বাড়ি, অফিস ও বিড়ি কারখানায় তল্লাশি এবং কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পর এবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুরের তৃণমূল বিধায়ক জাকির হুসেনকে কলকাতায় তলব করল আয়কর দফতর। তাকে আগামী সপ্তাহে হাজির হতে বলা হয়েছে। সঙ্গে আনতে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরের আয়ের কাগজপত্র ও ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র। শুধু জাকির হুসেনই নন, কলকাতার মেয়র পরিষদের সদস্য আমিরুদ্দিন ববিকেও তলব করেছে আয়কর দফতর। অপরদিকে দলীয় বিধায়কের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে এক হাত নিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন।
বুধবার মুর্শিদাবাদে হানা দেন আয়কর দফতর আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, জাকির হোসেনের বিড়ি কারখানা থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা। বাড়ি থেকে এক কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে, এছাড়া আরও তিনটি বিড়ি কারখানা থেকে চাল সহ দুই কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ২৮টি জায়গায় হানা দিয়েছে আয়কর বিভাগ।
তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন প্রাক্তন মন্ত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে বলেছেন, “একজন ব্যবসায়ী যদি তার কর ঠিকমতো দেন তবে বাড়িতে টাকা রাখতে ক্ষতি কী? ইডি-কে যদি বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হলে তাদের বাড়ি থেকে প্রচুর টাকা উদ্ধার হবে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। তৃণমূল বিধায়ক জাকির হুসেনকে একটি সংবাদ সম্মেলন করার সুযোগ দেওয়া হত কিন্তু তারা কেবল তার ভাবমূর্তি নষ্ট করছে, এটি অনৈতিক এবং লজ্জাজনক।”
আয়কর দফতরের মতে, তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেন আয়কর দফতরে যে নথি জমা দিয়েছেন তা সন্তোষজনক। সন্তোষজনক জবাব না পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাকিরের বিড়ি কারখানা ছাড়াও আমিরুদ্দিন ববির হোটেলেও অভিযান চালায় আয়কর বিভাগ। প্রায় ৩৫ ঘন্টা ধরে চলে তল্লাশি। সেখান থেকে অনেক নথিও উদ্ধার করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কলকাতা পুরসভার মেয়র কাউন্সিল আমিরুদ্দিন ববিকেও তলব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে তিনি কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কাউন্সিলর। ইকবাল আহমেদ যখন ডেপুটি মেয়র ছিলেন, তখন আমিরুদ্দিন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে রাজনৈতিক মহলে পরিচিত ছিলেন। মেয়র হওয়ার আগে থেকেই তিনি ব্যবসায়ী। তবে, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ার পর পার্ক সার্কাস, মল্লিকবাজার, নিউমার্কেট এলাকায় তার ব্যবসা ও পরিবহন ব্যবসা বেড়েছে। তার হোটেল ব্যবসা কলকাতার বাইরে অন্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। এবার আমিরুদ্দিন ববিকে তলব করেছে আয়কর দফতর। তাকে সব কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
বুধবার আয়কর আধিকারিকরা তৃণমূল বিধায়ক জাকিরের বাড়ি, অফিস এবং কারখানায় অভিযান চালিয়ে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে। পরে বৃহস্পতিবার, কেন্দ্রীয় কার্যালয় বিধায়কের বাড়ি থেকে ১১ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে বলে দাবী। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অফিস ও বাড়ি থেকে মোট ১৫ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠেছে, বিধায়ক এত নগদ টাকা পেলেন কী করে? বিধায়ক অবশ্য শুক্রবার বলেন, কীভাবে অর্থ এসেছে তার ব্যাখ্যা তাঁর কাছে রয়েছে। তিনি তাঁর নথিও আয়কর বিভাগের কাছে হস্তান্তরও করবেন।
কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী জাকিরের সঙ্গে গরু চোরাচালান মামলার প্রধান অভিযুক্ত এনামুল হকের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। যদিও জাকিরের বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধারের ঘটনায় জঙ্গিপুর বিধায়কের পাশে দাঁড়িয়েছে শাসক তৃণমূল।
এমনকি তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন যে, "জাকির হোসেন শুধু একজন বিধায়কই নন, একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীও। বিড়ি শিল্প থেকে কৃষিভিত্তিক শিল্পের সাথে তাঁর সংযোগ রয়েছে। কে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, একজন ব্যবসায়ী বাড়িতে নগদ রাখতে পারবেন না? যেখানে তাকে শ্রমিকদের নগদে বেতন দিতে হয়।"
No comments:
Post a Comment