উত্তরবঙ্গের কয়েকটি গা ছমছমে ভুতুড়ে জায়গা - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 31 January 2024

উত্তরবঙ্গের কয়েকটি গা ছমছমে ভুতুড়ে জায়গা


উত্তরবঙ্গের কয়েকটি গা ছমছমে ভুতুড়ে জায়গা


প্রদীপ ভট্টাচার্য, ৩১শে জানুয়ারী, কোলকাতা: জানেন কুয়াশা ভেজা উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তেনাদের আস্তানা। উত্তরবঙ্গের এমন কিছু জায়গা রয়েছে, যে জায়গাগুলোয় বিকেল হলেই স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে পর্যটকরাও প্রবেশ করতে ভয় পান। গভীর রাতে পাহাড়ি গেস্টহাউস থেকে ভেসে আসে মহিলা কন্ঠ। কোথাও রাত হলেই ধাক্কা দিয়ে প্রাণ ভিক্ষা চায় অশরীরী।


আসুন আজ আপনাদের  উত্তরবঙ্গের পাঁচটি ভুতুড়ে জায়গার কথা জানাই, যেখানে তেনাদের আধিপত্য। 


প্রথমেই বলবো কার্শিয়াং এর ডাওহিলের কথা। ভারতের সবথেকে ভুতুড়ে হিলস্টেশন বলা হয় যাকে। দার্জিলিং থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থান। তবে এই জায়গাকে কেন্দ্র করে অলৌকিক ঘটনার অভাব নেই। এক অচেনা কিশোরের মাথাবিহীন শরীরের গল্প এখানকার আকাশে বাতাসে ঘুরে বেড়ায়। স্থানীয় লোকজন তো বটেই এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরাও কিশোরের শিরচ্ছেদের গল্পে পরিচিত। কেউতো আবার চাক্ষুষও করেছেন। লোকে বলে মুণ্ডহীন কিশোরের মতো দেখতে অশোরীরী এই স্থানে ঘুরে বেড়ায়। আবার রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে আচমকাই কুয়াশার মধ্যে নাকি মিলিয়ে যায়। এ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী এবং স্থানীয়রা বহুবার জঙ্গলে গিয়ে এর রহস্য সমাধানের চেষ্টা করেছেন কিন্তু তার ফলাফল সব সময়ই হয়েছে ভয়াবহ। স্থানীয়দের কথায় জঙ্গলের দিকে গেলেই আপনার মনে হবে কেউ যেন আপনাকে দেখছে। শুধু তাই নয়, এক নারীর আত্মাকেও নাকি এই বনে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। শোনা যায়, এখানকার জঙ্গলে যারা রহস্য সমাধানের জন্য প্রবেশ করেছেন তাদের প্রায় সবার শরীরেই আঁচরের দাগ পাওয়া গেছে। সেই দাগ অনেকটাই গভীর। আবার অনেকেই হোটেলে ফিরে দেখেছেন তাদের পিঠের উপর এমন দাগ, যেন মনে হয় কোনও মানুষের নখের দাগ।


এবারে আসবো কার্শিয়াং এর ভিক্টোরিয়া বয়েজ হাই স্কুল এবং ডাওহিল গার্লস হাই স্কুলের কথায়। এই দুটোই শতাব্দী প্রাচীন স্কুল। শোনা যায় এই স্কুলেও নাকি ভুতেদের আস্তানা রয়েছে। তাদের কান্না এবং পায়ের শব্দ রাতের বেলায় নাকি স্পষ্টই শোনা যায়। এও শোনা যায় অতীতে এই স্থানে বহু মৃত্যু হয়েছে এবং এখানে নাকি ব্রিটিশদের কবরস্থানও ছিল। শীতের সময় রাতের দিকে স্কুলের প্রাঙ্গণে নাকি শিশুদের দৌড়াদৌড়ির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। অথচ শীতকালে এই স্কুল চার মাস বন্ধ থাকে। তাহলে কারা ঘুরে বেড়ায় রাতের বেলায়? না, জানা যায়নি আজও।


এরপর আসবো কালিম্পং এর মর্গান হাউস এর কথায়। প্রায় সবাই পরিচিত এই হাউসের সাথে। শোনা যায় রাত হলেই আজও নাকি কেউ কেউ সেখানে মরগান সাহেব এবং তার স্ত্রীর আত্মার উপস্থিতি টের পান। ভোর হলেও নাকি এখানে দুমদাম আওয়াজ হয়। আর এই গেস্ট হাউজের নির্দিষ্ট একটা ঘর থেকে ভেসে আসে কান্নার আওয়াজ, যেন কেউ নাম ধরে ডাকে। মাঝরাতে আবার বাথরুমে জলের কল নিজেই খোলে এবং নিজেই বন্ধ হয়। এমনটা যে সবাই শুধু অনুভব করেছেন তা নয় অনেকে নাকি দেখেওছেন। মর্গান হাউজের ১০১ এবং ১০৪ নম্বর রূমটি যথাক্রমে লেডি মরগ্যান ও মরগ্যান সাহেবের রুম হিসেবেই পরিচিত। অনেকে আবার এই রুমে থাকার অভিজ্ঞতা নিতেও এখানে আসেন। তবে সবারই কিছু না কিছু রহস্যময় অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানা যায়। 


১৯০০  সালে এই বাংলো তৈরি করেছিলেন জর্জ মরগ্যান। তিনি ছিলেন পাটের ব্যবসায়ী। মরগ্যান সাহেব বিয়ের পর এই বাংলোতে মাঝেমধ্যে থাকতেন। লেডি মরগ্যান এর প্রিয় বাড়ি ছিল এটি। তাদের কোন সন্তান ছিল না। স্থানীয়দের মতে লেডি মরগ্যান নাকি ভীষণভাবেই মানুষ ভালবাসতেন। আর সেই কারণেই তিনি গেস্ট হাউসে আসা কোনও মানুষকেই বিরক্ত করেন না।


এবারে বলবো অভিশপ্ত গাইসাল স্টেশনের কথা। ১৯৯৯ এর ২রা আগস্ট উত্তরবঙ্গের গাইসাল স্টেশনে একটি ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। যে দুর্ঘটনায় লিখিত তথ্য অনুযায়ী ২৮৫ জন যাত্রী মারা যান। বহুবছর আগে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনার পরবর্তী সময় গাইসাল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় নাকি রাত হলেই নেমে আসত অজস্র মানুষের কান্নার আওয়াজ। গভীর রাতে শোনা যেত মানুষের আর্তনাদ। আর রাতে নাকি অনেকের বাড়ির সদর দরজায় ধাক্কা দিয়ে কেউ কেউ সাহায্যও চাইতো। অথচ বাড়ির মালিক বাইরে বার হলেই আর কাউকে দেখতে পেতেন না। এমনও কিছু গল্প আজও শোনা যায়। 


এতক্ষণ ধরে আপনাদের যে গল্পগুলো বললাম তার কোনটারই আজ পর্যন্ত কোনও যুক্তিযুক্ত প্রমাণ মেলেনি। অনেকেই বিশ্বাস করেন এইসব ঘটনা, আবার অনেকেই করেন না। বিশ্বাস করলে বা না করলেও আপনিও ঘুরে আসুন না এই কয়েকটি জায়গায়।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad