দুর্ঘটনার শিকার বৃদ্ধর পাশে মহিলা ভ্যান-চালক, পৌঁছে দিলেন হাসপাতাল - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday 3 April 2023

দুর্ঘটনার শিকার বৃদ্ধর পাশে মহিলা ভ্যান-চালক, পৌঁছে দিলেন হাসপাতাল


দুর্ঘটনায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রয়েছেন বৃদ্ধ, সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন না কেউই। অবশেষে পাশে দাঁড়ালেন মহিলা ভ্যান-চালক। একই পটে ফুটে উঠল অমানবিক ও সাহসিকতার এক অনন্য চিত্র। ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার। 


সোমবার সকালে দেগঙ্গায় বিশ্বনাথ পুর এলাকায় টাকি রোডে ইট বোঝাই একটি ম‍্যাক্স বোলেরো গাড়ির ধাক্কায় রক্তাক্ত হন সাইকেল আরোহী এক বৃদ্ধ। এরপর দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকলেও এগিয়ে এলেন না কোনও পথচারী। যাও বা এক স্থানীয় বাসিন্দা এগিয়ে আসেন, কিন্তু বৃদ্ধকে নিয়ে যেতে চাইলেন না কোনও গাড়ি বা ভ্যান চালক। যখন এমনই অমানবিক ছবি দেখা যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় সাহসের সঙ্গে এগিয়ে এলেন এক মহিলা ভ‍্যান চালক। রক্তাক্ত অবস্থায় বৃদ্ধকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলেন হাসপাতালে। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি, হাসপাতালেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বৃদ্ধ সাইকেল আরোহী। 


জানা গিয়েছে, মৃত বৃদ্ধের নাম আয়েপ মাটি, বয়স ৬০ বছর।স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন সকালে সাইকেল চালিয়ে টাকি রোড দিয়ে যাচ্ছিলেন আয়েপ মাটি। পিছন দিক থেকে একটি ইট বোঝাই ম‍্যাক্স বোলেরো গাড়ি তাঁকে ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। ভয়ে গাড়ি ফেলে পালিয়ে যায় চালক। অভিযোগ, রক্তাক্ত অবস্থায় ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে এগিয়ে আসেননি কেউ দীর্ঘক্ষণ রাস্তার ধারে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। পথচারীরা দেখেও না দেখার ভান করে চলে যান পাশ কাটিয়ে। অবশেষে ভ‍্যান চালক আজিরা খাতুনের সহায়তায় স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত পাল রক্তাক্ত ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে নিয়ে যান বিশ্বনাথপুর গ্ৰামীণ হাসপাতালে।সেখান থেকে বারাসত হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের। 


স্থানীয় বাসিন্দা সুশান্ত পাল বলেন, '৬০ বছর বয়সী এক ভদ্রলোক সকাল বেলা সাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন। একটা ইট বোঝায় ম্যাক্স গাড়ি মেরে দিয়ে চলে যায়। আমি বাড়ি থেকে এসে অনেক ভ্যানওয়ালা ও গাড়িওয়ালাকে অনুরোধ করি, তারা কেউ যেতে চায় না। শেষে এক ভদ্রমহিলা ভ্যান চালিয়ে যাচ্ছিলেন তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আমি হাসপাতালে যাই। তারপর সেখান থেকে রেফার করলে বারাসতে পাঠাই অ্যাম্বুলেন্সে।' তিনি জানান, বৃদ্ধ মারা গিয়েছেন এবং ওনার বাড়ির লোকেরা এসে সাইকেলটা নিয়ে গেছেন।


পাশাপাশি আজিরা খাতুন (ভ্যান-চালক) বলেন, 'দুর্ঘটনা হয়েছিল কেউ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল না। আমি নিয়ে গেছি। দেখলাম বুড়ো মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে আছেন।‌ দাদারা আমাকে বলায় আমি ভ্যান চালিয়ে নিয়ে গেলাম হাসপাতালে।'


আজিরা জানান, তিনি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। তাঁর একটা সন্তান আছে প্রতিবন্ধী। তিনি বলেন, 'ভ্যান চালিয়ে তিনটে পেট চলে; আমি, আমার প্রতিবন্ধী বাচ্চা ও আমার মা।"


এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ, আটক করে ঘাতক গাড়িটি। তবে, এমন এক করুণ পরিস্থিতিতে যেখানে সকলেই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিলেন, সেখানে আজিরার এই সাহস করে এগিয়ে আসা সত্যিই খুব প্রশংসনীয়।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad