রাস্তার বেহাল দশা, আর সেই কারণেই স্কুলে কমছে পড়ুয়ার সংখ্যা, দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে গিয়ে এমনই অভিযোগ শুনতে হল বিধায়ককে। আর এই অভিযোগ করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বয়ং। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার বেড়াবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচিতে দিদির দূত হয়ে যান বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় এবং আমডাঙার বিধায়ক রফিকার রহমান।
এদিন আমডাঙার বিধায়ক বেড়াবেড়িয়া ভাগীরথী আদর্শ বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, স্কুলে আসার রাস্তার বেহাল দশা, একাধিকবার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। তাঁর দাবী রাস্তা খারাপের জন্যই স্কুলে দিন দিন পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। প্রধান শিক্ষক সহ এলাকার মানুষজন এদিন দিদির দূতের সামনেই ক্ষোভ উগরে দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা অনিতা সরকার বলেন, 'সরকার ঠিক না করলে কী করব! রাস্তা নিয়ে অনেক সমস্যা। স্কুলে যাতায়াতে পড়ুয়াদের অসুবিধায় পড়তে হয়, জল জমে থাকে। এখন বৃষ্টি নেই তাই অসুবিধা হয় না। বর্ষার সময় জল জমে থাকে, তখন খুব সমস্যা হয়। তাই রাস্তাটা সারাই করা খুবই প্রয়োজন। বিধায়ক বলেছেন, দেখি কী করা যায়।'
প্রধান শিক্ষক পার্থ প্রতিম বেরা বলেন, 'আগে আমাদের স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা ১২০০ ছিল, এখন ১০০০-এর কাছাকাছি। স্যারকে বললাম তিনি আশ্বস্ত করেছেন, টেন্ডার হয়ে গেছে, রাস্তার কাজও শুরু হবে। কিন্তু বেহাল রাস্তার জন্য পড়ুয়াদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে কীভাবে? এর কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, পড়ুয়াদের অনেকেই ৬-৭ কিমি দূর থেকে আসতে হয়, এত দূর থেকে কীভাবে আসবে, এই রাস্তায় গাড়ি চলে না।'
তিনি জানান, বেড়াবেড়িয়ার যে পঞ্চায়েত, সেই বোর্ড গঠন না হওয়ায় এখানে যে ম্যাজিক রুট ছিল, সেটাও প্রায় ৪-৫ বছর বন্ধ হয়ে আছে। তিনি বলেন, 'সেই ব্যাপারেও আমরা আজ প্রোপোজাল দিয়েছি লিখিত আকারে, যাতে এটা করা যায়। এতে এলাকার সার্বিক উন্নতির সাথে সাথে স্কুলের উন্নতিও হবে।' প্রধান শিক্ষক জানান, বিধায়ক আশ্বস্ত করেছেন রাস্তার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের ব্যাপারে যে কথা জানিয়েছেন সেই কাজও হয়ে যাবে।
অপরদিকে বিধায়ক রফিকার রহমান বলেন, 'বেড়াবেড়িয়া বোর্ডের সাথে এর কোনও সম্পর্ক নেই। বোর্ড না থাকা সত্ত্বেও কাজ বেশি হয়েছে। কারণ তিন বছরের আটকে থাকা টাকা অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মিটিংয়ে দিদি বলে দেওয়ার পর প্রায় ৪ কোটি টাকার কাজ আমরা করে দিয়েছি। আর যে রাস্তা হচ্ছে না, সেটা জেলা পরিষদের রাস্তা। ইতিমধ্যেই টেন্ডার হয়ে গিয়েছে, এটুকু বলতে পারি।'
রাস্তার জন্য ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমছে, প্রধান শিক্ষকের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমছে রাস্তার কারণে, এটা মান্য কারণ হতে পারে। কিন্তু সমস্ত স্কুলে ছাত্রছাত্রী কমছে, তার কারণ প্রাইভেট স্কুল গুলোর ছাত্র সংখ্যার গতি বেড়েছে। অভিভাবকরা, এমনকি যিনি হাইস্কুলের শিক্ষকতা করেন, তিনিও তার সন্তানকে প্রাইভেট স্কুলে দিয়ে হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতে আসেন। এটাও একটা কারণ।'
তিনি বলেন, 'আর যে রুট চলছে না, সেটাও অবশ্যই একটা কারণ। কিন্তু আমার মনে হয় আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে, বড়গাছিয়া বাজার থেকে হসপিটাল মোড় ৫ কিমি রাস্তা ইতিমধ্যেই মেইনটেনেন্স টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। কাজও শীঘ্রই হয়ে যাবে।'
অপরদিকে বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় জানান, প্রধান শিক্ষক যখন অভিযোগ করেছিলেন তিনি সেখানে ছিলেন না। তবে এই অভিযোগ যদি করে থাকেন, তার উত্তর দিয়েছেন বিধায়ক রফিকার রহমান।
তাপস রায় বলেন, 'আমাদের 'দিদির সুরক্ষা কবচ' বা 'দিদির দূত' কর্মসূচিটাই অভিযোগ শোনার জন্য। আমরা শুনব, ওরা বলবে, কী হয়েছে বা হয়নি এবং সেগুলো যথাযথ জায়গায় পৌঁছে দিয়ে তার সমাধানকল্পে এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। পূর্বে এই ধরণের কর্মসূচি কেউ কখনও করেনি বা ভাবেনি আর মানুষেরও বলার সুযোগ ছিল না। এই যে প্রধান শিক্ষক বিধায়ককে বললেন, এটা কী আগে কেউ ভেবেছিল!'
রাস্তা খারাপের জন্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে, এই প্রসঙ্গে বরানগরের বিধায়ক বলেন, 'রাস্তার জন্য নয়, আগে আমাদের সন্তানসন্ততিদের সংখ্যা ছিল বাড়িতে ৮-১২ জন, এখন একটি বা দুটি। এমনকি দুটি সন্তানও খুব কম লোকের। সুতরাং তারা মোটামুটিভাবে একটু বেটার স্কুল বা ইংরেজি মাধ্যমে চলে যাচ্ছে। তার জন্যই শুধু এখানে নয়, বাংলার বহু স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমেছে। রাস্তা বেহাল বলে এটা আমি মনে করি না।'
পাশাপাশি তিনি বলেন, 'রাস্তাঘাটে উন্নয়নের ব্যাপারে আমরা সত্বর সমাধানে যাচ্ছি এবং অনেকগুলো টেন্ডার হয়েও গেছে, হয়েও যাবে। কিন্তু তারপরও আমি খোঁজ নিতে আসব, যদি এটা বলে থেকে থাকে, সেদিন সংবাদমাধ্যমকেও নিয়ে আসব যে রাস্তাঘাটের হাল বদলালে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাটা বেড়েছে কিনা।'
No comments:
Post a Comment