাদের মতে, রাজনৈতিক প্রচারের কুয়াশা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেলিমের অভ্যাসের কারণে আকবরের মন খারাপ হতে থাকে।
আকবর দক্ষিণে যেতে শুরু করলে সেলিমের হাতে উত্তর ভারত পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং তাকে মেওয়ার আক্রমণের নির্দেশ দেন। কিন্তু সেলিম তার বাবার আদেশ অমান্য করে বিদ্রোহ করেন। শীঘ্রই সেলিমের এই বিদ্রোহ আকবর প্রশমিত করেন এবং তার ছেলের অপরাধ ক্ষমা করেন।
সেলিম ১৫৯১ সালের মধ্যে সিংহাসন পেতে আগ্রহী ছিলেন এবং সম্রাট আকবর একই বছর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সমসাময়িক ঐতিহাসিক বদায়ুনী যুবরাজ সেলিমকে একজন রাজকীয় হাকিমের মাধ্যমে সম্রাট আকবরকে বিষ প্রয়োগের জন্য অভিযুক্ত করেন। তবে এই পয়েন্টের বিরোধিতা করেছেন ইতিহাসবিদ ডক্টর বেণী প্রসাদ।
আকবর পুত্রের বিদ্রোহ দমন করলেও সেলিম সিংহাসনের জন্য লড়াই চালিয়ে যান। সেলিম এলাহাবাদে দরবার শুরু করেন। আকবর ১৬০১সালে বিদ্রোহ সম্পর্কে তথ্য পেয়ে দক্ষিণ বিজয় শেষ করে ফিরে আসেন। আকবর আগ্রায় খবর পান যে সেলিম তিন হাজার ঘোড়সওয়ার নিয়ে রাজধানীর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, কিন্তু এরই মধ্যে সেলিমের কাছ থেকে একটি চিঠিও সম্রাট পেয়েছিলেন। তিনি সম্রাটের সামনে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি চেয়ে চিঠিতে লিখেছিলেন যে কিছু লোক তার মনে সন্দেহ তৈরি করেছিল। এ কারণে তিনি সামনে যেতে ভয় পান। সম্রাট যখন এই অবস্থা জানতে পারলেন, তখন তিনি রাজপুত্রকে একা দেখা করার নির্দেশ দেন।
তার বার্তায় আকবর লিখেছেন, সন্দেহ হলে এলাহাবাদে ফিরে যান। অন্তর শান্ত হলে আদালতে হাজির হও। সেলিম যথাসময়ে সম্রাটের কাছে ক্ষমা চাইলেন। এর পরই আকবর সেলিমকে বাংলা ও উড়িষ্যার সুবেদার নিযুক্ত করেন। সেলিম এবারও বিদ্রোহ উড়িয়ে দিলেন। আকবর এ খবর পেয়ে বন্ধু আবুল ফজলকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও সেলিম পথে ফজলকে হত্যা করে।
No comments:
Post a Comment