কুষাণ আমলের বহুমূল্যবান প্রাচীন সামগ্ৰী উদ্ধার উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায়। এই প্রাচীন সামগ্ৰী বিক্রির চেষ্টার অভিযোগ ওঠে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে হানা দেয় অ্যাডমিনিস্ট্রেট জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর আধিকারিকরা। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে করেছেন ওই ব্যক্তি।
এই প্রসঙ্গে অ্যাডমিনিস্ট্রেট জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর আধিকারিক বলেন, "আমাদের অফিস ১৮৭৪ থেকে কাজ করছে। আমাদের কাছে প্রাচীন বহুমূল্যবান অনেক জিনিস আছে। আমাদের অফিস ও হাইকোর্ট মিলে একটি মিউজিয়াম তৈরি করছে, যার জন্য প্রাচীন নিদর্শনের খোঁজে আমি প্রতিটি জেলায় যাই। সেখানে যার কাছে এসব বস্তুগুলি পাই সেগুলো চেয়ে নিই এবং তাদের শংসাপত্র, অ্যাকনলেজমেন্ট লেটার দিয়ে সেগুলো রিসিভ করে নিই, যদি তারা দেন।"
আধিকারিক জানান, এই কাজে আর্কোলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কখনও কখনও আমাদের সাহায্য করে। সেই সূত্রেই আমরা দশ দিন আগে চন্দ্রকেতুগড় আসি এবং তখনই জানতে পারি চন্দ্রকেতুগড়ে খননের সময় বেরিয়ে আসা অনেক জিনিস এখানকার মানুষ নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছেন। এরকমই একজনের নাম আমাদের কাছে আসে, তখন আমরা স্থানীয় সূত্রে ও পুলিশের সহায়তায় তথ্য জোগাড় করি এবং জানতে পারি আমাদের কাছে আসা খবর সম্পূর্ণ সত্য। এরপর ওই ব্যক্তির সঙ্গে আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করি এবং শুক্রবার সকালে সাফল্য পাই।'
আধিকারিক বলেন, 'আমি ছদ্দ নাম নিয়ে ওই ব্যক্তিকে ফোন করি এবং তাকে বলি আমি প্রাচীন বহুমূল্যবান জিনিসের ব্যবসা করি ও এসব কিনতে আগ্রহী। আমার দফতরের এক মহিলা কর্মচারীকে আমার স্ত্রী এবং অপর একজনকে আমার শ্যালিকা বানিয়ে এই মিশনে নামি। এতে কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার শংকর শুভ্র চক্রবর্তীর আমাদের গাইড করেন এবং এরপর আমরা এসপি বারাসতের সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরবর্তীতে হোয়াটসঅ্যাপে মারফৎ যোগাযোগ করতেই পুলিশ দল পাঁচ মিনিটের মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে যায়।'
আধিকারিক জানান, এখানে এসে তারা দেখেন ক্যাপচার থেকে শুরু করে পটারি সব প্রাচীন নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। চন্দ্রকেতুগড়ে যে মিউজিয়াম আছে, তার দশ গুণ জিনিস এখানে রয়েছে; জীবাশ্ম থেকে শুরু করে পশুর দাঁত সবকিছু, যার মূল্য নির্ধারণ করা খুবই কঠিন।
আধিকারিকের কথায়, 'যে ব্যক্তির কাছ থেকে এই জিনিসগুলো আমি পেয়েছি, তার নাম নিচ্ছি না। কারণ তার পরিবার রয়েছে এবং তিনি স্বেচ্ছায় জিনিসগুলো দিতে রাজি হয়েছেন। আমরা আইনিভাবে এ সমস্ত জিনিস নিয়ে নিচ্ছি।'
তিনি এও জানান, এখানে যা সব জিনিস রয়েছে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা সত্যিই অসম্ভব, তবে সবকিছুর দাম আনুমানিক ১০০ কোটি টাকার বেশি। এখানে যে পট মিলেছে, তা কুষাণ সময়কালের, যা লক্ষ টাকতেও মিলবে না।
আধিকারিক বলেন, 'এখন আর্কোলজিক্যাল সার্ভেকে খবর দেব, তারা এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। পাশাপাশি এসবের মধ্যে কিছু জিনিস আবার নকল, সেগুলোকে আগে আলাদা করা হবে। এরপর আর্কোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্টের অনুমতি নেব, আমাদের যে মিউজিয়াম তৈরি হচ্ছে, সেখানে এগুলো রাখার।'
অপরদিকে, এই প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির সাফাই, আমার জানা নেই এগুলো এত টাকার জিনিস। জোর করে বললে আমার কিছু বলার নেই। আমি এসব ভাঙাচোরা থেকে কুড়িয়ে এনে রেখেছি। আমার সংগ্ৰহের অনুমতি আছে, তবে এগুলো সব রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি।'
সরাসরি এসব সামগ্রী বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'আমি এগুলো বিক্রি করতে চাইনি, ওনারা চেয়েছেন। আমি জানি এগুলো বৈধ জিনিস। এখন সরকার যদি নিয়ে নেয়, আমাকে প্রমাণ দিক, যে এত গুলো জিনিস এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছে।'
No comments:
Post a Comment