শিশুদের বমি বন্ধ করার কিছু ঘরোয়া প্রতিকার
প্রেসকার্ড নিউজ, হেল্থ ডেস্ক, ১৫ মে: বমি ছোট শিশুদের একটি সাধারণ সমস্যা। অনেক সময় তারা মুখে কিছু ভুল জিনিস দিয়ে দেয় যার ফলে বদহজমের কারণে তারা বমি করতে শুরু করে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে আপনি ঘরোয়া কিছু প্রতিকার অবলম্বন করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন যে,শিশুরা এক বা দুইবার বমি করলেই আপনি চিকিৎসা শুরু করবেন না।
যদিও শিশুদের বমি কোনও গুরুতর রোগ নয়, কিন্তু বারবার বমি হওয়ার কারণে তাদের শরীরে জলের অভাব দেখা দিতে পারে,তখন তা বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। যদি শিশুটি তিন বা চারবারের বেশি বমি করে তবে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিৎ। চলুন জেনে নেই শিশুদের বমি বন্ধ করার কিছু ঘরোয়া প্রতিকার।
তরল পদার্থ -
শিশুরা যখন বমি করে তখন তাদের শরীরে এনার্জির ঘাটতি হয়। কারণ বারবার বমি করার কারণে তাদের শরীরে তরল পদার্থের অভাব হয়। এ ছাড়া বমির কারণে শিশুদের শরীরে পুষ্টির ঘাটতিও দেখা দেয়, কারণ তাদের শরীর থেকে পুষ্টি উপাদান বেরিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে, আপনার উচিৎ শিশুকে আরও বেশি করে তরল পান করানো। আপনার বিশেষ খেয়াল রাখা উচিৎ যে, শিশুদের যখন বমি হয় আপনি তাদের প্রায় ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা কোনও শক্ত খাবার দেবেন না। তাদের হালকা সবজির স্যুপ, পিউরির মত খাবার দিতে পারেন।
পুদিনা জল -
পুদিনা বমি এবং বমিভাব কমাতে অনেক সাহায্য করে। শিশুদের বমি বন্ধ করতে, কিছু তাজা পুদিনাপাতা নিন এবং এর রস বের করুন। এক চামচ রসে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। যদি আপনার শিশুর বয়স এক বছরের বেশি হয় তবে আপনি এটিকে আরও সুস্বাদু করতে কিছু মধু যোগ করতে পারেন। তারপর আপনি আপনার সন্তানকে এটি খাওয়ান। আপনার শিশু যদি পুদিনাপাতা খেতে পারে, তবে তাকে কিছু পাতা চিবিয়ে খেতে দিন। শিশুদের বমি বন্ধ করার জন্য পুদিনার রসকে সবচেয়ে কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
লেবু -
অনেক সময় গরম বা হিট স্ট্রোকের কারণে শিশুদের বমি হয় এবং তাদের শরীরে জলের অভাব দেখা দেয়। এমন অবস্থায় তাদের সামান্য জলে লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে দিন। দিনে তিন থেকে চারবার শিশুকে এটি দিন। এই দ্রবণটি শিশুদের শরীরে তরল পদার্থের ঘাটতি পূরণ করে শরীরে এনার্জি জোগাবে। আপনি ডালিমের রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়েও দিতে পারেন। এটি তাকে বমি থেকে অনেকটাই উপশম দেবে।
পেঁয়াজের রস -
পেঁয়াজে প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক গুণ রয়েছে। পেঁয়াজের রস বমি বন্ধ করে। পেঁয়াজ গ্রেট করে এর রস বের করে নিন। শিশুকে দিনে দুই থেকে তিনবার পেঁয়াজের রস দিন। আপনার শিশু যদি কিছু হজম না করতে পারে, তাহলে এতে তার বদহজমের সমস্যা দূর হবে এবং বমিও বন্ধ হবে। পেঁয়াজের রসে আদার রসও সমপরিমাণে মিশিয়ে আপনার শিশুকে দেওয়া যেতে পারে। এটি কার্যকরভাবে শিশুর বমিকে প্রশমিত করবে।
চালের জল -
ছোট শিশুদের বমি হওয়ার প্রধান কারণ দূষিত খাবার বা হজমের সমস্যা। চালের জলে বমি বন্ধ করার ও কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। এর জন্য সাদা চাল ব্যবহার করা উচিৎ, কারণ সাদা চালের জল বাদামি চালের চেয়ে বেশি উপকারী। চালের জলে অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং এটি পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। এক কাপ সাদা চাল নিয়ে তাতে দুই কাপ জল যোগ করে সেদ্ধ করুন এবং চাল সেদ্ধ হয়ে গেলে জল বের করে শিশুকে দিনে দুই থেকে তিনবার দিন। এই চালের জল আপনার শিশুর বমি কম করবে এবং তার পরিপাকতন্ত্রকে শক্তিশালী করবে।
লবঙ্গ এবং এলাচ -
বমি বন্ধ করার জন্য লবঙ্গকে সেরা এবং প্রাচীনতম আয়ুর্বেদিক প্রতিকার বলে মনে করা হয়। লবঙ্গ এবং এলাচ দুটোই হজমের জন্য ভালো বলে মনে করা হয়। বমি হলে শিশুদের জন্য এক কাপ জলে কয়েকটি লবঙ্গ সেদ্ধ করে জল অর্ধেক থেকে গেলে সেই জল তাদের দিন। লবঙ্গের জলে এক চা চামচ মধুও মেশাতে পারেন। যদি শিশুটি একটু বড়ো হয়, আপনি একটি প্যানে লবঙ্গ গরম করে চিবানোর জন্য শিশুকে দিতে পারেন। আপনি যদি চান, লবঙ্গের উপরের ফুলটি সরিয়ে দিতে পারেন।
এলাচের খোসা ছাড়িয়ে বীজগুলি বের করে নিন এবং তারপর এই বীজগুলিকে ভেজে গুঁড়ো তৈরি করুন। এই গুঁড়ো প্রায় দুই গ্রাম মধুর সাথে মিশিয়ে শিশুকে দিনে তিন বা চারবার চাটতে দিন। এটি শিশুদের বমি থেকে মুক্তি দেবে।
আদার রস -
শিশুদের বমি হলে আদার রস বা আদার চা দিতে পারেন। বমি বন্ধ করতে আদার রস বের করে তাতে মধু মিশিয়ে বাচ্চাদের পান করান। এই প্রতিকার শিশুদের জন্য একটি টনিক হিসাবে কাজ করে। বমি হওয়া বন্ধ করার পাশাপাশি এই প্রতিকারটি শিশুদের কাশির সমস্যাও দূর করে এবং পাচনতন্ত্রকেও শক্তিশালী করে। এতে তাদের বমি বমি ভাবও বন্ধ হবে।
জিরা -
আমরা সবাই মশলা হিসেবে জিরা ব্যবহার করি। ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ হওয়ায় এটি আমাদের অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করে। এটি আমাদের শরীরে অগ্ন্যাশয়ের উৎপাদন বাড়িয়ে আমাদের হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।একটি প্যানে জিরা হালকা করে ভাজুন এবং তারপর তার গুঁড়ো তৈরি করে এক গ্লাস জলে গুলে আপনার শিশুকে দিন। আপনি যদি এই দ্রবণে জিরার সাথে জায়ফলের গুঁড়া যোগ করেন তবে এই দ্রবণটি আরও কার্যকর হবে। জিরা ব্যবহার শিশুদের বমির জন্য একটি প্রভাবশালী এবং কার্যকর প্রতিকার।
কাড়া বা ক্বাথ -
আপনার শিশুর বমি শুরু হলে বা অতিরিক্ত বমি হলে আপনি ক্বাথও দিতে পারেন। এর জন্য ধনে, মৌরি, জিরা, এলাচ ও পুদিনাপাতা সমান পরিমাণে নিয়ে জলে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এই সব কিছু মিশে গেলে জলে ভালো করে ম্যাশ করে সেদ্ধ করে নিন। জল অর্ধেক হয়ে গেলে ছেঁকে নিন। এবার এই জল দিনে তিন থেকে চারবার শিশুকে দিন। এটি আপনার শিশুকে বমির সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি দেবে।
আপেল সিডার ভিনিগার -
আপেল সিডার ভিনিগারে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি শিশুদের বমি এবং বমি বমি ভাবের সমস্যা কমাতে সহায়ক। এ ছাড়া পেট ভালোভাবে পরিষ্কার করতেও আপেল সিডার ভিনিগার ব্যবহার করা হয়। এক গ্লাস জলে এক চা চামচ আপেল সিডার ভিনিগার এবং মধু মিশিয়ে সারাদিন নিয়মিত বিরতিতে শিশুকে পান করাতে থাকুন। এটি ছোট শিশুদের বমি বন্ধ করতে অনেক সাহায্য করে। তাই যখনই আপনার সন্তানের বমি হবে, আপেল সিডার ভিনিগারের সুবিধা নিতে ভুলবেন না।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস -
যদি আপনার শিশুর বয়স একটু বেশি হয়, তাহলে আপনি তাকে ঘরোয়া প্রতিকারের সাথে দীর্ঘ শ্বাস নিতেও বলতে পারেন। আপনি তাকে নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিতে বলুন। এটি করা বমি প্রতিরোধেও অনেক সাহায্য করবে। চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন যে, এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে মানসিক চাপ কমে যায় এবং আমাদের শরীরের প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়, যা শিশুর বমি প্রতিরোধে অনেক সাহায্য করে।
এইভাবে, শিশুদের বমির জন্য ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে এবং এর সাথে পরিচ্ছন্নতার পূর্ণ যত্ন নিলে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। তবে মনে রাখবেন শিশুর অতিরিক্ত বমি হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও, ছয় মাসের আগে শিশুদের কোনও ঘরোয়া প্রতিকার দেবেন না।
বি.দ্র: এখানে দেওয়া তথ্য সাধারণ জ্ঞান ও ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে দেওয়া। প্রেসকার্ড নিউজ এটি নিশ্চিত করে না। কোনও নতুন কিছু শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞর পরামর্শ অবশ্যই নিন।
No comments:
Post a Comment