রানি রাসমণির বাড়ির পুজোর ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি। এই বাড়ির সঙ্গে নাম জড়িয়ে আছে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির। ১৯৮৭ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন রানি রাসমণি। ইতিহাস অনুসারে এ পরিবারে কালী পুজো শুরুর আগে থেকেই প্রচলন ছিল দুর্গা পুজোর। এই পুজোর সূচনা ১৭৯০ সালে রানি রাসমণির শ্বশুর প্রীতিরাম দাস করেন। প্রীতিরাম দাসের মৃত্যুর পর এই পুজোর দায়িত্বভার দেওয়া হয় রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্রের উপরে।
স্বামীর মৃত্যুর পর ১৮৩৭ সাল থেকে এই পুজোর দায়িত্ব গ্রহণ করেন রানি রাসমণি। রাসমণি দেবী যে জমিদারি এবং দুর্গা পুজোর দায় দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, সেই পুজো আজ ভেঙে তিন টুকরো। রানির কোনও পুত্র সন্তান না থাকায় মেয়ে-জামাইদের মধ্যে পুজো ভাগ করে দেওয়া হয়। এই বাড়িতে মেয়ের জামাইরাই পুত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। রানি রাসমণির বাড়ির দুর্গা প্রতিমায় কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। এই বাড়ির প্রতিমা মৃৎশিল্পীরা তৈরি করেন না, প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব থাকে বীরভূমের চিত্রকরদের উপর।
ছাঁচে তৈরি নয় মূর্তি বানানোর গোটা কাজটা হয় হাতে পুজোর সময় বাড়িতে আমিষ রান্না হয় না। বাড়ির সকল সদস্যরাই প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত নিরামিষ খান। এ বাড়িতে দুর্গা পুজো শুরু হয় প্রতিপদ থেকে। এখানে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। ভোগ হয় লুচি, মিষ্টান্নের। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে কুমারী পুজো হয় এখানে।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে যে পুজো হয় সেই পুজোর দায়িত্বে থাকে হাজরা পরিবার। এটি কলকাতার বিরল ভবন, যার ঠিকানা দুটি। এই এস এন ব্যানার্জি রোডের প্রবেশদ্বার দিয়ে পা রাখলে আবার সামনে পড়ে আর একটি পুজো। সেটির তত্ত্বাবধানে আছে চৌধুরী পরিবার। রাস্তার ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আছে রানি রাসমণির সুবিশাল বসতবাড়ি, রানি রাসমণি ভবন। বিশ্বাস পরিবারের পরিচালনায় সেখানে ঠাকুরদালানে আয়োজিত হয় এই পরিবারের তৃতীয় দুর্গা পুজো।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে এই বাড়ির দুর্গা পুজোয় ছাগ বলি প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবর্তে আখ, চালকুমড়ো ইত্যাদি বলি হয়। দশমীর দিনেই বিসর্জন হয় নিয়ম মেনে।
No comments:
Post a Comment