নেই অজ্ঞানের ডাক্তার! প্রসূতিদের ভোগান্তি, চরম অব্যবস্থা সরকারি হাসপাতালে - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday 18 April 2023

নেই অজ্ঞানের ডাক্তার! প্রসূতিদের ভোগান্তি, চরম অব্যবস্থা সরকারি হাসপাতালে


নদিয়া: অজ্ঞানের ডাক্তার নেই, জরুরী পরিস্থিতিতেও স্থানান্তরিত করতে হচ্ছে প্রসূতি মায়েদের। চূড়ান্ত অব্যবস্থার অভিযোগ শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে। রোগীর প্রাণহানি ঘটলে, তার দায় কে নেবে? প্রশ্ন বিরোধীদের।


রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ফেরাতে। বিশেষ করে প্রসূতি বিভাগ গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে। কিন্তু চূড়ান্ত বেহাল দশা শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের, এমনই অভিযোগ। অজ্ঞানের ডাক্তার না থাকার কারণে তিনদিন বন্ধ থাকছে সিজার। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সন্তানসম্ভবাদের স্থানান্তরিত করা হচ্ছে অন্য হাসপাতালে। জরুরি অবস্থায় স্থানান্তর করার ফলে গর্ভবতী মহিলার যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে এর দায় কে নেবে ? সেই প্রশ্নই উঠছে। 


রাজ্যের প্রতিটি জেলার হাসপাতালে এখন অপারেশনের সুবিধা রয়েছে। অর্থাৎ জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করাতে পারেন। শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালও তার ব্যতিক্রম নয়। রাজ্য সরকার এবং স্বাস্থ্য দফতরের তরফে হাসপাতাল চত্ত্বরেই পরিষ্কার লেখা রয়েছে ২৪ ঘন্টা সিজারের পরিষেবা রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অজ্ঞানের ডাক্তার না থাকার কারণে চূড়ান্ত দুর্ভোগে রোগী ও তার আত্মীয়রা। 


অভিযোগ, অজ্ঞানের ডাক্তার তিনদিন না থাকার কারণে ঐ দিনগুলোতে কোনও সিজার করা হয় না হাসপাতালে। কোনও গর্ভবতী মহিলা যদি সেই সময় ভর্তি হয় তাহলে তার পরিবারের কাছ থেকে একটি মুচলেখা লিখে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ নিজের দায়িত্বেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। এখানেই উঠছে প্রশ্ন। যে হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা সিজারের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে কেন রোগী ও তার আত্মীয়রা নিজের দায়িত্ব নিয়ে ভর্তি করাবেন? শুধু তাই নয়, জরুরি পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময় অন্য হাসপাতালে তড়িঘড়ি স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। যার ফলে প্রাণহানির চূড়ান্ত সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে।

 

এ বিষয়ে শান্তিপুরের বাসিন্দা সুব্রত মৈত্র বলেন, শান্তিপুরবাসীর একমাত্র ভরসার জায়গা এই স্টেট জেনারেল হাসপাতাল। এখানে প্রচুর রোগীরা আসেন। বিশেষ করে প্রসূতি বিভাগ সব থেকে বেশি স্পর্শকাতর। আর সেই বিভাগে যদি অজ্ঞানের ডাক্তার না থাকে, তাহলে প্রসূতির চিকিৎসকের কোন কিছু করার থাকে না। অর্থাৎ জরুরী পরিস্থিতিতে যদি কোনও অপারেশনের প্রয়োজন হয়, তাহলে বাধ্য হয়ে তাকে স্থানান্তরিত করতে হবে অন্য হাসপাতালে। সেই কারণে শান্তিপুরবাসী হিসেবে বলব যত দ্রুত সম্ভব নিয়মিত অজ্ঞানের ডাক্তার শান্তিপুরে নিয়ে আসা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো যাতে আরো ভালো করা যায় সে দিকেও নজর রাখার অনুরোধ করব।'


এদিকে অসুবিধার কথায় সহমত পোষণ করে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের প্রসূতি চিকিৎসক পবিত্র ব্যাপারি বলেন, 'অজ্ঞানের ডাক্তার সপ্তাহে তিন দিন না থাকার কারণে আমরা যারা শান্তিপুর হাসপাতালে পশুতি চিকিৎসক রয়েছে তাদের প্রত্যেককে কিছুটা হলেও অসুবিধায় পড়তে হয়। তার কারণ যে তিন দিন অজ্ঞানের ডাক্তার থাকে না, সেই সময় যে প্রসূতি মায়ের সিজারের প্রয়োজন হয় তখন আমরা বাধ্য হয়ে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করি। যদিও তখন আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।' 


তবে তিনি এও বলেন, 'যেটুকু খবর রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও চিন্তা-ভাবনা করছে, অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।' তিনিও মেনে নেন জরুরি পরিস্থিতিতে স্থানান্তরিত করা প্রসূতি মা এবং বাচ্চার ক্ষেত্রে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি তিনি বলেন, 'আমরা স্থানান্তরিত করার পর, যে হাসপাতালে তাঁকে পাঠালাম সেই হাসপাতালের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলি এবং তার শারীরিক অবস্থার খবর নিয়ে থাকি।'


অপরদিকে এই বিষয়ে রাজ্য সরকার ও স্বাস্থ্য দফতরকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপি নেতা প্রসেনজিৎ দেউড়ি বলেন, 'গোটা রাজ্য জুড়ে দুর্নীতি চলছে। চোরেদের সামলাতেই ব্যস্ত রাজ্য সরকার, স্বাস্থ্য দফতর কী দেখবেন! সাধারণ মানুষের কথা রাজ্য সরকার ভাবে না।' 


তিনি বলেন, 'শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালেই শুধু নয়, গোটা রাজ্যের হাসপাতালেই একই অবস্থা।' তবে, অজ্ঞানের ডাক্তার না থাকার কারণে যদি কোনও প্রসূতি মায়ের দুর্ঘটনা ঘটে, সেই দায়ভার স্বাস্থ্য দফতরকে নিতে হবে বলেও সুর চড়িয়েছেন তিনি।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad