এই ভিটামিনের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে শিশুদের হাড় - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Monday 29 January 2024

এই ভিটামিনের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে শিশুদের হাড়


এই ভিটামিনের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে শিশুদের হাড়

প্রেসকার্ড নিউজ,লাইফস্টাইল ডেস্ক,২৯ জানুয়ারি: ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ভিটামিন ডি-কে ‘সানশাইন ভিটামিন’ও বলা হয়,যা হাড়ের স্বাস্থ্য ও বিকাশের সাথেও জড়িত।কিন্তু আজও এই ভিটামিন উপেক্ষিত।ভিটামিন ডি বিশেষ করে শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।কারণ ভিটামিন ডি কঙ্কালতন্ত্রের বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন ডি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

সহজ কথায়,ভিটামিন ডি শরীরে ফসফরাস এবং ক্যালসিয়াম শোষণ এবং নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।এটি হাড়ের স্বাস্থ্য এবং সুস্থ পেশীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।এছাড়াও ভিটামিন ডি ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং প্রদাহজনক প্রোটিন উৎপাদনে সহায়ক।

ভিটামিন ডি-এর নিম্ন স্তর -

শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কমে গেলে স্বাভাবিক সীমার মধ্যে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বজায় রাখতে গ্রন্থিগুলি হাড় থেকে রক্তে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে।যার কারণে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে।ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণে হাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।এই ভিটামিনের অভাবে হাড় ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই ভেঙে যেতে পারে।এই কারণে একজন ব্যক্তি রিকেটের শিকারও হতে পারে।ভিটামিন ডি-এর অভাব শুধুমাত্র শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই নয়,তাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও প্রভাবিত করতে পারে।এটি এমনকি কিশোর আর্থ্রাইটিসের কারণও হতে পারে।

ভিটামিন ডি কোথা থেকে পাবেন?

ভিটামিন ডি-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল সূর্যের আলো।  এটি সব বয়সের মানুষের জন্য উপকারী।যখন আমাদের ত্বক সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে,তখন সূর্যের UVB রশ্মি ত্বকের কোষে কোলেস্টেরলকে প্রভাবিত করে।এটি ভিটামিন ডি সংশ্লেষণের দিকে পরিচালিত করে।সূর্যের আলোতে শরীরের এক্সপোজার দ্বারা উৎপাদিত ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে।এর মধ্যে রয়েছে আবহাওয়া,দিন, সময়,ত্বকের রঙ,মেঘ,বায়ু দূষণ ইত্যাদি।

সূর্যালোক ছাড়াও ভিটামিন ডি-এর অনেক উৎস রয়েছে।লাল মাংস,লিভার,রেইনবো ট্রাউট,চর্বিযুক্ত মাছ,ডিমের কুসুম এবং মাশরুম ইত্যাদিতেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।দুধ,কমলা, ডালিম ইত্যাদিতেও ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।সাধারণত শিশুদের খাবারে এই সব খাবার খুব একটা কার্যকর হয় না।এই কারণে নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি পাওয়া খুবই কঠিন।

শিশুদের ভিটামিন ডি-এর অভাবের কারণ -

এটি সারা বিশ্বে দেখা গেছে যে ভিটামিন ডি-এর অভাব শিশুদের মধ্যে সাধারণ।এর বিস্তারের হার ২.৭% থেকে ৪৫% পর্যন্ত পাওয়া গেছে।একই সময়ে,২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হওয়ার ঝুঁকি বেশি।কারণ অন্যান্য মানুষের তুলনায় তারা কম সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসে।  যেখানে ১ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর প্রাদুর্ভাবের হার ১৫%,৩ বছর বয়সী শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে প্রাদুর্ভাবের হার ১৪%।আসুন জেনে নেই কখন শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা যায়।

শিশুদের ভিটামিন ডি এর অভাব কখন দেখা দেয়?

শিশুদের ত্বক কালো হয়ে যাওয়া।

শিশু বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকে এবং সূর্যালোকের সংস্পর্শে কম পায়।

সম্পূর্ণরূপে ত্বক আবরণ।

ঠান্ডা জলবায়ুতে বসবাস।

বুকের দুধ পান করা শিশু এবং মায়ের ভিটামিন ডি-এর অভাব রয়েছে।

নিরামিষ খাবার খাওয়া।

ভিটামিন ডি স্তরকে প্রভাবিত করে এমন রোগ - 

লিভারের রোগ,কিডনির রোগ এবং সিলিয়াক ডিজিজ বা সিস্টিক ফাইব্রোসিস।

শিশুটি এমন ওষুধ খাচ্ছে যা ভিটামিন ডি স্তরকে প্রভাবিত করতে পারে।

শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর অভাবের প্রভাব -

শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর অভাব তাদের হাড়কে দুর্বল করে দিতে পারে,যার ফলে রিকেট হতে পারে।রিকেটের কারণে, অক্ষমতা,হাড়ের ব্যথা এবং ফ্র্যাকচারের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।একই সময়ে,এই ভিটামিনের ঘাটতিও পেশী শক্তি এবং স্ট্যামিনা হ্রাস করতে পারে।শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি পাওয়া গেলে শরীরের পেশীগুলি ভালো কাজ করে।একই সময়ে,শিশুর ভিটামিন ডি-এর অভাবে পেশী দুর্বল হতে পারে, যার কারণে শারীরিক কার্যকলাপেও অসুবিধা অনুভূত হতে পারে।

ভিটামিন ডি-এর অভাবে শিশুর মধ্যে অস্থিরতা,বিরক্তি, বিলম্বিত বিকাশ,কম ক্যালসিয়াম স্তরের কারণে খিঁচুনি,ক্ষুধা হ্রাস,অলসতা এবং ঘন ঘন শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে।  ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি যুবক ও কিশোর-কিশোরীদের তুলনায় অল্পবয়সী শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

এই টিপসগুলো মেনে চললে শিশুদের ভিটামিন ডি-এর অভাব হবে না:

খাদ্য -

শিশুদের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।তাদের খাদ্যতালিকায় ফোর্টিফাইড দুগ্ধজাত পণ্য, চর্বিযুক্ত মাছ এবং ডিমের কুসুম অন্তর্ভুক্ত করুন।

রোদে সময় কাটানো -

সূর্যের আলোকে ভিটামিন ডি-এর সেরা উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।এমন অবস্থায় শিশুকে বাইরে রোদে খেলতে উৎসাহিত করুন।সূর্যের UVB রশ্মি সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩ টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়।কালো ত্বকের একটি শিশুকে ৩০-৩৫ মিনিটের জন্য রোদে থাকতে হবে,হালকা ত্বকের একটি শিশুকে ১৫ মিনিটের জন্য রোদে থাকতে হবে।তবে শিশুকে রোদে পোড়া থেকে বাঁচাতে সূর্য সুরক্ষা পদ্ধতিও(Sun Protection)ব্যবহার করুন।

শারীরিক কার্যক্রম -

পেশী শক্তি এবং শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য তাদের বয়স অনুযায়ী শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করা উচিৎ।

ক্যালসিয়াম গ্রহণ -

যেসব শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা যায় তাদের প্রতিদিন পরিপূরক বা পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দই,দুধ,পনির ইত্যাদি খাওয়া উচিৎ।

সম্পূরক -

ভিটামিন ডি-এর মাত্রা বাড়াতে সাপ্লিমেন্টও নেওয়া যেতে পারে।তবে মনে রাখবেন এটি শুধুমাত্র ডাক্তারের পরামর্শেই নেওয়া উচিৎ।

ডাক্তারের মতামত প্রয়োজন -

শিশু বিশেষজ্ঞের দ্বারা শিশুর পরীক্ষা করালে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা জানা যাবে।সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শে অবিলম্বে এর ঘাটতি দূর করতেও সাহায্য হতে পারে।

বি.দ্র: এখানে দেওয়া তথ্য সাধারণ জ্ঞান ও ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে দেওয়া। প্রেসকার্ড নিউজ এটি নিশ্চিত করে না। কোনও নতুন কিছু শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞর পরামর্শ অবশ্যই নিন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad