গর্ব করার মতো যাদুঘরকে বাঙালিরা পাত্তাও দেয় না - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday 14 March 2024

গর্ব করার মতো যাদুঘরকে বাঙালিরা পাত্তাও দেয় না


গর্ব করার মতো যাদুঘরকে বাঙালিরা পাত্তাও দেয় না


প্রদীপ ভট্টাচার্য, ১৪ই মার্চ, কলকাতা: শহর কলকাতায় ঘুমিয়ে রয়েছে ৪০০০ বছরের পুরনো মিশরের মমি। শুধু ভারত নয় গোটা এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় মিউজিয়াম রয়েছে এই বাংলার বুকে কলকাতা শহরে। যেখানে ৪০০০ বছরের পুরনো মিশরের মমি থেকে মোঘল সম্রাটদের অস্ত্রশস্ত্র সব সাজিয়ে রাখা আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মিউজিয়ামের তালিকায় ৯ নম্বরে রয়েছে কলকাতার এই জাদুঘর। অথচ বাংলার মানুষের কোনো আগ্রহই নেই এই বিরাট ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে নিয়ে। অন্য কোনো রাজ্য হলে তারা এই মিউজিয়ামকে মাথায় তুলে নাচানাচি করত কারণ এই মিউজিয়ামের ভিতরে এমন কিছু ঐতিহাসিক জিনিস রয়েছে যা পৃথিবীর আর কোথাও আপনি খুঁজে পাবেন না। তাহলে চলুন আজকের এই লেখায় আমরা জানাই সেই আশ্চর্য জিনিসে ভরা ভারতীয় জাদুঘরের ব্যাপারে। যে স্থাপত্য নিয়ে সত্যি সত্যি গোটা বাংলার গর্ব করা উচিত।


খাতায়-কলমে এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয় আজ থেকে ২১০ বছর আগে। তখন কলকাতা শহর ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডক্টর নাথানিয়েল ওয়ালিচ। কিন্তু আজ যে সুবিশাল বিল্ডিংটি নিউমার্কেট থেকে একটু এগোলেই চোখে পড়ে সেটি তৈরি হয়েছিল ১৮৭৫ সালে। কতো টাকা লেগেছিল সে সময় জানেন? ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা! আজ থেকে ১৫০ বছর আগে ১লক্ষ ৪০ হাজার টাকা, আজকের দিনে কত টাকা হতে পারে বুঝতে পারছেন তো? সেই সময় এই বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ করেছিল ব্রিটিশরা। সে সময় ভারতের রাজধানী কলকাতার গৌরব বাড়ানোই ছিল ইংরেজদের মূল লক্ষ্য।


কী নেই এই মিউজিয়ামে! লিস্ট করে লিখতে বসলে আধঘন্টা লেগে যাবে। কলকাতা জাদুঘরে শিল্পকলার মোট ৩৫ টি সংগ্রহশালা রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক আমলের নানা পাখির জীবাশ্ম, প্রাচীন যুগে সুবিশাল হাতির ম্যামোথের কঙ্কাল, সুবিশাল প্রাচীন হরিণের কঙ্কাল, ডাইনোসরের বিরাট মডেল, পাথরের অস্ত্র। জাদুঘরের একপাশে যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গোটা প্রাগৈতিহাসিক যুগ। অন্যদিকে সাজানো রয়েছে সুপ্রাচীন দুর্গার প্রস্তর মূর্তি, তৃতীয় শতকের বৌদ্ধ মূর্তি, মানব বিবর্তনের নানান পর্যায়, বুদ্ধের জীবন দৃশ্যাবলী এবং পাথরের উপর স্বয়ং গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপ। এই জাদুঘরে এমন কিছু সুপ্রাচীন মুদ্রা এবং ব্রোঞ্জ যুগের ধাতব অস্ত্র রয়েছে যার আজকের দিনে দাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কয়েকশো কোটি টাকা। মিশরের আস্ত একটা মমি অবধি ঘুমিয়ে রয়েছে বাংলার বুকে অবস্থিত এই আশ্চর্য জাদুঘরে। ইতিহাস বলছে এই মমিটির বয়স প্রায় চার হাজার বছর। মিশরের গৌর্ভা টুম্ব থেকে মুম্বাই হয়ে কলকাতায় আসে এই মমিটি। সালটা তখন ১৮৮০। তারপর থেকে আজও এই শহরের বুকে ঘুমিয়ে রয়েছে এই মমিটি।


কলকাতার এই যাদুঘরের ভিতরে রয়েছে একটা সুপ্রাচীন লাইব্রেরি। যেখানে প্রায় ৫০ হাজার প্রাচীন বই এবং নথি সংগ্রহ করে রাখা আছে। যে বই এবং নথি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। কলকাতার বুকে এই জাদুঘরটি যখন তৈরি হয়, তারপর থেকে ২০১০ সাল অবধি বেশ রমরমিয়েই চলতো সুপ্রাচীন এই সংগ্রহশালাটি। পার্ক স্ট্রিট এবং এসপ্ল্যানেড মেট্রোর মাঝামাঝি অবস্থিত এই কলকাতা জাদুঘরটি দেখার জন্য দেশ বিদেশের লোকেরা এসে ভিড় জমান। কিন্তু বাংলার মানুষ হাতে মোবাইল এবং ইন্টারনেট পেয়ে গিয়ে ক্রমশ এই জাদুঘরটির প্রতি আগ্রহ হারিয়েছেন।


২১০ বছরের পুরনো এই জাদুঘরে আপনি যদি আজও একটা গোটা দিন ঘুরে বেড়ান, তাহলে এখান থেকে বেরোনোর সময় আপনার চোখেমুখে মুগ্ধতার ছাপ লেগে থাকবে। ১৮ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে ভারতীয়রা যদি এই জাদুঘরে প্রবেশ করেন তাহলে টিকিটের দাম পড়বে ৭৫ টাকা। আর ১৮ বছরের নীচে হলে টিকিটের দাম হবে মাত্র ২০ টাকা। তবে স্কুল পড়ুয়াদের কোনো টিকিট লাগে না এখানে। কিন্তু আপনি যদি ভারতবর্ষের বাইরে থেকে আসেন তবে খরচা হবে মাথাপিছু ৫০০ টাকা। আর সবার স্মার্টফোন পিছু খরচা ৫০ টাকা। মঙ্গলবার থেকে রবিবার সকাল ১০টা থেকে ৬টা অবধি খোলা থাকে এই জাদুঘর। শুধু সোমবার দিন পূর্ণদিবস বন্ধ থাকে এই যাদুঘর। তাহলে আর দেরি না করে সময় বের করে চলে আসুন এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড়ো এই যাদুঘরে। কলকাতা যাদুঘরের মমিটা কিন্তু আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad