'সব তৃণমূলকে আখের পেশাই মেশিনে ঢুকিয়ে রস বার করতে হবে', প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনের বাটি-কারখানায় কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় এভাবেই রাজ্যের শাসক দলকে নিশানা করলেন বাম নেতা সেলিম। শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের খড়িবাড়ি থেকে কলুপারা পর্যন্ত মিছিল হয় বামেদের, এরপরেই প্রতিবাদ সভা। সেখানে অংশ নেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মোঃ সেলিম। প্রথমে সভামঞ্চ ও পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল ও বিজেপিকে এক হাত নেন বাম নেতা।
কেন্দ্র ও বার কাউন্সিলের তরফে রাজ্যে টিম পাঠানো নিয়ে সেলিম বলেন, 'এতদিনে টনক নড়ছে। এখানে যে লুটের রাজত্ব, তৃণমূলের রাজনীতি, কেন্দ্রীয় সরকার, বার কাউন্সিলও বলছে টিম পাঠাবো, এটা ভালো লাগছে। আমরা এখানে ১০ বছর থেকে ভুক্তভোগী, আমরা বলছিলাম। আমরা বাংলার মিডিয়াকেও বলব দালালি ছেড়ে সত্যি কথাটা বলুন। মানুষ জাগছে তৃণমূলকে তাড়াতে, আর তৃণমূলকে তাড়াতে পারবো তখনই, যখন যে বিজেপি, তৃণমূলকে দালাল তৈরি করেছে সেই বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই হবে।'
তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনের বাড়ি-কারখানা থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'সব তৃণমূলকে আখের পেশাই মেশিনে ঢুকিয়ে রস বার করতে হবে।'
এর আগে সভা মঞ্চ থেকে তৃণমূল বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানান বাম নেতা। তিনি বলেন, "গোটা দেশে মোদী সরকার এমন অর্থনীতি নিয়েছে, যাতে মানুষের দুর্দশা বাড়ছে। যখন এই দশা পাল্টাতে হবে, দিশা দেখাতে হবে, তখন সেই আরএসএস নাগপুর-দিল্লী থেকে পারেনি, কালীঘাটে তার দালাল তৈরি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অভিষেককে দিয়ে আমাদের রাজ্যে আরএসএস তার নিজের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু দালালকে দিয়ে মুখোশ পড়ে বাংলার মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন, দিচ্ছেন। একদিকে মোদীর লুট, একদিকে দিদির লুট। এটা বন্ধ করার জন্য বাংলার মানুষ জাগছে, কাল গোটা দেশের মানুষ জাগবে, আর মানুষ জাগে লাল ঝান্ডাকে হাতে করে নিয়ে।"
সেলিম বলেন, 'দেশকে বাঁচানোর জন্য আবার লাল ঝান্ডাকে মজবুত করতে হবে, সেই লড়াইতে আমরা নেমেছি। আর এই লড়াই আমরা লড়তে পারবো যদি হিন্দু-মুসলমান, মন্দির-মসজিদ, বাঙালি-বিহারী, ধুতি-লুঙ্গি-পাজামা ভুলে মানুষ এককাট্টা হতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'গঙ্গা আরতি বিজেপি করবে, না আরএসএস করবে, এখন সেই লড়াই হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে নদী আদি গঙ্গা পচে গেল সেদিকে খেয়াল নেই, কিন্তু তাঁকে আরতি করতে হবে। দুর্গা কার্নিভাল হবে, মন্দির তৈরি হবে কিন্তু আমার বাজার-হাট বাজবে না। আমার জমি-পুকুর-পাহাড়-ঘর, এমনকি স্কুল-কলেজ-হাসপাতালও সব ওরা বেঁচে দিচ্ছে। দুর্নীতি করে শিক্ষকের চাকরি নিলাম করেছে, টাকার পাহাড় বেরিয়ে আসছে। আপনার-আমার বাজারে যাওয়ার পকেটে টাকা নেই আর তৃণমূলের নেতাদের ঘর ভর্তি টাকা।'
কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, 'গরীব মানুষ ঘর করার জন্য টাকা জোগাড় করে, জীবন শেষ হয়ে যায়, আর তৃণমূল নেতারা বিল্ডিং কিনছেন, গুদাম তৈরি করছেন টাকা রাখার জন্য। সব চোর ধরতে হবে। পুলিশের কাজ ছিল চোর ধরা কিন্তু পুলিশ তা না করে চোরেদের কারবারে হাত মিলিয়েছে। চন্দন কাঠ থেকে শুরু করে গরু-কয়লা পাচারের সব টাকা এঘাট-ওঘাট থেকে কালীঘাটে গিয়ে জমা হয়েছে। গরীব মানুষ ঘর পাচ্ছে না অথচ চার-পাঁচ তলা আছে তারা ঘর পাচ্ছে, এ অন্যায় চলবে না, এর বিরুদ্ধে লড়াই হবে।'
No comments:
Post a Comment