৩ ফুটের ডাক্তার! - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 3 April 2024

৩ ফুটের ডাক্তার!

৩ ফুটের ডাক্তার! 



প্রদীপ ভট্টাচার্য, ৩রা এপ্রিল, কলকাতা: তিন ফুটের ডাক্তার! আজ্ঞে হ্যাঁ। ভারতের এই ডাক্তারের উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট। ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে বেঁটে ডাক্তার ইনি। হাইকোর্টের সঙ্গে লড়াই করে, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে, সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে অবশেষে সরকারি হসপিটালে ডাক্তার হিসেবে কাজ করছেন মাত্র ৩ ফুটের উচ্চতার এই ডাক্তার। আপাতত তিনি রোজ দিন রোগী দেখছেন, ওষুধ দিচ্ছেন, মানুষকে সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু আজ থেকে কিছু বছর আগে ভারতের এই ছেলেটাকেই ডাক্তারি পড়তে বাধা দিয়েছিল খোদ মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। হাইকোর্ট অবধি রায় দিয়ে দিয়েছিলো মাত্র ৩ ফুট উচ্চতা নিয়ে ডাক্তার হওয়া অসম্ভব। তাহলে! তারপর কিভাবে নিজের স্বপ্নপূরণ করলো এই ২৩ বছর বয়সী ছেলেটা? কিভাবে সে হয়ে উঠল ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে বেঁটে ডাক্তার? চলুন তাহলে সেই গল্পটাই আজ জেনে নিই।


ছেলেটির নাম গণেশ বারাইয়া। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট। সাধারণত আমাদের আশেপাশে থাকা এই ধরনের মানুষদের বেটেঁ বামুন বলে ঠাট্টা তামাশা করা হয়। গণেশকেও ছোটবেলা থেকে নিজের উচ্চতা নিয়ে কম টোন টিটকিরি শুনতে হয়নি। তাই গণেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একদিন সফল হয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দেবেন। ছোটবেলা থেকেই মন দিয়ে পড়াশোনা করতেন গণেশ। ক্লাস টুয়েলভে খুব ভালো রেজাল্ট করার পর গণেশ সিদ্ধান্ত নেন তিনি ডাক্তার হবেন। সেইমতন সর্বভারতীয় পরীক্ষা নিট এ বসেন তিনি। সেই পরীক্ষাতেও দুর্দান্ত রেজাল্ট করে এমবিবিএস পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেন গণেশ। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় মেডিকেল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া। তারা গণেশের উচ্চতা ৩ ফুট জানার পর গণেশকে বাতিল করে দেন। কারণ ৩ ফুট উচ্চতা নিয়ে এমার্জেন্সি কেসে রোগীর চিকিৎসা করা অসম্ভব। তারপরেই নিজের স্কুলের প্রিন্সিপাল এবং জেলার কালেক্টরের সঙ্গে দেখা করেন গণেশ। ওদের সঙ্গে নিয়ে গণেশ পৌঁছে যান গুজরাটের শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। শিক্ষামন্ত্রী নিজে মেডিকেল কাউন্সিলের বিরুদ্ধে গুজরাট হাইকোর্টে গণেশকে মামলা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই মামলা হেরে যান গণেশ। তা সত্ত্বেও মনোবল হারায় না গণেশ। নিজের রেজাল্ট এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে সে পৌঁছে যায় মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের দোরগোড়ায়। বিচারপতিরা গণেশের এই জেদ ও অধ্যাবসায় দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। আর তারপরই তারা এক ঐতিহাসিক রায় দেন। যে রায় অনুযায়ী গণেশের এমবিবিএস পড়া এবং ডাক্তার হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। ব্যাস তারপর আর কি! এই কোর্ট কাছারি মামলা-মকদ্দমায় জড়িয়ে গণেশের একটা বছর নষ্ট হয় ঠিকই কিন্তু ২০১৯ সালেই গুজরাটের ভাবনগরের সরকারী মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়তে ভর্তি হন গণেশ। আর তারপর ২০২৪ সালে এখন সেই ভাবনগরের সরকারি হাসপাতালেই একজন এমবিবিএস ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছেন ডাক্তার গণেশ বারাইয়া।


গণেশের কথায়, আমি সেই সমস্ত বেঁটে মানুষদের প্রতিনিধি। যাদের সব সময় সমাজে ঠাট্টা তামাশার চোখে দেখা হয়। আমাকে কতবার তো শুনতে হয়েছে, সার্কাসে কাজ কর। আমি সেইসব মুখ বুজে সহ্য করেছি আর অপেক্ষা করেছি এই দিনটার জন্য, যেদিন মানুষ এসে আমাকে বেঁটে বামন নয় ডাক্তারবাবু বলে ডাকবে। তাই আমি আমার এই সাফল্যটা সমস্ত বেঁটে মানুষদের উৎসর্গ করতে চাই। গণেশের এই দৃঢ় বিশ্বাসের কথা শুনতে শুনতে আমাদের তো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। তবে এখনো গুজরাটের ভাবনগরে এসে অনেকেই গণেশ কে দেখে চমকে যান। তারা যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেন না। একজন ৩ ফুট উচ্চতার মানুষ গায়ে অ্যাপ্রন জড়িয়ে, গলায় স্টেথোস্কোপ নিয়ে তাদের বাড়ির লোকের চিকিৎসা করবে! এ যেন এক আশ্চর্য দৃশ্য। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই গণেশের বিচক্ষণতায় রোগীর আত্মীয়দের ভুল ভাঙ্গে। আর ওদিকে তখন এক মনে রোগী দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন ডাক্তার গণেশ বারাইয়া। নিজের উচ্চতার কমতি আজ গণেশ পুষিয়ে দিয়েছে শিক্ষা দিয়ে, মেধা দিয়ে, পরিশ্রম দিয়ে, জেদ দিয়ে। নাথিং ইজ ইম্পসিবল অর্থাৎ কোন কিছুই অসম্ভব নয়। বিখ্যাত এই উক্তিটা মনে হয় ডাক্তার গণেশ বারাইয়ার জন্যই বলা হয়েছিল। আমাদের তো অন্তত: তাই মনে হয়।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad