দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বুধবার ২৫ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ খানের ছবি পাঠান। অনেক শহরে ছবিটি ব্যাপক উৎসাহের সাথে গ্রহণ করা হলেও কিছু জায়গায় হিন্দু সংগঠনের বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছে পাঠান। ইন্দোরে বজরং দলের বিক্ষোভের জেরে ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো বাতিল করতে হয়েছে। এখানে সিনেমা হলের বাইরে হনুমান চালিসা পাঠ শুরু করেন বজরং দলের কার্যকর্তারা। বিহারের ভাগলপুরেও ছবিটির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হচ্ছে কর্ণাটকের শহরগুলোতে। বেঙ্গালুরু, বেলাগাভি, কালবুর্গিতে পাঠান ছবির তীব্র বিরোধিতা করা হচ্ছে।
শাহরুখ খানের ছবি পাঠান-এর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। হিন্দু সংগঠনগুলি ইন্দোরের প্রেক্ষাগৃহে তীব্র প্রতিবাদ করেছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যকর্তারা টকিজের সামনে হনুমান চালিসা পাঠ করেন। হিন্দু সংগঠনের কার্যকর্তারা লাঠিসোটা নিয়ে হাজির হন শো বন্ধ করতে। অন্যদিকে, গোয়ালিয়রেও সিনেমা হলের বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক সিনেমা হল থেকে ছবিটির পোস্টারও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
বিহারের ভাগলপুরে পাঠান ছবির বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দলের কার্যকর্তারা তোলপাড় সৃষ্টি করে। তারা সিনেমা হল প্রাঙ্গণে ধর্নায় বসে স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতেই ভাগলপুরে পাঠান ছবির পোস্টার ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মীরা বলছেন, সনাতন ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর সহ্য করা হবে না।
সিনেমা হলের ম্যানেজার জানান, বিক্ষোভের কারণে দর্শকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ ছবিটি দেখতে আসছেন না। সিনেমা হলের ভেতরেও বেশির ভাগ সিট খালি। প্রশাসনের কাছে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানহানি ও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়েরের দাবী জানান তিনি।
কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু, বেলাগাভি, কালবুর্গি থেকেও পাঠানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। বেঙ্গালুরুতে শত শত বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায় ছবিটির বিরুদ্ধে। বেলাগাভিতেও সিনেমা হলের বাইরে বিক্ষোভকারীরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এ সময় আন্দোলনকারীরা ছবিটির পোস্টারও ছিঁড়ে ফেলে। এরপরই তৎপর হয় পুলিশ। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ।
কালবুর্গিতে ছবিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন হিন্দু জাগরণ বেদিকার কার্যকর্তারা। বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সব সিনেমা হলের বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। বেঙ্গালুরুতে ছবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আসা এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'আমরা ছবিটি বয়কট করছি। ছবিটি দেশবিরোধী। শাহরুখ খান যদি এখানে থাকতে ভয় পান, তাহলে তার উচিৎ অন্য দেশে চলে যাওয়া।'
অন্যদিকে, কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে মুম্বাইতে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। ছবিটি মুক্তি না দেওয়ার হুমকি দেওয়া বজরং দলের কার্যকর্তাদের নোটিশ পাঠিয়েছে মুম্বাই পুলিশ। উল্লেখ্য, বজরং দল সহ সমস্ত হিন্দু সংগঠনগুলি ছবিটি মুক্তি না দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। এরপর প্রেক্ষাগৃহের বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থার যাতে অবনতি না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পুলিশি নিরাপত্তায় ছবিটি মুক্তি দেওয়া হয়।
উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরে পাঠান ছবিটি নিয়ে দর্শকদের মধ্যে উৎসাহ দেখা গেছে। অনেক জায়গায় বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বুলন্দশহরের সিনেমা হলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে, নগরীতে কোনও ধরনের প্রতিবাদের ঘটনা প্রকাশ্যে আসেনি।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র শ্রীরাজ নায়ার বলেন, পাঠান ছবির বিরুদ্ধে হিন্দু সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করেছে। এরই চাপে সেন্সর বোর্ড ছবিটিতে পরিবর্তন এনে অনেক দৃশ্য কেটে দিয়েছে। আমরা ছবিটির প্রযোজকদের অনুরোধ করছি ভারতের সংস্কৃতি ও ভারতের সভ্যতার কথা মাথায় রেখে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে। পাঠান সিনেমা দেখবেন, কি দেখবেন না সেটা আমরা দর্শকের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।'
No comments:
Post a Comment