মঙ্গলবার দোল ও বুধবার হোলি, দেশ জুড়ে সকলেই মেতেছেন রংয়ের উৎসবে। কিন্তু জানে কী এমন একটি জায়গা আছে আমাদেরই এই দেশে, যেখানে রং নয় পাথর দিয়ে হোলি খেলা হয়। অবাক হলেও এটাই সত্যি। রাজস্থানের সাগওয়ারা (দুঙ্গারপুর) এলাকায় একটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে পাথর দিয়ে হোলি খেলা হয়।
এবারও সেই নিয়মের অন্যথা হয়নি, একই রকম ভাবে হোলি খেলা হয়েছে এবং এতে বহু মানুষ আহত হয়েছেন বলে খবর। আহতদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। ভিলুদা গ্রামে খেলা হয়েছে এই পাথরের হোলি। ঢোল কুন্ডির তালে হোলির চিৎকারে দুই পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়ে। পাথরের আঘাতে আহত হয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি; কারও হাতে, কারও পায়ে, আবার কারও বা মাথায় পাথর লাগে।
আহতদের ভিলুদা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এই অদ্ভুত হোলির পেছনে মান্যতা রয়েছে, পাথরের আঘাতে বেরোনো রক্ত মাটিতে পড়লে গ্রামে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে না এবং সারা বছর গ্রামে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে।
প্রচলিত কথানুযায়ী, মেবারের রানা সাঙ্গা এবং মুঘল সম্রাট বাবরের সাথে খান্ডওয়ার যুদ্ধের ময়দানে দুঙ্গারপুরের মহারাওয়াল উদয় সিং দ্বিতীয়ের শহীদ হওয়ার পর তার রাজ্য দুটি ভাগে বিভক্ত হয়; দুঙ্গারপুর এবং বাঁশওয়াড়া। তার বড় ছেলে পৃথ্বী সিং দুঙ্গারপুরের রাজা হন এবং ছোট ছেলে জগমাল সিং বাঁশওয়াড়ার রাজা হন। কথিত আছে, একবার ধুলান্দির দিনে রাজা জগমাল সিংয়ের কাফেলা ভিলুদা গ্রামের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এখানকার এক ব্যক্তির পোষা কুকুরটির নামও ছিল জগমাল। রাজা তাকে জগমাল নামে ডাকলে বাঁশওয়াড়ের রাজা রেগে যান। তিনি তার সৈন্যদের নির্দেশ দিলেন লোকটিকে ফেলতে।
সৈন্যদের ভয়ে তিনি দৌড়াতে গিয়ে মারা যান। একই মাটিতে তার স্ত্রীও স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে জীবন দিয়ে দেন। সেই মহিলার অভিশাপ এড়াতে গ্রামের মানুষ ধুলান্দির দিন পাথর দিয়ে হোলি খেলেন বলে মনে করা হয়। এমনও একটি বিশ্বাস আছে যে পাথরের হোলি থেকে মাটিতে রক্ত পড়ে, তা শুভ বলে মনে করা হয়। এই ঐতিহ্য ২০০ বছরেরও বেশি পুরানো।
আদিবাসী অধ্যুষিত দুঙ্গারপুর জেলায়, হোলির দিনে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা অনন্য ঐতিহ্য আজও অনুসরণ করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, আশেপাশের অনেক গ্রামের মানুষ পাথরের হোলি (খুনির হোলি) জন্য ভিলুদার রঘুনাথজি মন্দিরের কাছে জড়ো হয়। ঢোল কুন্ডির তালে বিপুল সংখ্যক মানুষ এসে গাইর বাজান।
রঘুনাথজি মন্দির দর্শনের পর গ্রামের লোকজন কাছের মাঠে পৌঁছে যায়। এরপর শুরু হয় রক্তাক্ত হোলি খেলা। তারা দুই দলে বিভক্ত হয়ে একে অপরের দিকে পাথর ছুড়তে লাগল। কেউ হাত দিয়ে ঢিল ছোঁড়েন, আবার কেউ গুলতি দিয়ে।
No comments:
Post a Comment