উদ্বাস্তদের নিয়ে বিজেপি লুডু খেলছে, দাবী মমতার - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 13 March 2024

উদ্বাস্তদের নিয়ে বিজেপি লুডু খেলছে, দাবী মমতার

 


উদ্বাস্তদের নিয়ে বিজেপি লুডু খেলছে, দাবী মমতার 



নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ১৩ মার্চ: সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)- এর নামে নির্বাচনের আগে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলছে। বিজেপি অশান্তির খেলার চেষ্টা করছে।' এই অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 


মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়ার বাণীপুরে বি.আর আম্বেদকর স্পোর্টস ময়দানে আয়োজিত এক সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে মমতা বলেন 'গতকাল (সোমবার) কেন্দ্রীয় সরকার সিএএ নিয়ে ঘোষণা দেয়। কিন্তু আমার সন্দেহ আছে, পুরোটাই ভাওতা।' 


সিএএ নিয়ে আশঙ্কার কথা শুনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন 'এটা হচ্ছে বিজেপির লুডু খেলা। ওরা বলছে ছক্কা, আসলে এটা পুট। যারা দরখাস্ত করবেন সাথে সাথে তারা অনুপ্রবেশকারী হয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে তাদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হবে। সবটাই বেআইনি ঘোষণা হয়ে যাবে। আপনাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ' 


তার স্পষ্ট জবাব 'আমরা এটা মানছি না, মানব না। কোনও মানুষকে বঞ্চিত হতে দেব না। কাউকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠাতে দেব না।' 


সিএএ কার্যকার করার ঘোষণার সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন 'এতদিন কেন করল না? ২০১৯ সালে এই আইন পাস হয়েছিল। নির্বাচনের আগে যেটা করেছে তাতে কি মানুষ অধিকার পাবে! আপনি ভোটটাও দিতে পারবেন কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। আসলে বিজেপি যা বলছে সবটাই মিথ্যা।' 


তার প্রশ্ন 'শুধুমাত্র তিনটি দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্থান এবং আফগানিস্তান ও ছয়টি ধর্মের মানুষদের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে আফগানিস্তান কি করে এল? সেটা তো ভারতের সীমান্ত নয়। মিয়ানমার ভারতের সীমান্ত। সেক্ষেত্রে সেদেশের কথা বলা হল না কেন?' 


একটি উদাহরণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ধরুন এপার বাংলার সাথে ওপার বাংলার বিয়ে হয়েছে। এখানকার ছেলে ওখানকার মেয়ে কিংবা তার উল্টোটা। তাদের ক্ষেত্রে কি হবে? মেয়ে বাপের বাড়ি যেতে পারবে না, ছেলে তার শ্বশুর বাড়ি আসতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে তারা উভয়েই রাষ্ট্রবিহীন হয়ে যাবে।' 


তাঁর প্রশ্ন 'ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব কখনও শুনেছেন? আন্তর্জাতিক কনভেনশনে পরিষ্কার বলে দেওয়া আছে যে অনুপ্রবেশকারীরা যেন বৈধ কারণ ছাড়া রাষ্ট্রহীন না হয়ে পড়ে। এটা মানবিকতার অপমান। শরণার্থীরা যদি বিপদে পড়ছে সেই রাষ্ট্রের পাশে অন্য যে রাষ্ট্র আছে মানবিকতার খাতিরে সেই রাষ্ট্রও আশ্রয় দিতে বাধ্য থাকে।' 


আসামে এনআরসি লাগু ও তা নিয়ে মানুষের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, '২০১৯ সালে ঠিক এরকম করা হয়েছিল। তারা এনআরসি করেছিল আসামে। সেখানে ১৯ লাখ মানুষের মধ্যে ১৩ লাখ বাঙালি হিন্দুকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। দুঃখে সেখানকার মানুষ আত্মহত্যা করেছিল।' 


তাঁর বার্তা, 'আমি সবাইকে বলব আপনারা একে একে তৈরি হন। রমজান মাস চলছে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন যেন একটু মুখ তুলে চায়। আসলে এটা হচ্ছে মুসলিম, খ্রিস্টানদের তাড়ানোর খেলা।' 


বিজেপির বিরুদ্ধে বাঙ্গালী বিদ্বেষের অভিযোগ এনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'বাংলাকে ওরা (বিজেপি) পছন্দ করে না। বাংলা ভাষা শুনলেই তাদের পিত্তি জেলে যায়। ওরা মনে করে বাংলাদেশী।' 


একসময় মমতার হুঁশিয়ারি, 'এই আইনটাকে সরিয়ে ফেলে দিন, আপনাদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। আপনারা বহাল তবিয়তে থাকবেন। কারও অধিকার কাড়তে দেব না। আপনাদের গায়ে হাত দিলে আমরা বুঝে নেব। এর জন্য যদি আমার জীবনও যায় তাতেও রাজি।' 


উল্লেখ্য, সোমবারই দেশ জুড়ে লাগু হয় নতুন এই নাগরিকত্ব আইন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে এদিন এই সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সিএএ চালু করার কথা ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 


গত ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বরে সংসদে পাশ হয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। এই আইন অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা অমুসলিম নাগরিকদের (হিন্দু শিখ খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ) ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad