চীনের কাছে কী চান পুতিন? ৫ম বার শপথ নেওয়ার পরই প্রথম কেন জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন রুশ প্রেসিডেন্ট?
প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১৬ মে: ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বৃহস্পতিবার চীনে পৌঁছেছেন। তিনি দুই দিনের চীন সফরে আছেন। এ সময় তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। জিনপিংয়ের সঙ্গে পুতিনের বৈঠকের দিকে গোটা বিশ্বের নজর।
পুতিন সম্প্রতি পঞ্চমবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। এরপর এটাই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পুতিনের প্রথম সফরের জন্য চীনকে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আলোচনায় রয়েছে।
বলা হচ্ছে, এই সফরের মাধ্যমে পুতিন বিশ্বকে তাঁর অগ্রাধিকার নিয়ে বার্তা দিয়েছেন। পুতিন বলেছেন, শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে, চীন এবং রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে 'নো লিমিটস' পার্টনারশিপ ঘোষণা করেছিল।
চীনে পৌঁছানোর পর পুতিন শি জিনপিংয়ের প্রশংসা করে বলেন, 'জাতীয় স্বার্থ ও পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে রাশিয়ার সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে জিনপিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দুই দেশের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের কারণেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর আমি আবারও প্রথমবারের মতো চীন সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'আমরা শিল্প, উচ্চ প্রযুক্তি, মহাকাশ, পারমাণবিক শক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং উদ্ভাবনী খাতে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করব।'
রাশিয়া ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকীতে পুতিনের এই সফর হচ্ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে পুতিন যখন চীনে গিয়েছিলেন, তখন তিনি জিনপিংয়ের সাথে বলেছিলেন যে, দুটি দেশের মধ্যে এমন একটি অংশীদারিত্ব থাকবে, যার কোনও 'সীমা' থাকবে না।
এ সময় উভয় নেতা ব্যাপক অংশীদারিত্ব এবং কৌশলগত সহযোগিতা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। অনেক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এই সফরে পুতিন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। বেইজিং ছাড়াও হারবিন শহরও পরিদর্শন করবেন পুতিন।
চীনের কাছে কী চান পুতিন?
পুতিনের এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন জিনপিং ফ্রান্স, সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি সফর থেকে ফিরেছেন। জিনপিংয়ের সাথে বৈঠকে পুতিনের সবচেয়ে বড় এজেন্ডা হল 'পাওয়ার অফ সাইবেরিয়া ২' পাইপলাইন প্রকল্প সম্পর্কিত চুক্তি। এই প্রকল্পের আওতায় রাশিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে চীনে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করা হবে। চীন ও রাশিয়ার মধ্যে এই চুক্তি এখনও অসম্পূর্ণ।
এর বাইরে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দিতে চায় পুতিন। কয়েক বছর ধরে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও পুতিন তা আরও বাড়াতে চান।
সিনহুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন রাশিয়া ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে, 'বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, রাশিয়া-চীন সম্পর্ক সর্বকালের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে।'
পুতিন চান ইউক্রেন যুদ্ধে চীন এখন পর্যন্ত যে সমর্থন দিয়েছে তা অব্যাহত রাখুক। চীন বিশ্বের সামনে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে প্রকাশ্যে সমর্থন না করলেও পর্দার আড়ালে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র বিক্রি করে না, তবে অভিযোগ রয়েছে যে এই ধরনের যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করছে, যা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
পুতিন এও চান, জিনপিং যেন পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে না পড়ে এবং রাশিয়ার 'অটল বন্ধু' হিসেবে থাকে। ইউরোপের তিনটি দেশে সফরকালে জিনপিং রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি রাশিয়াকে দেওয়া অন্যান্য জিনিসও কমিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আসলে, জিনপিং কিছুদিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ক ও ভাবমূর্তি উন্নত করার চেষ্টা করছেন। এতে পুতিনের উদ্বেগ বেড়েছে। এই কারণেই গত সপ্তাহে প্যারিসে যখন জিনপিং ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠক করছিলেন, তখন পুতিন টেকনিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন ড্রিল করার আদেশ দিয়েছিলেন। পুতিনের এই আদেশ আবারও স্পষ্ট বার্তা যে, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
No comments:
Post a Comment