পেট্রোল-ডিজেলের কারণে বিধ্বংসী আগুন, এনওসি ছাড়াই চলছিল গেম জোন! রাজকোট অগ্নিকাণ্ডের 'কালো সত্য'
প্রেসকার্ড নিউজ ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৬ মে: রাজকোট অগ্নিকাণ্ড মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭। মৃতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। শনিবার (২৫ মে) গুজরাটের রাজকোটে একটি গেমিং জোনে এই বিধ্বংসী আগুন লাগে। আগুন লাগার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। প্রাথমিক তদন্তে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে জানা গেছে। রাজকোটের কালেক্টর প্রভাব জোশি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গেম জোনে বিদ্যুতের লোড বেশি ছিল। গরম আবহাওয়ার কারণে বৈদ্যুতিক তারের লোড সামলাতে না পারার কারণে শর্ট সার্কিট ও আগুন লেগে থাকতে পারে।এছাড়াও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, টিআরপি গেম জোনে পেট্রোল ও ডিজেল রাখা হয়েছিল, যার কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।
এখনও অবধি পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, টিআরপি গেম জোনে রাখা জেনারেটর চালানোর জন্য ১৫০০ থেকে ২০০০ লিটার ডিজেল রাখা হয়েছিল। একইভাবে, গো কার রেসিংয়ের জন্যও এখানে ১০০০ থেকে ১৫০০ লিটার পেট্রোল ছিল। আগুন লাগার মুহূর্তে তা পেট্রোল ও ডিজেলের ক্যানে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন এতটাই ভয়াবহ ছিল যে গেম জোনের পুরো কাঠামো পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দুর্ঘটনার সময় এখানে প্রচুর মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, রাজকোটের ডেপুটি মিউনিসিপ্যাল কমিশনার স্বপ্নিল খারে বলেছেন যে, টিআরপি গেম জোন 'ফায়ার নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট' (এনওসি) এর জন্য আবেদন করেনি। তিনি বলেন, "আমরা গেমিং জোনের বিশদটি তদন্ত করছি, তবে প্রাথমিকভাবে এমন কোনও রেকর্ড নেই যে অপারেটররা ফায়ার এনওসির জন্য আবেদন করেছিল, না তারা রাজকোট মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন থেকে অন্য কোনও অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছিল।"
রাজকোট অগ্নিকাণ্ডের পর পুলিশও তৎপর। টিআরপি গেম জোন ম্যানেজার নিতিন জৈন এবং তার সহযোগী যুবরাজ সিং সোলাঙ্কিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শনিবার গভীর রাতে তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়। গেম জোনের তিনটি অংশীদার রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রকাশ জৈন, যুবরাজ সিং সোলাঙ্কি এবং রাহুল রাঠোর। এখন আগুন লাগার কারণ ও নথিপত্র নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, শনিবার রাজকোটের টিআরপি গেম জোনে এন্ট্রি ফি বাড়িয়ে ৯৯ টাকা করা হয়েছে। গ্রীষ্মের ছুটি এবং সাপ্তাহিক ছুটির কারণে, এই স্কিমটি গেম জোন দ্বারা শিশুদের আকৃষ্ট করার জন্য চালানো হচ্ছে৷ এ কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ এখানে পৌঁছেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গেম জোনে শিশুসহ অনেকে বিভিন্ন খেলা উপভোগ করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। গেম জোনে প্রবেশ-প্রস্থানের জন্য ৬ থেকে ৭ ফুটের একটি মাত্র পথ ছিল।
রাজকোটে ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের পর তৎপর সরকারও। অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিচালক সুভাষ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দলের (এসআইটি) কাছে ঘটনার তদন্ত হস্তান্তর করেছে সরকার। অগ্নিকাণ্ডের পরে, রাজকোট পুলিশ কমিশনার রাজু ভার্গব সংবাদমাধ্যমে বলেন যে, আগুনের কারণ তদন্ত করা হবে এবং শহরের সমস্ত গেমিং জোনকে অপারেশন বন্ধ করার জন্য বার্তা জারি করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। মৃতদের পরিবারকে ৪ লাখ টাকা এবং আহতদের ৫০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল রাজকোটে এই দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন এবং হতাহতের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। এ ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গেম জোনে আগুন লাগে, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় তিন ঘন্টা লেগে যায়। শনিবার রাত ৯টা নাগাদ রাজকোটের কালেক্টর প্রভব জোশী বলেন, 'আমরা বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আগুনের খবর পেয়েছিলাম, সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স এবং দমকলের ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল। গেম জোনের অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে পড়েছে। দুই ঘন্টা আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগে আছি।'
No comments:
Post a Comment