প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ওপর বিবিসির ডকুমেন্টারি (তথ্যচিত্র) প্রদর্শনের ঘোষণা দেয় জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) শিক্ষার্থীরা। আর সেই নিয়েই মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দিল্লীর জেএনইউ ক্যাম্পাসে তোলপাড়। স্ক্রিনিংয়ের আগেই ছাত্র ইউনিয়ন অফিসে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গেই পাথর ছোঁড়ার দাবীও করা হচ্ছে। অভিযোগ, এবিভিপি ও বামপন্থী ছাত্রদের মধ্যে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে ইন্টারনেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিন বামপন্থী পড়ুয়ারা স্টুডেন্ট অ্যাক্টিভিটি সেন্টারের লনে সরকার-নিষিদ্ধ ডকুমেন্টারি 'ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন'-এর স্ক্রিনিং করে। কিন্তু স্ক্রিনিংয়ের আগে ক্যাম্পাস বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ। এরপর শিক্ষার্থীরা মোবাইল টর্চের আলো এবং একে অপরকে মোবাইলে লিংক শেয়ার করে ল্যাপটপ-মোবাইলে ডকুমেন্টারি দেখা শুরু করে। জেএনইউ স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভাপতি ঐশী ঘোষ অভিযোগ করেছেন যে, এবিভিপি-র ছাত্ররা এই সময়ের মধ্যে তাকে পাথর ছুঁড়েছে। হট্টগোলের খবর পেয়ে পুলিশও ক্যাম্পাসে পৌঁছায়। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বসন্ত কুঞ্জ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
ঐশী ঘোষ বলেন, “এবিভিপি পাথর ছুঁড়েছে। তা সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা ছবিটির প্রদর্শন প্রায় শেষ করেছি, আমাদের অগ্রাধিকার এখানে বিদ্যুৎ পুনরুদ্ধার করা। আমরা ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি। পুলিশ তদন্ত করবে বলে আশ্বাস দিয়েছে। যারা আহত হয়েছেন তারাও চিকিৎসা শেষে আগামীকাল থানায় তাদের বক্তব্য রেকর্ড করবেন। আমরা জেএনইউ প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ করব।
একই সঙ্গে, এই গোটা বিতর্কে দিল্লী পুলিশ বলছে, JNU-এর কোনও বিভাগ থেকে অভিযোগ পেলে উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেএনইউ প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়ার সাপ্লাই লাইনে মারাত্মক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। আমরা তা তদন্ত করছি। প্রকৌশল বিভাগ বলছে দ্রুত সমাধান করা হবে।"
জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (জেএনইউএসইউ) অফিসের বাইরে ডকুমেন্টারি দেখার জন্য জড়ো হওয়া পড়ুয়ারা দাবী করেন, তারা যখন তাদের ফোনে এটি দেখছিল তখন তাদের দিকে পাথর ছুঁড়ে মারা হয়। তবে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন আধিকারিক জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনও ঘটনা পুলিশকে জানানো হয়নি। পড়ুয়াদের অভিযোগ ও দাবীর বিষয়ে JNU প্রশাসনের কাছ থেকেও তাৎক্ষণিক কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (AISA) জাতীয় সভাপতি এন সাই বালাজি দাবী করেছেন যে, পড়ুয়ারা তাদের মোবাইল ফোনে ডকুমেন্টারিটি দেখতে এবং শেয়ার করার জন্য একটি অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যম ডাউনলোড করেছে। ডকুমেন্টারি দেখতে আসা আসরার আহমেদ বলেন, “আমরা ফোনে শান্তিপূর্ণভাবে ডকুমেন্টারি দেখছিলাম, কিন্তু কিছু লোক আমাদের দিকে ঢিল ছুঁড়েছে। অন্ধকারের কারণে পাথর ছোঁড়াদের শনাক্ত করা যায়নি।
এক ছাত্র বলেন, “জেএনইউ প্রশাসন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট কেটে দিয়েছে। আমরা অন্যান্য ছাত্রদের সাথে ডকুমেন্টারি শেয়ার করেছি এবং একসাথে এটি দেখছি।” বালাজি আরও দাবী করেছেন যে, সাদা পোশাকের পুলিশ ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করছিল। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, জওহরলাল নেহরু স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (JNUSU) বাম-সমর্থিত ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্টস ফেডারেশন (DSF), অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (AISA), স্টুডেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (SFI) এবং অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস ফেডারেশন (AISF) এর সদস্যদের নিয়ে গঠিত।
বিবিসির 'ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন' ডকুমেন্টারি সিরিজ গুজরাট দাঙ্গার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যখন নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
তথ্যচিত্রটির স্ক্রীনিং রাত ৯ টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং প্রশাসনের অসম্মতি সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। জেএনইউ প্রশাসন স্ক্রিনিংয়ের অনুমতি দেয়নি। ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান। পড়ুয়ারা অবশ্য জোর দিয়েছিল যে স্ক্রিনিং কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন করবে না বা এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ব্যাহত করবে না।
ঐশী ঘোষ বলেন, "আমরা স্ক্রিনিং করব। বিবিসির ডকুমেন্টারি নিষিদ্ধ নয়। এই ছবিতে সত্য দেখানো হয়েছে এবং তারা ভয় পাচ্ছে যে সত্য বেরিয়ে আসবে। আপনি আলো ছিনিয়ে নিতে পারেন, আমরা আমাদের চোখ, আমাদের আমাদের আবেগ কেড়ে নিতে পারেন না। আপনারা স্ক্রিনিং বন্ধ করতে পারবেন না। আমরা হাজারও স্ক্রিনে দেখব। পুলিশ ও বিজেপির ক্ষমতা থাকলে আমাদের থামাক।"
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বলেন, "এবিভিপি নিন্দার চিঠি লিখতে পারত, কিন্তু এই ক্যাম্পাস সংঘের নির্দেশে চলে না। বিজেপিকে নিয়ে আমাদের কাছে কিছু যায়-আসে না। এবিভিপি ট্যুইট করেছে কেন তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। এদের লজ্জা করে না, কুস্তিগীররা ধর্নায় বসে আছেন।"
তিনি বলেন, "আমাদের কাছে ল্যাপটপ আছে, ওয়াই-ফাই কেটে গেছে ইত্যাদি। আমরা আজ নিজেই এই ডকুমেন্টারি দেখব, কিউআর কোড বিতরণ করব। যদি তারা একটি স্ক্রিন বন্ধ করে, আমরা লক্ষাধিক স্ক্রিন খুলব। জেএনইউ কার্যালয়ে উপস্থিত পড়ুয়াদের সাথে যৌথভাবে লিঙ্ক শেয়ার করা হবে।"
উল্লেখ্য, বিবিসির 'ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন' ডকুমেন্টারি সিরিজ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। এই সিরিজটি ভারতে উপলব্ধ নয়, তবে এর লিঙ্কগুলি ইউটিউব এবং টুইটারে শেয়ার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ডকুমেন্টারির পর্ব সম্বলিত ইউটিউব ভিডিও এবং ট্যুইটার লিঙ্কগুলি ব্লক করেছে। এছাড়াও, বিদেশ মন্ত্রক ডকুমেন্টারিটিকে 'প্রচারের অংশ' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিদেশ মন্ত্রক বলেছে যে, এতে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব রয়েছে এবং এটি একটি ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন ঘটায়।
No comments:
Post a Comment