গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি মা এবং অনাগত শিশু উভয়ের জন্যই অপরিহার্য। সঠিক পুষ্টি পেলে শিশুর সঠিক বিকাশ ঘটে। এছাড়াও, সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে মায়ের গর্ভকালীন জটিলতা, যেমন- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, একলাম্পসিয়া এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া আয়রন, ফলিক এসিড ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে শিশুকে জন্মগত ত্রুটি, যেমন- নিউরাল টিউব ডিফেক্ট ইত্যাদি থেকে রক্ষা করা যায় এবং গর্ভে শিশুর বিকাশ সঠিকভাবে হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম ত্রৈমাসিকে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি নিউরাল টিউব বিকাশের জন্য অপরিহার্য। পরবর্তীতে নিউরাল টিউব নিজেই মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডে বিকশিত হয়।
ডাঃ রেনু জৈন, অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, জেপি হাসপাতাল, বলেছেন যে- সঠিক পুষ্টি মায়ের পাশাপাশি সন্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ সঠিক পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করলে মা রক্তস্বল্পতা, অবসাদ, বিষণ্ণতা ইত্যাদি থেকে রক্ষা পান এবং তার স্বাস্থ্য ভালো থাকে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে মায়ের ওজনও ঠিক থাকে। গর্ভাবস্থা এবং প্রসবের সময় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং জটিলতার সম্ভাবনা হ্রাস করে। সঠিক পুষ্টির অভাব মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে, যেমন -
* জন্মগত কম ওজনের শিশু -
যদি একজন মহিলা গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ না করেন তবে তার শিশুর জন্মের সময় ওজন কম হতে পারে।
* নিউরাল টিউবের ত্রুটি -
ফলিক অ্যাসিডের অভাব, ভিটামিন বি-এর ঘাটতি, স্পাইনা বাইফিডার মতো নিউরাল টিউব ত্রুটির সম্ভাবনা বাড়ায়।
* অ্যানিমিয়া -
আয়রনের অভাবে মায়ের রক্তশূন্যতা হতে পারে। এই অবস্থায় রক্তে লোহিত কণিকার ঘাটতি দেখা দেয়, যার কারণে শরীরে অক্সিজেন ঠিকমতো সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।
* অকাল প্রসব -
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব অকাল প্রসবের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
* প্রিক্ল্যাম্পসিয়া -
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। এটি গর্ভাবস্থার একটি গুরুতর জটিলতা যাতে মায়ের রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং লিভার, কিডনির মতো অঙ্গগুলির ক্ষতি করতে পারে।
* বিষণ্নতা -
কিছু পুষ্টির ঘাটতি যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফোলেট এবং ভিটামিন ডি গর্ভাবস্থায় বিষণ্নতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় নারীদের সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া জরুরি। এই সময়ে মায়ের পুষ্টির চাহিদা বৃদ্ধি পায় কারণ অনাগত শিশুর বিকাশের জন্য অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হয়।
এখানে আমরা এমন কিছু পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলতে যাচ্ছি, যা একজন গর্ভবতী মহিলার পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়া উচিৎ -
* ফোলেট -
ফোলেট, ভিটামিন বি-৯ নামেও পরিচিত, অনাগত শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফোলেট প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক সবজি, সাইট্রাস ফল, বিনস এবং গোটা শস্যে পাওয়া যায়।
* আয়রন -
হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য আয়রন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হিমোগ্লোবিন নিজেই ক্রমবর্ধমান শিশুকে অক্সিজেন পরিবহন করে। এর উৎসের মধ্যে রয়েছে লাল মাংস, মাছ, বিনস এবং ফর্টিফাইড সিরিয়াল।
* ক্যালসিয়াম -
শিশুর হাড় ও দাঁত মজবুত করার জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। দুগ্ধজাত দ্রব্য, সবুজ শাক-সবজি এবং টফুতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
* ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড -
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও চোখের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। এটি ফ্যাটি মাছ যেমন, স্যামন এবং ফ্লেক্স বীজে পাওয়া যায়।
* প্রোটিন -
শিশুর টিস্যুর বিকাশের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। মাংস, মুরগি, মাছ, ডিম, বিনস এবং দুগ্ধজাত পণ্য প্রোটিনের ভালো উৎস।
* ভিটামিন ডি -
ক্যালসিয়াম শোষণ এবং হাড় ও দাঁত মজবুত করার জন্য ভিটামিন ডি অপরিহার্য। চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম এবং শক্তিশালী দুগ্ধজাত খাবার ভিটামিন ডি-এর ভালো উৎস।
* আয়োডিন -
শিশুর মস্তিষ্ক এবং থাইরয়েডের বিকাশের জন্য আয়োডিন অপরিহার্য। আয়োডিন আয়োডিনযুক্ত লবণ, দুগ্ধজাত পণ্য এবং সামুদ্রিক খাবারে পাওয়া যায়।
এখানে এটি উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে এই পুষ্টির অতিরিক্ত গ্রহণ ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় পুষ্টির চাহিদা সঠিক ভাবে জানতে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
No comments:
Post a Comment