৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ, ডিভিশন বেঞ্চে মামলার অনুমতি পর্ষদকে
নিজস্ব প্রতিবেদন, ১৫ মে, কলকাতা: প্রাথমিকে চাকরি হারাদের পাশে থাকার বার্তা আগেই দিয়েছিল পর্ষদ, এবার নিয়োগ বাতিল নিয়ে পর্ষদকে মামলা করার অনুমতি দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রাথমিকে অপ্রশিক্ষিত ৩৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করার অনুমতি চেয়েছিল পর্ষদ। কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এবার মামলা করার অনুমতি পেল পর্ষদ। মঙ্গলবার এই মর্মে শুনানির আবেদন করা হয়েছে। বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর পাশাপাশি চাকরিহারা শিক্ষকরাও কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তাদের বক্তব্য না শুনে কীভাবে একক বেঞ্চ নির্দেশ দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেই মামলা দায়ের চাকরিহারাদের।
এদিকে, আগেই চাকরিহারাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিল পর্ষদ। পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় প্রসঙ্গে আইনি পরামর্শ নেওয়া আমরা শুরু করেছি আইন মেনে পদক্ষেপ করব।"
পর্ষদ সভাপতি আরও বলেছিলেন, "এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আমরা অ্যাপিল করব। ৩৬ হাজারের যারা চাকরি করছেন তারা কিন্তু এখন কেউ প্রশিক্ষণহীন নন। ২০১৯ সালের মধ্যে তাদের ট্রেনিং সম্পন্ন হয়েছে। বোর্ড তাদের নিয়োগ দিয়েছিল এনসিটিই (ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন)-র নিয়ম মেনে।"
অ্যাপটিটিউট টেস্ট প্রসঙ্গে পর্ষদ সভাপতি বলেছিলেন, "হাইকোর্ট পর্ষদ কে হলফনামা জমা দিতে বলেছিল তা জমা দেওয়া হয়েছে রেকর্ড অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীদের অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়েছিল। কে বেশি বা কম পেয়েছেন তা বিবেচনা করা আমাদের কাজ নয়।"
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ৩৬ হাজার অপ্রশিক্ষিত প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষা হয়। এরপর তার ভিত্তিতে ২০১৬ সালে প্রাথমিকে সাড়ে ৪২ হাজার পদে নিয়োগ করা হয়েছিল, যার মধ্যে ৩৬ হাজার জনই ছিলেন ওই মুহূর্তে অপ্রশিক্ষিত শিক্ষক।
২০১৬ সালের নিয়োগ নিয়ম মেনে হয়নি, এই অভিযোগে ১৪০ জন পরীক্ষার্থী মামলা করেছিলেন। আরও অভিযোগ উঠেছিল, ঐ নিয়োগের সময় কোন অ্যাটিটিউড টেস্ট নেওয়া এবং সংরক্ষণের নীতি মানা হয়নি। সেই নিয়ে দীর্ঘ শুনানি হয়। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কী রায় দেন, সেদিকেই নজর ছিল সকলের। আর শুক্রবার নজিরবিহীন রায় দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। একসঙ্গে ৩৬ হাজার অপ্রশিক্ষিত শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে, বাকি প্রশিক্ষিতদের চাকরি বহাল থাকছে।
যদিও এই মুহূর্তে স্কুলে যাওয়া বন্ধ হচ্ছে না ২০১৬-তে প্রাথমিকে নিয়োগ পাওয়া অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের। হাতে চার মাস সময় পাবেন তারা এবং বেতন পাবেন পার্শ্বশিক্ষকদের হারে। উল্লেখ্য, এই সময়কালের মাঝে কেউ যদি প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন, তারা অবশ্য একটি সুযোগ পাবেন ইন্টারভিউতে বসার। কিন্তু যারা অপ্রশিক্ষিত হয়েও চাকরিতে ঢোকার পর এখনও প্রশিক্ষণ নেননি, তাদের চাকরি সম্পূর্ণভাবে বাতিল হচ্ছে। চাকরি বাতিলের নির্দেশের পাশাপাশি ঐদিন আগামী তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা নির্দেশও দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
No comments:
Post a Comment